স্টাফ রিপোর্টার, কুতুবদিয়া ।। আইসিটি ফর এডুকেশনে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে কক্সবাজার জেলার প্রথম অ্যাম্বাসেডর হলেন কুতুবদিয়ার মেয়ে শমসের নেওয়াজ মুক্তা। তিনি কুতুবদিয়ার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কাইমুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। শনিবার (২৯ নভেম্বর) শিক্ষক বাতায়নে অ্যাম্বাসেডর সেকশনে তার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেন বাতায়ন কর্তৃপক্ষ। আইসিটি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক হিসেবে তার সুখ্যাতি রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং Access to Information ( a2i) এর প্রতিনিধি হিসেবে এ মনোনয়ন দেন। বর্তমানে দেশে বহু শিক্ষক এর মধ্যে অ্যাম্বাসেডর শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ১৪৭৬ জন। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তা খুবই কম সংখ্যক। কুতুবদিয়ার সন্তান মুক্তা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে কক্সবাজার জেলায় প্রথম ও একমাত্র অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে তিনি একাধিক বার জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন এবং প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিদেশ সফরের সুযোগ পান। এ প্রাপ্তিতে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
সূত্র জানায়-দেশের প্রত্যন্ত দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পেশায় যুক্ত আছেন শমসের নেওয়াজ মুক্তা। কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ এলাকার তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। দূর মফস্বল উপজেলার শিক্ষক হিসেবে নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে নিয়মিত শিক্ষকতার পাশাপাশি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সৃষ্টিশীলতায় সমান অবদান রেখে চলছেন।
জানাগেছে -বর্তমান বৈশ্বিক মহামারির এই করোনাকালে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক পাঠগ্রহণের সুযোগ থেকে দূরে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ঘাটতি যতে না ঘটে -তার জন্য তিনি এ করোনাকালে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অনলাইন তথা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে দেশের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন উপায়ে পাঠগ্রহণের সুযোগ করে দিতে তিনি পাঠ ও শিক্ষামূলক নানা কনটেন্ট সৃষ্টি করেন। এসব কনটেন্ট শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতেও তিনি সমান উদ্যোগী রয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে কক্সবাজার জেলা অনলাইন প্রাইমারি স্কুলসহ ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে পাঠ কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। তাছাড়া সরকারের শিক্ষক বাতায়নে তার এ পর্যন্ত ৩০টি কনটেন্ট, ২৮টি অনলাইন ক্লাস ও একটি ব্লগ প্রকাশ পেয়েছে।
কুতুবদিয়া দ্বীপের মতো এলাকায় থেকে প্রযুক্তিভিত্তিক এ সব কাজ করতে তাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে অনেকটা প্রতিকূলতার সাথে সংঘর্ষ করে তাকে এ সকল কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আলাপকালে শমসের নেওয়াজ মুক্তা জানান -কুতুবদিয়ায় একদিকে বিদ্যুৎ সংকট। এখানে সরাসারি গ্রিড থেকে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ সৃষ্টি হয়নি দ্বীপটির সাথে। দিনের নির্দিষ্ট সময় ভিত্তিক স্থানীয় ভাবে জেনারেটর চালিত বিদ্যুতের উপর নির্ভর করেই কাজ করতে হয়। তাছাড়া এখানে অত্যন্ত ধীর গতির ইন্টারনেটের উপর ভার করেই কাজ এগিয়ে নিতে হচ্ছে তাকে। মূলত তার সব কাজ ইন্টারনেট ভিত্তিক হলেও ভালো দ্রুত গতির ইন্টারনেট না থাকায় দুর্বল ব্যান্ডউইথ নির্ভর ইন্টারনেটকে অবলম্বন করেই দীর্ঘ সময় নিয়ে তাকে এ সব কাজ করতে হয়। অন্ততঃ ভালো গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা থাকলে তিনি কম সময়ে আরও অধিক কাজ করতে পারতেন বলে জানান।
এদিকে এসব প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করে একজন নারী হয়েও এগিয়ে যাওয়া মুক্তা তার অদম্য ইচ্ছা শক্তির উপর ভর করে একজন শিক্ষাযোদ্ধা হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং করোনাকালে তার এ প্রচেষ্টা বেশ আশাজাগানিয়া বলে মনে করেন অনেকেই।
জানাগেছে -সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এটুআই’র ICT4E অ্যাম্বাসেডর হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত বা মানদণ্ড অতিক্রম করতে হয়। তার উল্লেখযোগ্য মানদণ্ড অতিক্রম করার পরই কুতুবদিয়ার মেয়ে শমসের নেওয়াজ মুক্তা কক্সবাজার জেলার প্রথম অ্যাম্বাসেডর হিসাবে মনোনয়ন পেয়েছেন। জেলা শিক্ষক অ্যাম্বাসেডরশিপ প্রোগ্রাম এর আওতায় তাকে এ অ্যাম্বাসেডরশিপ প্রদান করা হয়। তার এ প্রাপ্তিতে তাকে অনেকই অভিনন্দিত করেছেন।
প্রসঙ্গতঃ একজন দক্ষ শিক্ষক হিসেবে কক্সবাজারে তার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। এর আগে তিনি দু’দফায় জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে পান জাতীয় পুরষ্কার, ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে সমাবর্তনে আনুষ্ঠানিক সনদ পান এবং একই বছর প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শ্রীলঙ্কা সফর করেন। ২০১৪ সালে পান জয়িতা পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ গার্লস গাইড নির্বাচিত হন ২০০২ সালে।
গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে কুতুবদিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর পাড়ালেখা সম্পন্ন করেন মুক্তা।
তিনি মহান আল্লাহর প্রতি অশেষ প্রশংসা প্রকাশ করেন এবং তার সম্মানীয় শিক্ষক আকতার হোসাইন কুতুবী, মো. মান্নান সুমন, শিক্ষক বাতায়ন, এটুআই কর্তৃপক্ষ, ডিপিইও, এডিপিইও, টিইও এবং এটিইও’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তাছাড়া কক্সবাজার পিটিআই ইন্সট্রাক্টর মো. শামসুল আহসান কাছেই তার আইসিটির প্রথম হাতেখড়ি উল্লেখ করে তার প্রতি এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, পরিবারের সদস্যগণ, বিশেষত তার কাজের অন্যতম সহযোগী তার স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। আগামীতেও তিনি সকলের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন।
উল্লেখ্য -শিক্ষাক্ষেত্রে আইসিটির বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এটুআই প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার, গুণগত শিক্ষা বাস্তবায়ন ও উদ্ভাবনী সংস্কৃতির বিকাশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এটুআই এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে ICT4E জেলা শিক্ষক অ্যাম্বাসেডরশিপ প্রোগ্রাম। আইসিটির বহুমাত্রিক ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রতি উপজেলায় কমপক্ষে ১০ জন করে দক্ষ শিক্ষকদের ICT4E জেলা শিক্ষক অ্যাম্বাসেডর হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করার উদ্যোগ রয়েছে। নিজ জেলা ও উপজেলায় শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষাক্ষেত্রে চলমান আইসিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রতিনিধি হিসেবে তারা কাজ করবেন।