Advertisement


মহেশখালীর মানুষের আজন্ম দু:খের কি অবসান হবে না?


মোহাম্মদ এরফান উল্লাহ।।
কয়েকদিন আগে মহেশখালী চ্যানেলে নৌ-দুর্ঘটনায় তোফায়েল নামের ছোট মহেশখালীর হতভাগা ছাত্র ভাইটির নির্মম মৃত্যু প্রত্যেক দায়িত্ববান ব্যক্তিকে আবারো অনেকগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। মহেশখালীর আপামর জনগণের দীর্ঘদিনের সমস্যা ও দাবীগুলো আবারো সামনে এসেছে। যৌক্তিক এসব দাবীগুলো বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আহবান জানিয়ে মহেশখালীর অনেক সন্মানিত ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন মাধ্যমে বিশেষ করে ফেসবুকে লেখালেখি করে যাচ্ছেন। কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ইতমধ্যে জেলা ও উপজেলা সদরে একাধিক সফল মানববন্ধন করেছে যেখানে সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহনের মাধ্যমে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এটি সত্যিই বেশ প্রেরণাদায়ক। দ্বীপ এলাকায় চলমান ও বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কারণে এবারকার দাবী-দাওয়ার বিষয় নিশ্চিতভাবেই সরকারের কাছে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব বহন করবে। তাছাড়া সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এলাকার জনগণ ইতমধ্যে যে ত্যাগস্বীকার করেছে ও ভবিষ্যতে করবে সে দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় মহেশখালীর মানুষের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবী পুরণে সরকারের একধরণের নৈতিক দায় তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে মহেশখালী যাওয়ার মুলত দুটি রাস্তা-একটি চকরিয়া হয়ে, আরেকটি বাঁশখালী পেকুয়া হয়ে বদরখালী দিয়ে মহেশখালীতে প্রবেশ করেছে। দুটি সড়কই বদরখালী পর্যন্ত খুবই প্রশস্ত ও শক্ত ভিতের উপর তৈরি হলেও মহেশখালীর অভ্যন্তরে এসে সড়কটি তেমন প্রশস্ততো নয়ই বরং বছরের অধিকাংশ সময় তা চলাচলের অনুপযোগী থাকে। এটা দ্বীপের মানুষের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এর দায় কি বিভিন্ন সময়ে দ্বীপের প্রতিনিধিত্ব করা সন্মানিত জনপ্রতিনিধিগণ এড়াতে পারেন? আবার নতুন করে সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। জেনেছি রাস্তা কিছুটা প্রশস্ত হবে। খুব ভালো খবর কিন্তু বর্ষা মৌসুমের আগে পুরো সড়কের কার্পেটিং খোলার ফলে জনসাধারণকে যে অবর্ননীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হলো তা কর্তৃপক্ষ কেন বিবেচনায় নিল না বোধগম্য নয়।

মহেশখালী জেটি ঘাট ও কক্সবাজার ঘাট দিয়ে নদী পারাপারে এ দ্বীপের মানুষের আজন্ম দু:খের কি অবসান হবেনা? এই দুই ঘাট দিয়ে আসা যাওয়ার সময় বিব্রতকর পরিস্হিতির মুখোমুখি হয়নি এমন কেউ থাকলে তিনি অবশ্যই পরম সৌভাগ্যবান। একসময় এ চ্যানেলে নাব্যতা ছিলো অনেক বেশি। কুতুবদিয়া আর পেকুয়ার বাকগুজরা থেকে কক্সবাজার রুটে চলমান বড় ট্রলারগুলো মহেশখালী ঘাটে যাত্রী উঠানামা করতো। অথচ কী এক রহস্যময় কারনে ঐ নৌকাগুলো এখন মহেশখালী ঘাটে ভিড়তে দেয়া হয়না। ফলে পারাপারের মাধ্যম এখন স্পিড বোট আর স্হানীয় গাম বোট/ট্রলার যেখানে ভ্রমন অনিরাপদ ও কষ্টকর। এই সমস্যার সাময়িক সমাধান হিসেবে এই চ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিং চলমান রেখে ফেরী ও বড় স্টিমার/lunch সার্ভিস চালু করা খুবই সম্ভব যা তেমন ব্যয়বহুলও নয়। অতি শীঘ্রই এ সংক্রান্তে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায় দ্বীপবাসী। অবশ্য স্হায়ী সমাধান হলো মহেশখালী টু চৌফলদন্ডী সেতু (পানির উপর সেতুর দৈর্ঘ হবে ০২ কি:মি) নির্মাণের মাধ্যমে কক্সবাজারের সাথে মহেশখালীকে সংযুক্ত করা। মহেশখালী একটি পর্যটন এলাকা হওয়ায় এই সেতুর গুরুত্ব কোনদিন কমবেনা। এই চ্যানেলে তীব্র স্রোত থাকায় অনেকে এই চ্যানেলে সেতু নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়ে শংকায় আছেন। প্রযুক্তির কথা বিবেচনা করলে এই আশংকা অমুলক। চীন এর চেয়ে অনেক দীর্ঘ চ্যানেলে সেতু নির্মাণ করেছে। মালয়েশিয়া মালাক্কা প্রণালীতে ১৩.৫ কি.মি. সেতু তৈরি করে পেনাং দ্বীপকে মুল ভুখন্ডের সাথে সংযুক্ত করেছে। পদ্মার মতো খরস্রোতা নদীতে সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ তার সক্ষমতা সারা বিশ্বকে ইতমধ্যে দেখিয়েছে। কাজেই অসম্ভব কিংবা বাস্তবতা বিবর্জিত কোন দাবী মহেশখালীর জনগণ করেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছে। তাঁকে সেতুর আবশ্যকতা সম্পর্কে বোঝানো গেলে এ দাবী পুরণ না হওয়ার কোন কারণ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে এসব দাবীগুলো উপস্হাপনের দায়িত্ব সন্মানিত জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবর্গের। জনগণের নিকট এটা তাদের কমিটমেন্ট। আমরা আশাবাদী।

লেখক : মহেশখালীর কৃতী সন্তান- অতিরিক্ত জেলা জজ, সিরাজগঞ্জ।