Advertisement


সরকারি সহায়তা পেলে মহেশখালীর শুটকি পল্লীগুলোর চেহারা বদলে যাবে



আব্দুর রহমান রিটন।।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে তাজা মাছের পাশাপাশি শুঁটকি  বা শুকনো মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।সারা বছর শুঁটকি মাছ বাজারে পাওয়া গেলেও, বিশেষ করে শীতকাল আরম্ভের শুরুতে জমে উঠে শুটকি পল্লীগুলো।ঠিক তেমনি মহেশখালীর উপকূলীয় এলাকাগুলোতে জমে উঠেছে শুঁটকি পল্লীগুলো।দিনরাত মাছ রোদে শুকানো আর বাজারজাত করার মধ্যে দিয়ে দিনপার করে, এই ব্যবসায় জড়িত জেলেরা।মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাটায় রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক জেলে শুঁটকি ব্যবসায়ী।শুকনো মাছকে কেন্দ্র করে চলে এদের জীবননির্বাহ।

মহেশখালীর এসব শুঁটকি পল্লীগুলোতে ল্যাইট্টা মাছ,ছুরি মাছ, পোয়া মাছ,চিংড়ি মাছসহ কয়েক ধরনের মাছ শুকানো হয়।প্রতিটি মাছ আকারের উপর নির্ভর করে দাম দেওয়া হয়।বড় ছুরি মাছ ১২০০টাকা, মধ্য ছুরি মাছ ৭০০টাকা আর ছোট ছুরি মাছ ৪০০টাকা পাইকারি মূল্যে বিক্রি করে থাকে।তবে কোথাও কোথাও স্থান ভেদে এই দামের তারতম্য দেখা যায়।জেলেদের দেওয়া তথ্য মতে, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে শুঁটকি পল্লীগুলোতে প্রতি সপ্তাহে তিন হাজার মণ মাছ রপ্তানির জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।মাছের কর্মযজ্ঞকে ঘিরে এখানে সৃষ্টি হয়ে বিশাল কর্মসংস্থান।

মহেশখালীর শুঁটকি পল্লীগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি ঘরের মহিলারাও কাজ করে থাকে।মাতারবাড়ীর জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা জামাল উদ্দীনের স্ত্রী মারুপা বেগম বলেন, “মাছ শুকানোর কাজে পুরুষের পাশাপাশি আমরা মহিলারাও কাজ করে থাকি।আমাদের ঘরের রান্না-বান্নার কাজগুলো শেষ করে,মাছ শুকানোর কাজ করি।”

মহেশখালীর ধলঘাটা এলাকার শুঁটকি পল্লীগুলো ঘুরে  জেলের চোখে পড়ার মত ব্যস্ততা দেখা যায়।ধলঘাটার ৪নং ওয়ার্ড়ের সুতরিয়া বাজার পশ্চিমপাশে  বাসিন্দা মোহাম্মদ নাছির সওদাগর বলেন, “ শুঁটকি মাছ সংরক্ষনের আমাদের এই ব্যস্ততা শীতের আগে থেকে শুরু হয়েছে,সারাদিন কাজ করার পর, রাতে আবার সেই শুকনো মাছগুলো বাজারজাত করার জন্য ব্যবস্থা করি।আমাদের এই এলাকায় প্রায় শতাধিক মানুষ শুকনো মাছের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।এখান থেকে শুঁটকি গুলো প্যাকিং করে চট্টগ্রামের বিক্রি করি।”

আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, “সরকারী সহযোগিতা পেলে আমরা এই ব্যবসাকে আরও বেশি সম্প্রসারিত করতে পারব।সারা বছরই আমরা মাছ শুকানোর কাজ করে থাকি।বর্ষাকালে মাছ শুকানোর জায়গাগুলো পানির নিচে থাকায় সমস্যা হয়।তারপরও আমরা মাছ শুকানোর কাজ চালিয়ে যাই।সহজ শর্তে ঋণ পেলে, আমরা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারবো।

মাতারবাড়ীর দক্ষিণ সাইরারডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আল মুজিব উদ্দীন বলেন, আমি প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া সময়, মাতারবাড়ী  সাইরারডেইল এলাকার শুঁটকি পল্লীগুলো দেখি। আমাদের শুঁটকিগুলো বেশ সুস্বাদু আর জনপ্রিয়।ধলঘাটা আর মাতারবাড়ীতে যেসব শুটকি মাছের আরত রয়েছে, সরকারের সহযোগিতায় সবগুলোকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বাজারের মত করে বিক্রির ব্যবস্থা করলে,দেশি-বিদেশি অনেক ক্রেতার সমাগম ঘটবে বলে মনে করি।কারণ আমাদের এখানে সারাদেশে মানুষ সরকারে মেঘা প্রকল্পে কাজ করে।এই সুযোগটি কাজে লাগালে স্থানীয়রা যেমন মাছের ন্যায্য দাম পাবে তেমনি অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে।”

মহেশখালীর জেলে শুঁটকি পল্লীগুলোর মানুষগুলো স্বপ্ন দেখে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের।তাদের যথাযথভাবে সহযোগিতা ও আধুনিকভাবে মাছ সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দিলে দেশে ও বিদেশে কক্সবাজারের শুঁটকি সুনাম বয়ে আনবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।