Advertisement


লবণের ন্যায্যমূল্য দিন -বাংলাদেশ লবণচাষি বাঁচাও পরিষদ।


মাহবুব রোকন ।।
কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলীয় এলাকায় মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত লবণের দাম নেই, দেশে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কঠোর ভাবে লবণের দাম নিয়ন্ত্রণ করে নানা প্রক্রিয়ায় বিদেশ থেকে অবৈধ ভাবে লবণ আমদানি করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় চরম সংকটে পড়েছে দেশীয় লবণ শিল্প। এমন পটভূমিতে দ্রুত লবণের মূল্য বৃদ্ধি করে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ দিয়েছেন -বাংলাদেশ লাবণচাষি বাঁচাও পরিষদ। মঙ্গলবার দেশের সবচেয়ে বেশী লবণ উৎপাদন এলাকা মহেশখালীতে এ সংগঠনের এক সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে সংগঠন সংশ্লিষ্টরা সরকারের কাছে দ্রুত লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে প্রান্তিক লবণ চাষিদের বাঁচানোর দাবি জানান। এর আগে সর্বস্তরের লবণ চাষি, লবণ ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও লবণভূমির মালিকদের সমন্বয়ে গঠিত এ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দেশে উৎপাদিত লবণের এ ‘সংকটময় পরিস্থিতি’র চিত্র সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার বিষয়ে তারা ধারাবাহিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন বলে সাংবাদিকদের জানান। প্রয়োজনে এ নিয়ে আন্দোলনেরও ইঙিত দেন তারা। এ নিয়ে আগামী ১৬ জানুয়ারি মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার বিকেলে মহেশখালী ননগেজেটেড কর্মচারী ক্লাব মিলনায়তনে মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ লবণচাষি বাঁচাও পরিষদ এর আহ্বায়ক আলহাজ্ব সাজেদুল করিম এর সভাপতিত্বে এ নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সদস্য সচিব এহছানুল করিম।



সংগঠনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানাগেছে -এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ লবণচাষি বাঁচাও পরিষদ এর যুগ্ম-আহ্বায়ক যথাক্রমে সরওয়ার আলম (পৌরসভা), মোঃ জাকারিয়া (কালামার ছাড়া), আব্দুস শুক্কুর (বড় মহেশখালী), নুর উদ্দীন মাসুদ (বড় মহেশখালী), হালিমুর রশিদ (পৌরসভা) ।

সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন -এম. আব্দুল মান্নান(কুতুবজুম), ওয়াজেদ আলী মুরাদ (হোয়ানক), সরওয়ার আলম (কুতুবজোম), আব্দুল হাকিম (কালামার ছাড়া), আসাদ উল্লাহ সায়েম (বড় মহেশখালী), মকছুদুর করিম (বড় মহেশখালী), জিল্লুর রহমান মিন্টু মেম্বার ( বড় মহেশখালী) , নাজের হোসেন মঞ্জু (বড় মহেশখালী), মোজাম্মেল হক বাহাদুর (বড় মহেশখালী), পারভেজ আহমদ বাবু (হোয়ানক), মোঃ কাসেম (মাতারবাড়ি), মোঃ খোরশেদ আলম (হোয়ানক), আজিজুল হাসান রনি (কালামার ছাড়া), মামুন সিকদার (পৌরসভা), আকতারুজ্জামান বাবু (কালামার ছাড়া), মোঃ শাহজাহান (বড় মহেশখালী), একরাম চৌধুরী (বড় মহেশখালী), হাসান আরিফ (কালামার ছাড়া), জাহাঙ্গীর আলম (বড় মহেশখালী), বাদশা মিয়া (বড় মহেশখালী), নজরুল ইসলাম (বড় মহেশখালী), রাহমত উল্লাহ (বড় মহেশখালী), সরওয়ার কায়ছার ছিদ্দিকী সোহেল (বড় মহেশখালী), জসিম উদ্দিন (বড় মহেশখালী), শাহাব উদ্দিন (বড় মহেশখালী), কালাম শরীফ (কুতুবজোম), আক্কাস বাঙ্গালি (হোয়ানক), মাহমুদুর হক (কুতুবজোম), নেওয়াজ কামাল (পৌরসভা), মোঃ কুদ্দুস (মাতারবাড়ি), মিজান (হোয়ানক), মনির বিন সুলতান (বড় মহেশখালী), বেলাল হোসেন (বড় মহেশখালী), শাহ নেওয়াজ শাহনু (বড় মহেশখালী), মোঃকিবরিয়া (কুতুবজোম), মোঃরিপন (পৌরসভা), মোজাম্মেল হক (কুতুবজোম), মাওলানা আব্দুল মাজেদ (বড় মহেশখালী), আলতাজ মিয়া (বড় মহেশখালী), রিদোয়ান রাসেল (বড় মহেশখালী), রিয়ান সিকদার (ছোট মহেশখালী), মোঃ সরওয়ার (বড় মহেশখালী), মোঃ তারেক (ছোট মহেশখালী), রাহমত উল্লাহ (বড় মহেশখালী), এমরান উল্লাহ (ছোট মহেশখালী), শিমুল খান জয় (বড় মহেশখালী), আলাউদ্দিন (কুতুবজোম), ছিদ্দিক আকবর (কুতুবজোম), আব্দুর রহমান (হোয়ানক), মীর কাশেম (কালামার ছাড়া), রবিউল আলম রবি (ফকিরাঘোনা), মোঃ তোফায়েল (মুন্সিরডেইল), মোঃ হেলাল (মুন্সিরডেইল), হাকিম আলী (মুন্সিরডেইল), নছরুল্লাহ (হোয়ানক), আনচার উল্লাহ (মুন্সিরডেইল), আয়াত উল্লাহ সিকদার (কুতুবজোম), দলিল মিয়া (বড় মহেশখালী) ও মাস্টার সরওয়ার (বড় মহেশখালী)।



বাংলাদেশ লবণচাষি বাঁচাও পরিষদ এর আহ্বায়ক আলহাজ্ব সাজেদুল করিম বলেন -চলতি মৌসুমে ১ একর জমিতে লবণ চাষ করতে খরচ পড়ে প্রায় ২লক্ষ টাকা। মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত লবণের মন প্রতি (৪০ কেজি)  মূল্য ১৫০ থেকে ১৮০টাকা। অথচ প্রতি মন লবণ উৎপাদন করতে খরচ পড়ে এর চেয়ে বহু বেশী। এ অবস্থায় খুবই করুণ দিন কাটাচ্ছে এলাকার লবণ চাষিরা। লবণের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লবণ চাষের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে চাষরা। এই অবস্থার চলতে থাকলে দেশীয় এ শিল্পী ধ্বংস হয়ে যাবে। অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করবে এ পেশার লোকজন।

লবণ চাষিদের পক্ষে দাবির কথা জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সদস্য সচিব এহছানুল করিম বলেন -এলসির মাধ্যমে লবণ আমদানি সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করতে হবে, লবণ চোরাচালান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কঠোর ভাবে দমন, মাঠ পর্যায়ে লবণের মূল্য কেজি প্রতি ১১ থেকে ১২ টাকায় করা, কক্সবাজারে লবণের স্থায়ী বোর্ড গঠন করা, লবণ ঋণের সহায়তা ও ইতোমধ্যে দেওয়া ঋণ মওকুপ, প্রযুক্তি নির্ভর লবণ উৎপাদনের প্রশিক্ষণ প্রদান, উৎপাদিত লবণ সংরক্ষণ, সরবরাহ, বাজারজাত করণের কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করা ও বিসিক এর মাধ্যমে অন্ততঃ ২ লক্ষ মে. টন লবণ আপদকালীন সময়ের জন্য মওজুদ রাখার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।
১০১ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ লবণ চাষি বাঁচাও পরিষদ এর এ কমিটি গঠিত হয়েছে, প্রয়োজনে এ তালিকা আরও সমৃদ্ধ করা হবে এবং সংগঠনটি সারাদেশের লবণ চাষিদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করবে বলে জানান।

প্রসঙ্গতঃ মহেশখালীসহ কক্সবাজারের ৭ উপজেলা চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, রামু, কুতুবদিয়াসহ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর প্রায় ৫৫ হাজার লবণ চাষিসহ এ শিল্পের সাথে দেশের প্রায় ৫ লাখ মানুষ জড়িত। বহু মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস লবণ চাষ। তাই লবণ চাষি ও মালিকদের ন্যায্যমূল্য প্রদানের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে এ নিয়ে আগামী ১৬ জানুয়ারি উপজেলা সদরে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন তারা।


ভিড়িও দেখুন>