Advertisement


১৩ মার্চ: রাজবন্দী মুক্তির জন্য 'জেল ভাঙ্গা' আন্দোলনের ডাক দেন ভাসানী


মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন

মধ্য মার্চের কাছাকাছি সময়ে আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নাম দিয়ে আন্দোলনের প্ল্যাট ফরম তৈরী হতে থাকল। জান্তা সরকার দমননীতির চর্চার ফল হিশেবে সাধারণ জনগণসহ রাজনৈতিক নেত-কর্মীদের কোনো ও মামলা ছাড়াই গ্যেফতার করে জেলে দিচ্ছিল। রাজবন্দীদের মুক্তির জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে দাবি ও আন্দোলন চলমান ছিল। মার্চের ১৩ তারিখ মওলানা ভাসানী রাজবন্দীদের মুক্ত করার জন্য 'জেল ভাঙ্গা' নামে ব্যতিক্রমী এক আন্দোলনের ডাক দেন।

আন্দোলনের নতুন মাত্রা যুক্ত হয় এতে। আন্দলনের তীব্রতা ও হাওয়া বদল ঠের পেয়ে এদিন ইয়াহিয়া লাহোরে সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করে একটি বিবৃতি প্রদান করে। প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদের রক্ত মাড়িয়ে লাহোরের কোনো বৈঠকে বসবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। তবে, ঢাকায় বৈঠক হলে তাতে যোগ দেবেন বলে বঙ্গবন্ধু সম্মতি প্রদান করেন। বিপরীতে জান্তা সরকার প্রতিনিয়ত তাদের ষড়যন্ত্রে বীজ বুনতে থাকে। পরিকল্পিতভাবে ১৩ মার্চ সামরিক কর্তৃপক্ষের ১১৫নং মার্শাল ল’ আদেশ জারি করে জান্তা সরকার।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীরা অফিস বর্জন করতেছিল আগে থেকেই। জান্তা সরকার অনেকটা বেকায়দায় পড়ে যায়। সরকারি-বেসরকারি সব অফিস মুলত অকার্যকর হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সকল বেসামরিক কর্মচারী যাদের প্রতিরক্ষা খাত থেকে বেতন দেওয়া হয় তাদের ১৫ মার্চ সকালে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয় শাসকগোষ্ঠী। অন্যথায় তাদের চাকরি থেকে বরখাস্তের হুমকি দেয় পাক সরকার। শাসকগোষ্ঠীর এ ধরনের নির্দেশকে উসকানিমূলক বলে অভিহিত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কড়া প্রতিবাদ জানান। এদেশে থাকা বিদেশীরা কয়েকদিন আগে থেকেই স্ব-স্ব দেশে ফেরত যাচ্ছিল। এদিন পশ্চিম জার্মানির ৬০ জন, জাতিসংঘের ৪৫ জন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সের ৪০ জনসহ মোট ২৬৫ বিদেশিকে ঢাকা থেকে অপসারণ করা হয়।