স্থানীয়দের অভিযোগ—গত কয়েকদিন ধরে ভূমিদস্যুরা ঘটিভাঙ্গার পশ্চিমে শত শত শ্রমিক ও স্কেভেটার ব্যবহার করে হাজার হাজার বাইন, কেওড়া এবং অন্যান্য বনজগাছ কেটে শত একর প্যারাবন উজাড় করছে। মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে চিংড়ি ঘের। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের এই ঘটনা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি—এ নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
এদিকে প্যারাবনগুলো বেজার দায়িত্বে থাকায় বন বিভাগ কার্যত অসহায়—এমন মন্তব্য করেছেন মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আয়ুব আলী। তিনি বলেন, “জায়গাগুলো বেজার। তারা আমাদের বুঝিয়ে না দেওয়ায় প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের করলেও আমাদের কিছু করার নেই। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন, বেজা বা পরিবেশ অধিদপ্তরের দেখার কথা। তারা সহযোগিতা চাইলে আমরা সঙ্গে যেতে পারি।”
অভিযোগ উঠেছে—উপজেলা প্রশাসন, বেজা, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বন বিভাগের অবহেলা ও নীরবতার সুযোগে কুতুবজোমের ঘটিভাঙ্গার পশ্চিমে বড় মহেশখালীর জাগিরাঘোনার বাসিন্দা মাহামুদুল করিমের নেতৃত্বে কয়েকদিন ধরে স্কেভেটার ও শ্রমিক দিয়ে প্রায় ১০০ একর প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া ঘটিভাঙ্গা এলাকায় জাহাঙ্গীর আলম, মকবুল আহমেদের ছেলে তারেক, নুর আহমেদের ছেলে আব্দুল মান্নান, আলী আহমেদের ছেলে সজীব, আজিজুল হক এবং বড় মহেশখালীর আওয়ামী লীগ নেতা মহসীন আনোয়ারের পিএস আবুল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন মিলে সিন্ডিকেট তৈরি করে প্যারাবন কাটার কাজ করছে—এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। অন্যদিকে আবুল হোসেন বলেন, “কয়েকদিন আগে প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কিন্তু আমরা জড়াইনি। বরং আগে কাটা একটি প্যারাবন সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছি। তারপরও চার দিন আগে প্যারাবন কাটার সময় আমরা জাহাঙ্গীর ও তারেককে বাধা দিয়েছিলাম। তারা কথা না শুনে প্যারাবন কাটলেও সেখানে আমার সম্পৃক্ততা নেই।”
কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামাল বলেন, “প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের করার তথ্য আমরা বন বিভাগ ও প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দস্যুরা নির্বিঘ্নে প্যারাবন কাটছে। মূলত প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা এবং আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই ভূমিদস্যুরা প্যারাবন কেটে চিংড়ি চাষ করছে।”
সবুজ আন্দোলনের পরিবেশকর্মী মো. সজীব বলেন, “গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেই প্রশাসন নাটকীয়ভাবে অভিযান চালায়। প্রকৃতপক্ষে দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং ভূমিদস্যুদের সঙ্গে অনৈতিক সুবিধার সম্পর্ক থাকায় প্যারাবন রক্ষা করা যাচ্ছে না।”
জামায়ত নেতা জাকের হোসাইন বলেন- মুল সাগরের সাথে আমাদের এই দ্বীপ। যত সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় হয় সব গুলো আসে সমুদ্রের দিক থেকে। সেখানে প্রথম বাঁধা দেয় সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা প্যারাবন গুলো যদি থাকে।যদি এগুলো নিধন করা হয় তাহলে ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই জন্য কোন ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কোন ধরনের প্যারাবন নিধন না হয় সেটার জন্য প্রশাসন এবং পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ থাকবে এবং আমার দলের কোন লোক যদি প্যারাবন নিধনে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে দলগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্লাহ বলেন, আমাদের মহেশখালীতে ঘটিভাঙ্গা ও সোনাদিয়ায় প্রতিনিয়ত প্যারাবন নিধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করি এবং বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি এবং অতিশীঘ্রই আবারও বড় অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
