Advertisement


মাতারবাড়ির স্থানীয় শ্রমিক ছাঁটাই ও বহিরাগত শ্রমিক আমদানির নেপথ্যে ::

রিয়াদ মাহমুদ সাকিব, অতিথি সংবাদদাতা ।।
মাতারবাড়ি স্থানীয় শ্রমিকদের বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ছাঁটাই, নবাগত বহিরাগত শ্রমিক কাজে যোগদানে স্থানীয় সচেতন মহল এবং ছাঁটাইকৃত স্থানীয় শ্রমিকদের বাঁধা। সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও মহামারী করোনা ভাইরাসের ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন; তারমধ্যেও থেমে নেই বাংলাদেশ সরকারের চলমান বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজ। 

তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের চলমান বৃহৎ প্রকল্পের একটি হিসাবে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে চলমান কর্মের এক মহা উৎসব। রাত-দিন চলমান রয়েছে প্রকল্প উন্নয়নের কাজ। সমগ্র কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প জুড়ে সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় বহিরাগত মিলে সর্বমোট শ্রমিক ছিলো ৩০০৪ জন তৎমধ্যে স্থানীয় শ্রমিক ছিলো প্রায় ১২৩১ জনের মতো বাকী ১৭৭৩ জন হলো বহিরাগত শ্রমিক । কিন্তু দেশের এমন মহামারী চলাকালীন মানুষ যখন কর্মহারা হয়ে অসহায় পড়ে, প্রকল্পের কয়েকটি ঠিকাদার কোম্পানি স্থানীয় শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করে যা ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো। কিছুদিন পূর্বে কয়েক ধাপে প্রায় ২৬৫ জন স্থানীয় শ্রমিক ছাঁটাই হওয়ার পর, উক্ত শ্রমিকগুলোকে নিয়ে গড়ে ওঠে শ্রমিক ছাঁটাই প্রতিরোধ আন্দোলন যাদের মানববন্ধনের ফলে প্রকল্প কতৃপক্ষ ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের সমন্বয়ক আসিফ ইকবাল কে সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের আলোচনায় আসার অনুরোধ জানান। অতঃপর আলোচনায় ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের লিষ্ট খুঁজে পূণরায় চাকরী দেওয়ার আশ্বাস দেন প্রকল্প এমডি। বিগত ১ জুলাই পেন্টা কোম্পানির এডমিন আনোয়ার, ককেট'র সুজন এবং কালাম স্থানীয় শ্রমিক ছাঁটাই হওয়ার পর বহিরাগত ৩০ জন শ্রমিকের চাকরী নিশ্চিত করে। 

গত ১৮ জুলাই শনিবার প্রকল্পে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা/উপজেলা হতে প্রায় অর্ধ-শতাধিক শ্রমিক আসে পস্কোর সাব ঠিকাদার CRBC নামক কোম্পানিতে কাজ করার উদ্দেশ্যে। গোপনসূত্রের ভিত্তিতে ছাঁটাইকৃত স্থানীয় শ্রমিক, তাঁদের সমন্বয়ক মুহাম্মদ আসিফ ইকবালসহ স্থানীয় স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হন। এক পর্যায়ে "স্থানীয় শ্রমিক ছাঁটাই আন্দোলনের" সমন্বয়ক আসিফ ইকবাল প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের লক্ষে ফেসবুক লাইভে এসে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকগুলোর চাকরি নিশ্চিত করতে প্রতিবাদ গড়ে তোলে। প্রকল্পের ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিক ছাঁটাই আন্দোলনের সমন্বয়ক মুহাম্মদ আসিফ ইকবাল বলেন, শুধু মাতারবাড়ী নয় বর্তমান সরকারের মেগা প্রকল্পের কাজ বাঁশখালী, রামপালেও চলমান যেখানে স্থানীয় শ্রমিকদের প্রাধান্য দেওয়া হয় সবার আগে। তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স বলেছিলেন, স্থানীয়দের ক্ষতি করে কোন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলবে না এবং স্থানীয় শ্রমিকদের প্রাধান্য দিতে নেত্রীর আদেশও রয়েছে। তারপরও কেনো আমাদের স্থানীয়দের ছাঁটাই করা হবে কাজ থেকে? কার্মক্ষেত্রে আমাদের কোন দোষ ত্রুটি থাকলে সেটা না বলে কেন ছাঁটাই করা হবে? আসিফ আরো জানায়, মাতারবাড়ী প্রকল্প যতদিন থাকবে ততদিন স্থানীয়দের প্রাধান্য দেওয়ার লক্ষ্যে আজকে শ্রমিক ছাঁটাই আন্দোলন পরিষদ গঠন করেছি। আমাদের দাবি শুধু একটাই, যোগ্যতা অনুযায়ী স্থানীয়দের চাকরি ক্ষেত্রে সবসময় প্রাধান্য দিতে হবে। 

মহেশখালী উপজেলা শ্রমিকলীগ আবু মুসা কলিমুল্লা এবং আসিফ ইকবালের ফেসবুক লাইভে ঘটনা স্থলে বহিরাগত শ্রমিকগুলোর থেকে জানা যায়, মাতারবাড়ী সিকদার পাড়ার শাহাজান এবং ধলঘাটা ইউনিয়নের কহিনূর নামে দুজন দালালের হাত ধরে বহিরাগত এই শ্রমিকগুলোর মাতারবাড়ী আসা। এ ব্যাপারে শ্রমিকলীগের নেতা মুসা, স্থানীয় শ্রমিকদের চাকরী নিশ্চিত করতে দাবী তুলেন। তিনি সর্বদা শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে থাকার আশা ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে আরো জানতে পারি, প্রকল্পের ম্যান পাওয়ার আলমগীর, সবুর এবং সাইফুল এই বহিরাগত শ্রমিক আমদানির সাথে জড়িত। গোপনসূত্রে জানা যায়, আমদানিকৃত বহিরাগত শ্রমিকগুলো মূলত ধলঘাটা ইউনিয়নের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং মহেশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের একজন নেতার মাধ্যমে আসা। এ ব্যাপারে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এমডি মনোয়ার হোছাইনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানায়, শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। পরবর্তীতে কোন কোম্পানি বা সাব ঠিকাদার কোল পাওয়ার এর অনুমতি ছাড়া নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিতে পারবে না। এছাড়া আগত শ্রমিকদের কোয়ারান্টাইন নিশ্চিত করে প্রকল্পে প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ সাথে কথা বললে, তিনি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এর একটা সুরহা করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।