Advertisement


মহেশখালীতে হাজার হাজার গাছ কেটে অবৈধ ঘের, ৩ মামলা


মিজানুর রহমান,
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে ।। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের পশ্চিমে বগাচতর নামে পরিচিত একটি চিংড়ী ঘেরের পশ্চিমে প্যারাবনের প্রায় শত শত একর সরকারি জায়গার গাছ কেটে তৈরি হচ্ছে চিংড়ী ঘের। ইতোমধ্যে হাজার হাজার বাইন, কেওড়া, গেওয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এখন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের পাহারা বসিয়ে সেখানে তৈরি হচ্ছে চিংড়ি ঘের। এতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি ঝুঁকিতে পড়ছে উপকূলের অন্তত ৩ লাখের বেশি মানুষ। এ ঘটনায় আলাদা ৩টি মামলা হয়েছে।


বন বিভাগ বলছে- কয়েক সপ্তাহ ধরে হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজী পাড়ার কাছে বন বিভাগের প্যারাবন কর্মীদের ম্যানেজ করে বগাচতর ঘোনার লাগোয়া সরকারি প্যারাবনের হাজার হাজার গাছ কেটে স্কেভেটার দিয়ে প্রায় ১০০ একর জায়গা দখল করে নেয় বিশাল একটি সিন্ডিকেট।


স্থানীয়রা জানান, নাজেম উদ্দিন নাজু, আব্দুল মতিন, শাহাবুদ্দিন, মারুফ, এরশাদ ও রাজনৈতিক দলের নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মিলেমিশে প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝেও বেশ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় শাইনুর ফরোয়ার্ড় নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন-
"আজকের প্যারাবন সাবাড় করে অবৈধভাবে চিংড়ী ঘের তৈরির বিরুদ্ধে বনবিভাগের অভিযানের অর্থ ও সাহস দুটোই নাকি বাইন গাছ কেটে প্যারাবন নিধনকারী সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় করেছে, নাজু নামের একজন সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদ্স্য জনসম্মুখে বলেন যে; উচ্ছ্যেদের কোন সুযোগ নেই। প্রশাসন বা আইনিভাবে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মন্তব্যকারী সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী একাধিক সদস্যরা নাকি প্রচুর অবৈধ অর্থ সম্পদশালী আর ক্ষমতাসীন।"

মহেশখালীর সাংবাদিক মাহবুব রোকন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন- "হোয়ানকের বগাচতর আনসার ক্যাম্পের কমান্ডার বাঁশখালীর বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব, ভূমিদস্যুদের 'সাহসের বাতিঘর'।  তিনি আরও লিখেন, আনসার কমান্ডার মোতালেব প্যারাবন কাটা ও সরকারি জমি দখলের বিষয়ে একজন উপজেলা নেতা ও একজন বড় নেতার নাম বলেছিলেন স্পষ্ট ভাবে। যার প্রমান মহেশখালীর সব খবর এর হাতে আছে। তিনি বলেছিলেন হোয়ানকের নাজু কিছুই করছে না, এই দুই নেতার নামের উপরই ঘের নির্মাণ হচ্ছে।"

এ বিষয়ে আনচার কমান্ডার মোতালেবের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- আমি বগাচতরে দায়িত্বে রয়েছি, এর বাহিরে আমার কোন দায়িত্ব নেই। তবে লোকের মুখে শুনতেছি, সিরাজুল মোস্তফা এর ভাই মারুফের নেতৃত্বে প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের তৈরী করা হচ্ছে। তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

প্যারাবন কাটার জন্য আলোচনায় আসা একজন আব্দুল মতিন। তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- অনেকে বলতেছে আমিও জড়িত, আসলে এ সবে আমি জড়িত নই, এরশার এর নেতৃত্বে প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের তৈরী হচ্ছে। তবে তাদের সাথে আমার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু তাদের এ কাজে আমি জড়িত নই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মহেশখালী আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন , ঘুর্ণিঝড়ের মত ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকবজ নামে খ্যাত উপকূলের প্যারাবন । মানুষের জান মালের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে অবশ্যয় প্যারাবন রক্ষা করতে হবে । উপকূলের বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারনে ধ্বংস হচ্ছে প্যারাবন । পরিবেশ বিনষ্টসহ যারা নির্বিচারে প্যারাবন নিধন করে চিংড়ী ঘের নির্মাণ করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি ।

উপকূলীয় বন বিভাগের আওতাধীন মহেশখালী গোরকঘাটার রেঞ্জ এর বন কর্মকর্তা এস.এম আনিসুল হক জানান- মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে একটি চক্র কয়েক দিন ধরে প্যারাবন নিধন করেই চিংড়ীঘেরের বাঁধ নির্মাণ করেছে। এই বাঁধ নির্মাণে প্যারাবনের ছোট-বড় মিলে অন্তত তিন হাজার বাইনগাছ কাটা পড়েছে। এতে বন বিভাগের প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্যারাবনের ওই জায়গার পাশে এরশাদ নামের ওই ব্যক্তির একটি মাছের প্রজেক্ট রয়েছে সে সূত্রে তিনি সেখানে শ্রমিক রেখে প্যারাবনের গাছ কেটে বাঁধ নির্মাণ করে দখলের পাঁয়তারা করছে। বনকর্মীরা এ পর্যন্ত এখানে ৩দফা  অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত চিংড়িঘেরের বাঁধ কেটে দিয়েছে।  প্যারাবনের গাছ কেটে বাঁধ নির্মাণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে গত ১০ ও ১২ জানুয়ারি। পরে মহেশখালী থানায় আরও একটি মামলা হয়।

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে- এ প্যারাবন নিধনকারীদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ আলাদা দুইটি মামলা করেছে। পরে সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়ার ঘটনায় মহেশখালী থানায় আরও মামলা হয়