Advertisement


মহেশখালী যুবলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে যুবলীগের রাজনীতিতে প্রাণের সঞ্চার

#উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে তৃর্ণমূল #নেতৃত্বে পালাবদলের আভাস #৬ বছর পর ১০ মার্চ সম্মেলন #আসছেন কেন্দ্রীয় নেতারা #উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ

এ.এম হোবাইব সজীব।। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের সবচেয়ে আলোচিত উপজেলা মহেশখালী। এই উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর এছাড়াও মহেশখালী ঘিরে চলছে একাধিক মেগা প্রকল্প।

এদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে তৃর্ণমূলের নেতাকর্মীরা। আর মহেশখালীতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রভাব বেড়েছে। এতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বহুগুণে সচল রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে মহেশখালী উপজেলা যুবলীগ। গত ২০১৭ সালে ১০ এপ্রিল মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটি অনুমোদন কেন্দ্রীয় কমিটি। কুড়িয়ে কুড়িয়ে চলছিল কার্যক্রম।

এই প্রেক্ষাপটে  ৬ বছর পর আগামী ১০ মার্চ (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল। এই সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে তৎপর হয়ে উঠছে প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী প্রায় অর্ধডজন নেতা দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন।

অনেকে মনে করছেরছেন মহেশখালী যুবলীগের সম্মেলন জুড়ে চলবে চরম প্রতিশোধের খেলা!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সম্মেলনের সভাপতি পদে প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান আহবায়ক সাজেদুল করিম, সাবেক যুবলীগ সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক আবদুল মান্নান।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হচ্ছেন, সাবেক পৌর ছাত্রলীগের আহবায়ক মিফতাহুল করিম বাবু,বর্তমান যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শেখ কামাল, সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ আহবায়ক ওয়াজেদ আলী মুরাদ, যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সেলিম উল্লাহ সেলিম। প্রার্থীদের মধ্যে সভাপতি প্রার্থী বর্তমান উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক সাজেদুল করিম বর্তমান ঘোষিত উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি একজন  ঝানু রাজনীতিবিদ। তিনি দীর্ঘ ৯ বছরের বেশি সময় রাজনীতির মাঠে রয়েছেন। দীর্ঘকাল ধরে রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের আহবায়কের দায়িত্বে। তবে তিনি এখনোও ঠগবগে যুবক। দলে তাঁর এখনো গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। জানাগেছে, গত ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রতীকের প্রার্থী হোছাইন ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে গিয়ে সাজেদুল করিম দোয়াত কলম মার্কায় নির্বাচন করে জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।

তবে সভাপতি হিসেবে সাবেক যুবলীগ সভাপতি মোহাম্মদ শাহজান নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে রয়েছে। তিনি দীর্ঘ দলের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক ছিলেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন উপজেলা যুবলীগে। যোগ্য যুবলীগের রাজনীতিতে মাঠ কাঁপানো মোহাম্মদ শাহজান তরুণ প্রজন্ম ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। তাই আগামী কমিটির সভাপতি হিসেবে তার দিকেই বেশ ঝুঁকছেন নেতাকর্মীরা।

এছাড়া সভাপতি প্রার্থী আবদুল মান্নান সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক, জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি, সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক হিসাবে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তার তৃর্ণমূলে গ্রহণযোগ্যতা থাকাই তাই আগামী কমিটির সভাপতি হিসেবে তার দিকেই বেশ ঝুঁকছেন নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ইতিমধ্যে বেশ আলোচনায় এসেছেন মিফতাহুল করিম বাবু। তিনি পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আনছারুল করিমের ভাতিজা।  মহেশখালীর ডাকসাইটে ব্যক্তিত্ব। এছাড়া পিতা-চাচার দিক ছাড়াও অল্প বয়সে মহেশখালীর রাজনীতিতে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন মিফতাহুল করিম বাবু। বলতে  গেলে একাধারে পুরো মহেশখালীর পাশা-পাশি উপজেলার উত্তর প্রান্তে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। বঙ্গবন্ধুর তণয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা শেখ পরিবারের সাথে প্রফেসর ড.আনছারুল করিমের নতুন করে পারিবারিক আত্মীয়তার সম্পর্ক হওয়ায় মিফতাহুল করিম বাবু সম্পাদকের পদে আসিন হতে পারে এমনটি শোনা যাচ্ছে মহেশখালীর আকাশে-বাতাসে। আরেক সম্পাদক প্রার্থী শেখ কামাল একজন পরীক্ষীত যুব নেতা ও সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের আস্তাভাজন হিসাবে পরিচিত। গত নির্বাচনে নৌকার টিকেট নিয়ে তিনি কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ওয়াজেদ আলী মুরাদ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার পিতা প্রয়াত আলী আহমদ চেয়ারম্যান দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যানও ছিলেন বহুকাল। সে হিসেবে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে ওয়াজেদ আলী মুরাদ ও আলোচনায় রয়েছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতিতেও উপজেলা জুড়ে তার অবদান রয়েছে। এসব বিবেচনায় মুরাদকে সবচেয়ে যোগ্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে দেখছেন নেতাকর্মীরা।

আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়কের পাশা-পাশি  ও মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন সেলিম উল্লাহ সেলিম। তিনি একজন পরীক্ষিত নেতা। দীর্ঘকাল যুবলীগ ও আওয়ামীলীগ রাজনীতির সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে তার নাম। উপজেলা যুবলীগের রাজনীতের শক্ত ভূমিকা নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছেন তিনি।

অপরদিকে কমিটির দৌড়ে এখনও পর্যন্ত সম্পাদক পদে মিফতাহুল করিম বাবু ও ওয়াজেদ আলী মুরাদ এগিয়ে থাকলেও শেখ কামালসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরা নিজের মতো করে ‘লবিং’ চালিয়ে যাচ্ছেন ওপরের মহলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলন ও কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে উপজেলা জুড়ে যুবলীগের রাজনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত এখন সম্মেলনের হাওয়া বইছে। নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা চলছে- আগামীতে নেতৃত্বে কারা আসছেন। তবে সবার চাওয়া- তৃণমূল ও কর্মীবান্ধব সব দিক থেকে যোগ্য নেতারা নেতৃত্বে আসুক।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের আসন্ন সম্মেলন ও কাউন্সিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই সম্মেলন ও কাউন্সিল বড় ভূমিকা রাখবে।  এই প্রসঙ্গে মাতাবাড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, 'মহেশখালীতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই জন্য সৎ, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করা দরকার।'

বর্তমান উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সদস্য আজিজুল হাসান রনি বলেন, ‘দলকে তৃণমূলে শক্তিশালী ও জনবান্ধব করতে অবদান রাখা নেতাকে আমরা উপজেলা কমিটির নেতৃত্বে আনতে চাই।’

কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক সোহেল বলেছেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা আলোকে নির্ধারণ করা সময়ে মহেশখালী উপজেলার সম্মেলন বাস্তবায়ন করা হবে। দীর্ঘদিন পর কমিটি সম্মেলন হতে যাওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কাউন্সিলাদের মতামতের ভিত্তিতে আশা রাখি যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে।

এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের যুবলীগকে আরো বেশি চাঙ্গা করতে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রে ডাকা হয়েছে। বৈঠকে দলকে আরো চাঙ্গা করতে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। একই সাথে মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা কমিটিগুলোর সম্মেলন আয়োজন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সম্মেলনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবে।