এডভোকেট আব্দুল খালেক চৌধুরী
প্রিয় কক্সবাজারবাসী ও শুভাকাঙ্ক্ষী বৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম।
আমি এডভোকেট আব্দুল খালেক চৌধুরী, চেয়ারম্যান, শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদ, মহেশখালী, কক্সবাজার। ভারাক্রান্ত মনে আপনাদেরকে আমার কিছু দুঃখের কাহিনী শোনাতে চাই।
আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে অবিবাহিত অবস্থায় মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রথমবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। এভাবে চার দফা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে প্রায় সাতাশ (২৭) বছর যাবত উক্ত দায়িত্বে আছি।
একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে ভিলেজ পলিটিক্সের মতো নোংরামিতে আসার কারণে অনেক অফিসারবৃন্দ, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে তখন তিরস্কার করত। কারণ, আমার অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব তখন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ভালো ভালো পদে চাকরি করত, যাদের অনেকে পরবর্তীতে সচিব হয়ে অবসর নিয়েছেন।
মূলত, আমার ইউনিয়নটি এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে অনুন্নত ছিল। কোনো রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ কিছুই ছিল না। কয়েকটি প্রাইমারি স্কুল ছাড়া কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। সে কারণে অন্যান্য ইউনিয়নের লোকেরা আমাদেরকে ঘৃণা করত। আমার মননে এসব কিছু খুবই আঘাত দিত।
এই কারণেই আমি ছোটবেলা থেকেই শাপলাপুরের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য মনে মনে বাসনা করতাম। এরপর লেখাপড়া শেষ করে ১৯৮৮ সালে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে প্রথমবারেই জয়ী হই। এরপর প্রত্যেক সরকারের আমলে এমপি, মন্ত্রীদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে থাকা আমার অফিসার বন্ধুদের সহায়তায় বিশেষ বিশেষ বরাদ্দ এনে আমার এলাকাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে থাকি।
ইনশাআল্লাহ, আজকে আমার ইউনিয়ন অত্র উপজেলায় একটি উন্নত মডেল ইউনিয়নে পরিণত হয়েছে। সব হয়েছে — শুধু একটি কলেজ নাই। তবে একটি সরকারি কারিগরি কলেজ গত সরকারের শেষের দিকে মন্ত্রণালয়ের বাছাই কমিটিতে অনুমোদন হয়ে বর্তমানে পেন্ডিং আছে।
উল্লেখ্য যে, আমার এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে এই আশঙ্কায় আমি কখনো দলীয় রাজনীতির চিন্তা করি নাই। কিন্তু প্রতি নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী দিয়ে আমাকে সারা জীবন কষ্ট দিয়েছে।
১৯৯২ সালে নির্বাচনী গণ্ডগোলের জের ধরে তারা আমাকে মেরে ফেলার জন্য কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড় থেকে তাদের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের দ্বারা অপহরণ করে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে করতে তাদের জেলা অফিসে নিয়ে যায় এবং আমাকে গুম করার জন্য আটক করে রাখে। পরে সংবাদ পেয়ে দ্রুত পুলিশ গিয়ে আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।
এই কারণে আমি তাদের জেলা আমিরসহ অনেকের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করি। পরে দুই দলের আমার আত্মীয় আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি মরহুম মোজাম্মেল হক সাহেব এবং জামায়াতের এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী সাহেবের মধ্যস্থতায় উক্ত বিরোধ আপোষ-মীমাংসা করে ফেলি।
এরপর আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের আমলে আশেক উল্লাহ রফিক সাহেব এমপি হওয়ার আগে দলবল নিয়ে তিনি আমার এলাকায় জমি দখল করতে গিয়ে তৎকালীন জামায়াতের উপজেলা আমীর, বর্তমানে জামায়াতের জেলা কমিটির সদস্য জনাব জাকের হোসাইন সাহেবের পিতাকে হত্যা করে।
কিন্তু ঘটনায় পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে উল্টো শোকাহত পরিবারের নিরীহ লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা নেয়। আমি এলাকার চেয়ারম্যান হিসেবে তখন বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সাথে ফাইটে চলে যাই। অনেক কষ্টে একপর্যায়ে হত্যা মামলা রুজু করাতে সক্ষম হই। তবে থানা কর্তৃপক্ষ কৌশলে আশেক উল্লাহ রফিকের নাম এজাহারের বডিতে লিখে আসামির কলাম থেকে বাদ দিয়ে দেয়।
তখন থেকেই এমপি আশেক উল্লাহ রফিকের সাথে আমার বিরোধ শুরু হয়। পরবর্তীতে ভাগ্যের গুণে তিনি এমপি হয়ে যান। অতঃপর তার সমস্ত ক্ষমতা নীরবে নিভৃতে আমার উপর প্রয়োগ করতে থাকে।
এরপর পরিষদের নির্বাচন চলে আসলে প্রশাসনকে দিয়ে আমাকে পরাজিত করায় এবং আমার চিরশত্রু একজনকে চেয়ারম্যান করে। এমতাবস্থায় গত সরকারের আমলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে আইন করায় সেই সুযোগে আবারো এমপি সাহেব প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমাকে পরাজিত করবে আশঙ্কা করে, আমি গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নমিনেশন নিতে চেষ্টা করি। তখন এমপি সাহেব নমিনেশন প্রাপ্তিতে আমার চরম বিরোধিতা করে।
কিন্তু ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইসহাক সাহেব এবং ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা সাহেবের পক্ষে আমি কাজ করায় এবং এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা সাহেবের সহযোগিতায় আমি গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভ করতে সক্ষম হই।
তবে এমপি সাহেব আমাকে "হাইব্রিড" অপবাদ দিয়ে পুনরায় ষড়যন্ত্র শুরু করে। আওয়ামী লীগের তার অনুগত তিনজন নেতাকে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আমার বিরুদ্ধে সেট করে এবং আমার পরাজয় নিশ্চিত করার জন্য জেএম ঘাট কেন্দ্রের ভোট উপজেলায় এনে রেজাল্ট পরিবর্তন করে আমার নিকটতম প্রার্থীকে জয়যুক্ত করার চেষ্টা করে। একই উদ্দেশ্যে শাপলাপুর হাইস্কুল কেন্দ্রের ভোট গণনা রাত ১০টা পর্যন্ত বন্ধ রাখে।
কিন্তু আমি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের প্রার্থী ছিলাম বিধায় এমপি সাহেব প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হন এবং আল্লাহর রহমতে আমি আবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই।
সর্বশেষ ২০২৩ সালে কক্সবাজার শহরের এন্ডারসন রোডে অবস্থিত আমার বসতভিটা হতে আমাকে উচ্ছেদ করার জন্য এমপি আশেক উল্লাহ সাহেব জেলার কয়েকজন নেতা সহ প্রশাসনকে দিয়ে বুলডোজার চালিয়ে আমার সব কয়টি বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে আমার প্রচুর আর্থিক ক্ষতি সাধন করেন।
উক্ত জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আমার পক্ষে উচ্চতর আদালতের রায়, ডিক্রি ও নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণে সাবেক জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরানের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে কন্টেম্পট মামলা দায়ের করি। উক্ত মামলায় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে প্রসিডিং শুরু হয়েছে।
আমি আশা করি আমি ন্যায় বিচার পাব এবং তার শাস্তি হবে ইনশাআল্লাহ।
তাই বলছি —
"জয় কালে ক্ষয় নাই। মরন কালে দারু নাই। ভাল মন্দ পৃথিবীতে দুই হাতের কামাই।"
ইতি:
এডভোকেট আব্দুল খালেক চৌধুরী
চেয়ারম্যান, শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদ, মহেশখালী, কক্সবাজার।
[ মত-প্রতিমত বিভাগে প্রকাশিত কোনো লেখার জন্য সম্পাদক দায়ি নয়। ]