দৈনিক যুগান্তর।। একদিকে তীব্র গরম অপরদিকে দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ে মানুষের যন্ত্রণা চরম আকার ধারণ করেছে। বেশি ভুগছে গ্রামের মানুষ। গরম এভাবে চলতে থাকলে লোডশেডিং আরো বাড়বে। পাশাপাশি বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বলছে, সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ১৭ থেকে সাড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াট। এই চাহিদা আরো বাড়তে পারে। তাতে লোডশেডিংও আরো বাড়বে।
এদিকে বর্তমান চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ উৎপাদন গড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ফলে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে। এই বিপুল ঘাটতি সরকার জেলা ও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং করে সমাধানের চেষ্টা করছে। এতে ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় কোথাও কোথাও ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গরম আর লোডশেডিংয়ে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। জ্বালানি সংকট থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় এই লোডশেডিং বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার বাসিন্দা হামদান মিয়া অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। ঈদের পর থেকে দিনে-রাতে চার পাঁচ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করলেও সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা রাত ১২টার পর থেকে। তখন ঘন ঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিং হয়। প্রতিবারে প্রায় এক ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে।
বিদ্যুৎ না থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হয় ছোট শিশু ও বয়স্কদের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের কাকলী বেগম অভিযোগ করে বলেন, তাদের এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং অনেক বেশি। বিদ্যুৎ এসে মাত্র আধা ঘণ্টা থাকে। বিদ্যুৎ আসে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা পর। ময়মনসিংহ এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কোথাও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম, তার সঙ্গে বিদ্যুতের লোডশেডিং। দিন দিন বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিস্থিতি খুব খারাপ হচ্ছে। তাদের এলাকায় ১০২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০ মেগাওয়াট। গরম বাড়লে সামনের দিনগুলোতে আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা করছেন এই কর্মকর্তা।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, জ্বালানির অভাবে বা আমদানি করতে না পারায় গত দুই বছর গরমের সময় লোডশেডিং বেড়েছিল। শহরের দুই থেকে তিন ঘণ্টার লোডশেডিং হলেও গ্রামে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিংয়ের অভিযোগ ছিল গ্রাহকদের। এবারো তেমন পরিস্থিতি হওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছর গরমে চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে প্রাক্কলন রয়েছে। জ্বালানি তথা তেল, গ্যাস ও কয়লার সরবরাহ না বাড়ালে তখন লোডশেডিংজনিত সংকট আরও বাড়বে। পাওয়ার সেলের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার ৬৭ মেগাওয়াট। পিডিবি’র কর্মকর্তারা বলেন, চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দৈনিক অন্তত ২৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই চাহিদামাফিক গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে সক্ষমতার অর্ধেকও উৎপাদন হচ্ছে না।