Advertisement


মহেশখালীর ভারপ্রাপ্ত ইউএনও বিভীষণ কান্তি দাশ এর উদ্যোগঃ বাল্যবিবাহে ভেসে যাওয়া থেকে উদ্ধার হলো কিশোরী



 



সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে মহেশখালী ও আশেপাশের এলাকায়। প্রকৃতির এই খেয়ালিপনা ও বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে মহেশখালীর ইউএনও এর গাড়ি যাত্রা করেছে কুতুবজুমের কালামিয়া বাজারের পথে। কেউ জানেনা কোথায় যাচ্ছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এসি ল্যান্ড মহেশখালী বিভীষণ কান্তি দাশ ও ফ্রেব এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদুল আলমকে বহনকারী এই সরকারী গাড়ি। সাথে যোগ দিলেন কুতুবজুম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল আলম। উদ্দেশ্য ১৩/১৪ বছরের এক  কিশোরীকে বাল্যবিবাহের অনিবার্য পরিণতি থেকে উদ্ধার করে আবার স্কুলমুখী করা। মেয়েটির বাড়ির পাশেই অপেক্ষা করছিলেন কুতুবজুম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি আমাদেরকে নিয়ে গেলেন মেয়েটির বাড়িতে।

অনেক সুন্দর গোছানো একটি বাড়ি। দেখতেই জানা হয়ে গেল একটি সচ্ছল পরিবার।  ম্যাজিস্ট্রেট ডাকলেন মেয়েটিকে। কিশোরী এই স্কুল ছাত্রীর সাথে আলোচনায় এসিল্যান্ড বিভীষণ জানতে পারলেন বর্তমানে তার প্রকৃত বয়স ১৩ কিংবা বড়জোর ১৪ বছর। এই বয়সেই তার বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করা হলো। পাত্র সদ্য আফ্রিকা ফেরত যুবক। মেয়েটি এখনো পাত্রের দেখা পায়নি। কিন্তু ইতিমধ্যে বিয়ের সব সওদা সম্পন্ন হয়েছে। মেয়ের বাবা-মাও জানেনা পাত্রের নাম ও সার্বিক পরিচয়। শুধু বলতে পারে ছেলের বাড়ি বড় মহেশখালীর মুন্সীর ডেইল এলাকায়। আর জেনেছে ছেলের অনেক পয়সা কড়ি থাকার ব্যাপারটি। অনেকটা পয়সাওয়ালা বরের কাছে ছোট্ট বালিকাকে সপে দেয়ার জন্যই যতোসব আয়োজন।

ম্যাজিস্ট্রেট বিভীষণ বললেন, এই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার ব্যপারটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ। এই বিয়ে আয়োজন কোনো ভাবেই আইনসিদ্ধ নয়। সার্বিক বিষয় আমলে এনে মেয়েটির ভবিষ্যত গঠনের বিষয়টি চিন্তায় এনে তিনি এই বিয়ের সব আয়োজন বন্ধ করতে মেয়ের পিতা-মাতাকে নির্দেশ দেন। আর মেয়েটিকে আগামীকাল থেকে স্কুলে যাওয়ার আদেশ প্রদান করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মেয়েটির পড়ালেখার সকল দায়িত্ব প্রদান করেন এসিল্যান্ড বিভীষণ। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মেয়েটির পড়ালেখার ব্যাপারে তাকে নিয়মিত আপডেট জানাতে আদেশ দেন মহেশখালীর ভারপ্রাপ্ত ইউএনও।

একটি মানবিক উদ্যোগে বাল্যবিবাহ বন্ধের এই আদেশ মেয়েটিকে বাঁচালো বাল্যবিবাহের অনিবার্য পরিণতি থেকে। অপ্রাপ্ত বয়সে অনিবর্যা ভেসে যাওয়া থেকে বেঁচে গেলো একটি সুন্দর আগামী।

মারিয়ার কন্ঠে "আমি কাল থেকেই স্কুলে যাবো"। সপ্তম শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষক মাহবুব আলম বলেন, পড়ো, জীবনকে গঠন করো; আবার দেখা হবে (মারিয়া) তোমার সাথে শ্রেণি কক্ষে।