Advertisement


কালারমার ছড়ায় হঠাত্ করে স্কুলের ভবন ভেঙে ফেলার রহস্যজনক উদ্যোগ, প্রতিহত করলো গ্রামবাসী


আমিনুল হক।। মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ইউনুছখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক তলা বিশিষ্ট ভবনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ভেঙ্গে ফেলার সময় স্থানীয় সচেতন মহল এতে বাধা প্রদান করে ভাঙ্গন কাজটি বন্ধ করে দেন।

সূত্রে জানা যায় যে, মারিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত একটি কার্যাদেশ দেন। উক্ত কার্যাদেশে দেখা যায় যে, বিগত ০৩/০৩/২০২২ ইং তারিখে দরপত্র দাখিল করা হয়। গত ২৫/০৯/২০২২ ইং তারিখের মধ্যে প্রাক্কলন অনুযায়ী মালামাল বুঝে নেওয়ার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক স্বাক্ষরিত এই কার্যাদেশটি গত ১৩/০৯/২০২২ ইং তারিখে প্রদান করা হয়।

এই কার্যাদেশের কপিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, এতে অন্যান্য লিখা গুলো কম্পিউটার প্রিন্ট হলেও তারিখগুলো কলম দিয়ে লিখা। এছাড়াও স্মারক নং এর পাশি তারিখের স্থানে কোন তারিখ লিখা নেই। শুধুমাত্র মাস ও সাল লিখা আছে।

ইউনুছখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক তলা  বিশিষ্ট ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার বিষয়ে সরজমিন রিপোর্ট করতে গিয়ে জানা যায় যে, ইউনুছখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থী বাড়তে থাকে। সমস্যা দেখা দেয় অবকাঠামোর। এরই মধ্যে ১৯৯১ সালে সৌদি আর্থিক অনুদানে তিন তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এই ভবনটি মসজিদ, ক্লিনিক, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের কথা বলা হয়।

এরপর উক্ত তিন তলা বিশিষ্ট  স্কুল ভবনের পাশে এক তলা বিশিষ্ট আরও একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এই এক তলা বিশিষ্ট  ভবনটি প্রায় ২৫ বছর আগে নির্মিত বলে জানান এলাকাবাসী।

এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজার কারণে স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে হঠাৎ করে ৩ অক্টোবর সকালে কিছু মিস্ত্রি কর্তৃক ভবনটি ভাঙ্গতে দেখে এলাকাবাসী এসে বাধা প্রদান করে কাজটি বন্ধ করে দেন।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায় যে, উক্ত ভবনটি এখনও টেকসই মজবুত রয়েছে। সচেতন মহল মনে করেন, এক তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি আগামী ৫০ বছরেও  কিছু হবে না। কি কারণে ভবনটি ভাঙ্গা হচ্ছে? এই ভবনটি কার ইশারায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে? কখন কিভাবে নিলাম হলো?  এমনটি হাজারো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।

এ ব্যাপারে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম এর সাথে মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি ইউনুছখালী বাজারের টিপু মার্কেটের সামনে আছে বলে জানালে মাত্র ৫ মিনিটের সময়ে ওখানে গিয়ে দেখা যায় যে, তিনি ওখানে নেই। পরে মোবাইল করা হলে প্রধান শিক্ষক সাইফুল জানান, আমার চোখের সমস্যার কারণে আমি বাড়িতে চলে এসেছি।

তিনি আরও জানান, আমি  স্যারের সাথে কথা বলেছি। স্যার বলেছেন যে, কোন কিছু জানার থাকলে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশ্ন করতে।

পরে মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন দাশ এর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, আমি ছুটিতে আছি। আর ইউনুছখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন -কাগজপত্র দেখতে হবে। শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে প্রধান শিক্ষকের কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাথে প্রধান শিক্ষক সাইফুলের কোন কথা হয়নি। তাহলে একজন জাতি গড়ার কারিগর প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম কেন মিথ্যা কথা বললেন?

এদিকে একই সাথে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান মোঃ আবদুল্লাহ'র সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, মোবাইলে কোন কথা নয়। কোন কিছু জানার থাকলে উপজেলা শিক্ষা অফিসে আসেন। তার সাথে প্রধান শিক্ষক সাইফুলের  কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনিও জানান যে, তার সাথেও প্রধান শিক্ষক সাইফুলের কোন কথা হয়নি। একজন প্রধান শিক্ষক কিভাবে এতো মিথ্যা কথা বলতে পারেন? সরকারি দুইজন কর্মকর্তাকে তিনি ব্ল্যাকমেইল করলেন।

এদিকে কালারমার ছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়া'র অধিবাসী এবং এই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি (যার মৃত্যু হওয়ার পর আর কোন নতুন কমিটি হয়নি) জহিরুল আলম বদনের সুযোগ্য সন্তান আলা উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ইউনুছখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আমার বাড়ির পাশেই অবস্থিত। আমার বাবা কালারমার ছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম বদন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে আর কোন কমিটি হয়নি। অথচ এই বিদ্যালয়ের এক তলা বিশিষ্ট ভবনটি যে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে এটা আমি এবং আমার এলাকার কেউ আগে থেকে জানি না। কেবলমাত্র জানলাম যেই দিন ভাঙ্গতেছে সেই দিনই।

আলা উদ্দিন আরও জানান, একটি বিদ্যালয়ের কোন জরাজীর্ণ ভবন থাকলে তা পরিত্যক্ত ঘোষনা করে মাইকিং সহ বহুল প্রচারের মাধ্যমে সবার সামনে নিলাম দিতে হবে। অথচ এই বিদ্যালয়ের এক তলা বিশিষ্ট ভবনটি কোন জরাজীর্ণ নয়। পরিত্যক্ত হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তো কেন ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে?

এলাকাবাসী এব্যাপারে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক, মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ শরীফ বাদশা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইয়াছিন এর সুদৃষ্টি কামনা করেন।