Advertisement


লবণের সাথে ভয়ঙ্কর মাদক পাচার করতো সোনাদিয়ার 'ভালো ছেলে' জসিম

বার্মা থেকে নদী ও সমুদ্র পথে সোনাদিয়া ঢুকে ইয়াবা ও ভয়ঙ্কর আইসের চালান। আর সোনাদিয়া থেকে লবণ বোজাই বোটে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। সোনাদিয়ার ভয়ঙ্কর এ মাদক চক্রের মূল হোতা সোনাদিয়া দ্বীপের লবণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (৩২)। লবণ ব্যবসার নামে মিয়ানমারে ঘন ঘন যাতায়াত ছিল তার। লবণের আড়ালেই সাত বছর ধরে চালিয়ে আসছিল মাদকের কারবার। -খবর দৈনিক কক্সবাজার এর।

তথ্য বলছে -এমনকি মাদক বিক্রির টাকা লবণেও লগ্নি করতো জসিম। এতে এলাকার বড় লবণ ব্যবসায়ীও হয়ে ওঠে সে। বুধবার (২ মার্চ) মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে আইস ও ইয়াবা পাচারচক্রের অন্যতম হোতা জসিম উদ্দিন (৩২) ও তার অন্যতম সহযোগী শাহিন আলমকে (২৮) গ্রেফতার করে র‌্যাব। এসময় আরও গ্রেফতার হয় মকসুদ মিয়া (২৯), রিয়াজ উদ্দিন (২৩) ও শামসুল আলম (৩৫)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১২ কেজি আইস, এক লাখ পিস ইয়াবা এবং বিপুল পরিমাণ চেতনানাশক ইনজেকশন। এছাড়া দুটি বিদেশি পিস্তল এবং বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব বলছে, সোনাদিয়া দ্বীপের অন্যতম লবণ ব্যবসায়ী ছিল জসিম উদ্দিন। তার মদদেই নৌ-রুট দিয়ে আসতো আইস-ইয়াবার চালান। লবণের ব্যবসার কাজে মিয়ানমারে ঘন ঘন যাওয়া-আসা ছিল তার। এতে মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্যতা। মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরাও টোপ হিসেবে প্রথমে কম দামে ও বাকিতে তার কাছে ইয়াবা-আইস দিতো। বিক্রির পর জসিম হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতো মিয়ানমারের ওই মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে। অগ্রিম হিসেবে দিতে হতো মাত্র ২০-৩০ শতাংশ টাকা।

আইসের প্রতি চালানে কয়েক গুণ করে লাভ করতে থাকে জসিম। সেখান থেকে বাড়তে থাকে তার লবণ ব্যবসার পরিধিও।

সোনাদিয়াকে ঘিরে কেন মাদকচক্র সক্রিয় হলো এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব এলাকায় মাছ ধরতে যাওয়া জেলের সংখ্যা বেশি। তাদের দেখেই মাদক আনা-নেওয়ার পরিকল্পনা করে জসিম উদ্দিন। জেলের ছদ্মবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতো সে। মাদক সংগ্রহের জন্য জসিম ও তার সঙ্গীরা ২০-২৫ দিন নদীতেই কাটাতো। মাসে একটি চালান আনলেই বিপুল অর্থ চলে আসতো হাতে। তবে এ পর্যন্ত কী পরিমাণ চালান বাংলাদেশে এনেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

র‌্যাব বলছে, মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া ইয়াবা ও আইসের চালান সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখা হতো। পরে সেগুলো নৌরুটে বরিশাল, পটুয়াখালী ও মুন্সীগঞ্জ এবং পরিশেষে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হতো। মাদক পরিবহনে থাকতো ওদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাদকবাহী ট্রলারের আগে ও পেছনে থাকতো দুটো ট্রলার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলে মাদকবাহী ট্রলারটিকে সংকেত দেওয়া হতো। সংকেত পেলে ওই ট্রলার অন্যদিকে ঘুরে যেতো।

জসীমের সহায়তাকারী শহিন আলমের দায়িত্ব ছিল সাগর ও নদীপথে মাদক পরিবহন। শামসু ও মকসুদের দায়িত্ব ছিল সামনে ও পেছনে থেকে নজরদারি করা। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মিয়ানমার থেকে নৌরুট ব্যবহার করে সোনাদিয়া দিয়ে মাদকপাচারের আরও একটি রুটের সন্ধান পেয়েছি আমরা। তবে গ্রেফতার হওয়া চক্রটি শুধু জলপথই ব্যবহার করতো।