Advertisement


মাতারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রশংসাপত্রের নামে অনেকটা চাঁদাবাজি চলছে


মাতারবাড়ি প্রতিবেদক।। মহেশখালীর মাতারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে প্রশংসাপত্র বিতরণের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশংসাপত্র দিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিধান না থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ সে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। প্রশংসাপত্র নিতে শিক্ষার্থীদের গুনতে হচ্ছে গলাকাটা ফিস। 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছেন -একটি প্রশংসাপত্র তৈরি করতে যেখানে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ টাকা খরচ হয়, সেখানে শিক্ষার্থী প্রতি আদায় করা হচ্ছে রশিদ বিহীন ৬০০ টাকা। টাকা দিতে না পারলে বা অস্বীকার করলে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। কিন্তু মিলছে না এর কোনো প্রতিকার।

 
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে অফিস সহকারি প্রশংসাপত্র দেয়ার সময় জনপ্রতি ৬০০ টাকা করে আদায় করছে। ওই টাকা না দিলে স্কুল থেকে প্রশংসাপত্র দেয়া হচ্ছে না।

মহেশখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ৩৮৮ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহন করে ৩৬৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। জনপ্রতি ওই হারে আদায় করলে ৩৬৩ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অবৈধ আদায়ের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ টাকার বেশি। স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে অবৈধ টাকা আদায়ের ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল থেকে এসএসসি উত্তীর্ণ এক শিক্ষার্থী জানায়, কলেজে ভর্তির জন্য গেলে প্রশংসাপত্র লাগবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। তখন স্কুলে গেলে প্রশংসাপত্র বাবদ ৬শ’ টাকা দিতে হবে বলে জানান প্রধান শিক্ষক রেজা খাঁন।

প্রধান শিক্ষক স্যারকে প্রশংসাপত্র বাবদ কিছু কম নিতে বললে  তিনি সরাসরি না করে দেন।

অপর এক শিক্ষার্থী জানায়, আমার বাবা দিনমজুর। আমি ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে আমাকে প্রশংসাপত্র দেয়নি। প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে অনেক অনুরোধ করেও কাজ হয়নি।

এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, আমি একজন বেসরকারি  চাকরিজীবী। আমার ছেলেকে কোনমতে ৫০০ টাকা জোগাড় করে প্রশংসাপত্রের জন্য পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু থাকে প্রশংসাপত্র না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এমনকি উক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন শিক্ষক অনুরোধ করলেও কথা শুনেনি তারা। একটা প্রতিষ্ঠানে এইভাবে চাঁদাবাজি করলে আমরা কিভাবে ছেলেদের লেখাপড়া করাব? তিনি চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, এভাবে বিভিন্ন পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত ফিসসহ বিভিন্ন ফিসের নামে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করেন প্রধান শিক্ষক। যার কোনো তদারকি নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক রেজা খানের  সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি পরিচয় দিলে পরে কথা বলব বলে ফোন কেটে দেন। পরে বহুবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মানিক চৌধুরী বলেন, আমরা ৬০০ টাকা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তবে টাকাগুলো কলেজ স্থাপন করার জন্য নেওয়া হচ্ছে। অসচ্ছল পরিবারের বিষয়টি বিবেচনা না করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন- দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কম রাখার জন্য আমি প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিয়ে দিব।

এ বিষয়ে উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার ফজলুল করিম বলেন, প্রশংসাপত্রের জন্য এত টাকা নেওয়া অন্যায়। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার নাছির উদ্দিন বলেন, প্রশংসাপত্র বাবদ টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।