Advertisement


মহেশখালীর শাপলাপুরে কর্মসৃজন প্রকল্পে উপকারভোগীর টাকা মেরে দেয় ফরিদ মেম্বার


নিজস্ব প্রতিনিধি।। মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকদের মাটি কাটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ও উপজেলা প্রশাসনের পিআইও অফিস ও ট্যাগ অফিসারকে ম্যানেজ করার নামে উপকার ভোগীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদুল আলমের বিরুদ্ধে। এছাড়াও যারা টাকা দিতে গড়িমসি করে তাদেরকে মাটি কাটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া ভয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়- শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়াডের ইউপি সদস্য ফরিদুল আলম তার অধিনে মাটি কাটার কর্মসূচির সর্দার মোঃ জয়নালের মাধ্যমে উপকারভোগী শ্রমিকদের কাছ থেকে উপজেলা পিআইও অফিস, ট্যাগ অফিসার ও পরিষদের নাম দিয়ে উপকার ভোগী সদস্যের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্ধেক টাকা হাতিয়ে নেন। উপকার ভোগীর মোবাইল ব্যাংকিং পিনকোড সংরক্ষণে রেখে টাকা আসলে ঘরে ঘরে গিয়ে উপকার ভোগীর মোবাইল একাউন্ট থেকে জোর করে টাকা তুলে নেওয়া  হয়। এছাড়াও যারা মাটি কাটার কাজে অনুপস্থিত থাকে তাদের সাথে চুক্তি করে তাদেরকে উপস্থিত দেখিয়ে টাকা ভাগাভাগি করা হয়ে বলেও অনুসন্ধানে জানা যায়। এতে ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ ও ভুক্তভোগীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগী রমিজ উদ্দিন বলেন- আমার মোবাইলে ১১,৬০০ টাকা এসেছিল। ফরিদ মেম্বারের পাঠিয়েছে বলে মাটি কাটার সর্দার জয়নাল এসে আমার মোবাইল থেকে টাকা গুলেলো তুলে নিয়ে যায় এবং আমাকে মাত্র ৩,৬০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। 

আরাফাত হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন- আমার একাউন্টে টাকা আসে, কিন্তু জয়নাল এসে ফরিদ মেম্বারের জোর করে তুলে নেয়। আমাকে শুধু ৩,০০০ টাকা দেয়। 

কবির আহমেদ নামে একটা শ্রমিক জানান- মাটি কাটার টাকা আসলে মেম্বারদের অর্ধেক টাকা দিয়ে দিতে হয়ে। একই অভিযোগ করেন মাহমুদা নামে একটা মহিলা। 

এছাড়াও আরও একাধিক শ্রমিক জানান- এমন অনিয়মের প্রতিবাদ করলে কাজ থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়৷ এজন্য তাদেরকে টাকা না দেওয়ার উপায় নেই আমাদের। আবার অনেক শ্রমিক কাজে না এসে তাদের সাথে চুক্তি করে তাদেরকে উপস্থিত দেখিয়ে তাদের টাকা গুলো ভাগবাটোয়ারা করে নেন বলে অভিযোগ করেন।  

শুধু অভিযোগ দেওয়া ব্যক্তিরা নন, প্রকল্পের অধীনে কাজ করা অধিকাংশ শ্রমিকই এমন অনিয়মের শিকার হয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা। 

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত  কর্মসৃজন কর্মসূচির সর্দার জয়নালের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর কোন মন্তব্য না করে সংযোগ  বিছিন্ন করে দেন। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন- ফরিদ মেম্বার শুধু কর্মসৃজন প্রকল্প নয়, পরিষদের অন্যান্য খাত থেকেও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত হলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। তাই দ্রুত সময়ে  অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্নীতির পথ খুলে যেতে পারে। 

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ইউপি সদস্য ফরিদুল আলম দাবি করেন- সব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি আপনাদের সাথে দেখা করবো ভাই। আপনারা নিউজ করেন বলে প্রতিবেদকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করে এড়িয়ে যান। 

মহেশখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও) কাউছার আহমেদ জানান- আমাদের নাম ব্যবহার করে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। ফরিদ মেম্বারের বিরুদ্ধে এরকম প্রতারণাসহ অর্থ আত্মাসাৎ আরও কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয় গুলো তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

অন্যদিকে, মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্ল্যহ্ বলেন- সরকারি প্রকল্পের টাকা সরাসরি উপকারভোগীর মোবাইলে পৌঁছায়। তাদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে বা পিন নিয়ে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।