রকিয়ত উল্লাহ।। মহেশখালী থানার কালারমার ছড়া পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই রাজিব শাহার বিরুদ্ধে বিচারের নামে এক ব্যক্তিকে মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং জোরপূর্বক আর্থিক মিমাংসার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, পুলিশ ক্যাম্পে ডেকে এনে শারীরিক নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি দোকান বন্ধক সংক্রান্ত স্ট্যাম্প ও কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী আবু বক্কর ছিদ্দিক (৫০) অভিযোগ করে জানান, কালারমার ছড়ার একটি দোকান বন্ধক সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাকে ‘বিচার’ করার কথা বলে পুলিশ ক্যাম্পে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে এসআই রাজিব শাহা তাকে লাঠিচার্জ, চড়-থাপ্পড়সহ শারীরিকভাবে মারধর করেন এবং মূল স্ট্যাম্প আনতে চাপ দেন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দোকান বন্ধকের ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের চুক্তিপত্র কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আবু বক্কর ছিদ্দিক আরও বলেন, দোকান বন্ধকের মোট ৩ লাখ টাকার পরিবর্তে মাত্র ১ লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে- এমন বক্তব্য জোর করে ভিডিও ধারণ করা হয় এবং অন্য একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে বাধ্য করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে কোথাও অভিযোগ করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয় বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি এ ঘটনায় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কালারমার ছড়া পুলিশ ক্যাম্পের আইসি এসআই রাজিব শাহা ভুক্তভোগীকে মারধর বা নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, বিষয়টি কালারমার ছড়া বাজার কমিটির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা হয়েছে এবং পুলিশ কোনো জবরদস্তি করেনি।
তবে কালারমার ছড়া বাজার কমিটির পক্ষ থেকে ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। বাজার কমিটির প্রতিনিধিরা জানান, বিচারটি (শালিস) থানার পক্ষ থেকে এসআই রাজিব শাহার মাধ্যমেই হয়েছে। তারা আরও বলেন, স্ট্যাম্প আনার সময় ভুক্তভোগীকে পুলিশ হুমকি-ধমকি ও থাপ্পড় দিয়েছিল। পরে পুলিশের ভয়ে বা অন্য কোনো কারণে ভুক্তভোগী বিষয়টি মিমাংসা করতে বাধ্য হন বলে তাদের ধারণা।
কালারমার ছড়া বাজার কমিটির সহ-সভাপতি মো. জাকারিয়া বলেন, বিচারটি (শালিস) থানার মাধ্যমে এসআই রাজিবই করেছিলেন এবং বাদী-বিবাদীর মুখজবানির ভিত্তিতেই সেটি পরিচালিত হয়।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিনের দাবির পর কালারমার ছড়ায় পুলিশ ক্যাম্প (বিট) স্থাপন করা হয় মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য। অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত কালারমার ছড়ায় এ ক্যাম্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে- এমন প্রত্যাশা থাকলেও বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দালাল নিয়ন্ত্রণ, বিচারকে কেন্দ্র করে অনিয়ম এবং পরিবহনসহ বিভিন্ন খাত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে।
কালারমার ছড়া বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৌলানা বোরহান উদ্দিন জানান, দোকান বন্ধক নিয়ে এক ব্যবসায়ী ও আবু বক্কর ছিদ্দিকের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। বিষয়টি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় উভয় পক্ষকে মিমাংসার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ের আগেই এক পক্ষ পুলিশকে অভিযোগ করলে পুলিশ ভুক্তভোগী আবু বক্করকে ডেকে এনে নির্যাতন করে এবং ৩ লাখ টাকার পরিবর্তে ১ লাখ টাকা দিয়ে জোরপূর্বক মিমাংসা করানো হয়েছে- এমন অভিযোগ ওঠে।
এ বিষয়ে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন এবং এ প্রতিবেদকের কাছ থেকেই প্রথম শুনেছেন। অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
