Advertisement


ছোট মহেশখালীর কবরস্থান উত্তেজনাঃ মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলন

আ ন ম হাসান।। 
গত ৩০ আগস্ট ছোট মহেশখালীতে কবরস্থান দখলকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা ও জনগণের ক্ষোভ প্রকাশ শিরোনামে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয় ৷ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের জেরে জনমনে সৃষ্ট বিরুপ ধারনা রোধে এবং বাস্তব বিষয়টি সকলের মাঝে তুলে ধরতে ১ সেপ্টেম্বর তৈয়্যবিয়া মাদ্রাসা কতৃপক্ষ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ৷

সাংবাদিক সম্মেলনে কতৃপক্ষ লিখিত বক্তব্য পাঠ করে জানান, ৩০ আগষ্ট স্যাটেলাইট চ্যানেল ৭১ বাংলায় প্রকাশিত  “মহেশখালীতে শত বছরের পুরনো কবরস্থান দখল” প্রতিবেদনটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা,বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।এটি একটি হাস্যকর ও পাগলের প্রলাপ ছাড়া অন্য কিছু নয়। মূল কথা হচ্ছে মাদরাসাটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় বিএস খতিয়ান নং-১০৪/১,দাগ নং-১৮১ খতিয়ানের মালিক জনাব মুহাম্মদ আলী গোরকঘাটা ও বিএস খতিয়ান নং-৭৯/১,দাগ নং-১৮১ খতিয়ানের মালিক জনাবা ফরাস খাতুন দক্ষিণ নলবিলা কর্তৃক মাদরাসার নামে দানপত্র করেন।খতিয়ান দুটিতে উল্লেখিত ১৮১ দাগে ৬৪ শতক জমি রয়েছে।উক্ত ৬৪ শতক জমি দুই খতিয়ানের মালিক যথাক্রমে মুহাম্মদ আলী,আলহাজ্ব আনোয়ার পাশা ও ফরাস খাতুন দানপত্রমূলে মাদরাসায় দান করেন।পরবর্তীতে দানপত্রমূলে মাদরাসার নামে খতিয়ান সৃজিত হয়, এবং তখন থেকে এই পর্যন্ত মাদরাসা কর্তৃপক্ষ খাজনা দিয়ে আসছে। সেই থেকে কবরস্থানের জায়গাটি মাদরাসার রেকর্ডভুক্ত তা কর্তৃপক্ষ জানলেও যেহেতু পূর্ব থেকে মাদরাসার উক্ত জমিতে কবর দিয়ে আসছে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ লাশ দাফন করতে বাধা দেয়নি। পক্ষান্তরে নজর আলীর ভাই মরহুম আলী রেজা কবরস্থানের চতুর্পাশে বেশকিছু গাছ রোপন করেন। উক্ত গাছগুলি তার জীবদ্দশায় মাদরাসাকে মৌখিকভাবে দান করেন(যেহেতু কবরস্থানটি মাদরাসার খতিয়ানভুক্ত জমি হয়)। পরবর্তীতে নজর আলী এসে কবরস্থান রক্ষণাবেক্ষণের নাম ভাঙিয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার টাকার গাছ বিক্রি করে তার পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে তা ভক্ষণ তথা আত্মসাৎ করে আসছেন, এবং বিক্রিলব্ধ টাকা দিয়ে কবরস্থানের উন্নয়নমূলক কোন কাজ করার বিষয়ও লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা।

এমতাবস্থায় তার এহেন গর্হিত কাজ মাদরাসা কর্তৃপক্ষের আমলে আসলে ২০১৬ সাল থেকে তাকে বলা হচ্ছে যে, তোমাদের কবরস্থানটি মাদরাসার খতিয়ানভুক্ত জমি। তোমরা জানা সত্ত্বেও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে বসে কোন প্রকারের আপোষ মীমাংসাতে না গিয়ে প্রতিবছর মাদরাসার দানকৃত গাছগুলি তুমি নিজে কর্তন করে ভক্ষণ করে আসছ।তা নিষ্পত্তি করার জন্য তাকে বারবার তাগাদা দিলেও তিনি তা কর্ণপাত না করে এইবছর পুনরায় স্থানীয় একজন গাছের সওদাগরকে ৮০০০০ টাকায় গাছ বিক্রি করেন। তার গাছ খাওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে চাইলে মাদরাসা কর্তৃক কবরস্থান দখলে নেওয়ার ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করে ঐতিহ্যবাহী এই মাদরাসার সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন।

যদি উক্ত কবরস্থানটি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত বা তাদের বাপ দাদা কারো নামে কোন প্রকার ডকুমেন্ট থেকে থাকে তাহলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ঐ জায়গার দাবি করার প্রশ্নই উঠেনা।কিন্তু তাদের নামে যে কোন ডকুমেন্ট নাই সেটা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়ে গাছখেকো নজর আলীকে গাছ কর্তনে বাধা দেয়। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ধর্মীয় ভাবানুভূতিকে পূজি করে সুপারের মানহানি করার জন্য জাল দলিল সৃষ্টি করে সুপারের নামে ভুয়া খতিয়ান সৃজন করার অপবাদ দেন।

নজর আলী তা প্রমাণ করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে কাঠগড়ায় দাড় করাব। এমতাবস্থায় বলতে চাই যে, শরীয়ত মতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন জমিতে লাশ দাফন করতে চাইলে পূর্ব অনুমতি নিতে হয়। দীর্ঘদিন যাবত শরীয়তের পরিপন্থী   কোন কাজে জড়িত থাকা মানে শরীয়ত নয়। কবরস্থান কবরস্থানই থাকবে। কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণ মাদরাসা কর্তৃপক্ষই করবে, এবং কবরস্থানের নাম ভাঙিয়ে কোন ব্যক্তিকে মাদরাসায় দানকৃত গাছ কর্তনের সুযোগ দেওয়াও হবেনা। এমতাবস্থায় নজর আলী গং ও মুহাম্মদ হানিফা গং সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর যে অভিযোগ করেছেন তার প্রেক্ষিতে আইনানুগভাবে যে সিদ্ধান্ত আসে তা আমরা মেনে নিব। কেননা এটা ব্যক্তিস্বার্থ নয়,বরং প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ।

সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ছিদ্দিক আযাদ, গণমাধ্যমকর্মী,  মাদ্রাসা শিক্ষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।