পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) আকস্মিকভাবে ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থ হয়ে পড়লে রিতাজকে দ্রুত চট্টগ্রামের ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটায় সেদিনই তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) এবং শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। শনিবার সকাল থেকে সে ‘ডিপ কোমা’য় চলে যায়। চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও আশা ছেড়ে দেন। পরে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল (শনিবার) বিকাল চারটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রিতাজকে কক্সবাজারে আনা হয়। সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রাত পৌনে ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, মায়ের মৃত্যুর গভীর মানসিক শোক থেকেই রিতাজ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।
মৃত ঘোষণার পর রিতাজের মরদেহ কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া এলাকার বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানে রিতাজকে এক নজরে দেখতে স্বজন ও শুভাঙ্খিদের ভিড় সৃষ্টি হয়। পুরু পরিবারজুড়ে কান্না ও শোকের অবহ ছড়িয়ে পড়ে। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় উত্তর নুনিয়াছড়া বড় কবরস্থানের সামনে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তার মা রোকসানা বেগমের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক আনছার হোসেনের স্ত্রী রোকসানা বেগম গত ১৪ অক্টোবর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। স্ত্রীকে হারানোর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি আনছার হোসেন। সেই শোকের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার হারালেন প্রিয় ছোট ছেলেকে।
পরিবার সূত্র জানায়, আনছার হোসেনের দুই ছেলে রয়েছে। ছোট ছেলে রিতাজ ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু ছাত্র ছিল। মায়ের মৃত্যুর পর তাকে চট্টগ্রামে খালার বাসায় পাঠানো হয় এবং সেখানে একটি স্কুলে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছিল।
এদিকে গতকাল শেষ দুপুরের দিকে চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা আশা ছেড়ে দেওয়ার খবর জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিসাতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরইমধ্যে রিসাত 'জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে' উল্লেখ করে তার বাবা আনছার হোসেন একটি ফেসবুক পোস্ট দেন। "আমার অভিমানী রিতাজ জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে!" -শিরোনামের পোস্টে তিনি লিখেন-
"আমার ছোট ছেলে রিতাজ হোসেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। মাত্র দুই মাস ১৩ দিন আগে মাকে হারানো ছেলেটির ব্রেইন সাড়া দিচ্ছে না। তবে হার্টবিট এখনো সচল। ডাক্তারদের আশাহীনতায় আমরা তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নিতে বাধ্য হয়েছি। হাসপাতালের আইসিইউ ছেড়ে আমরা কক্সবাজারের পথে রওয়ানা হয়েছি। নিস্তেজ ছেলেটি অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে আছে। মুখে এখনো অক্সিজেন লাগানো। ফুল স্পীডে অক্সিজেন চলছে। বলতেও পারছি না, আমার আদরের অভিমানী ছেলেটি মারা গেছে, আবার জীবিত আছে সেটাও বলতে পারছি না! তবে আল্লাহর অসীম ক্ষমতা থেকে আমি এখনো নিরাশ হইনি। তিনি মৃত্যুর মালিক, তিনি জীবনেরও মালিক। তিনি যদি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেন, তাঁকে প্রশ্ন করার কেউ নেই। আমি একজন বাবা হিসেবে মহান আল্লাহর দয়া ও কুদরতের দিকে তাকিয়ে আছি। আমি তাঁর দয়া থেকে নিরাশ হতে চাই না। তিনি অশেষ ক্ষমতার মালিক। তিনি চাইলে এখনো আমার রিতাজকে ফিরিয়ে দিতে পারেন আমার বুকে। হে আল্লাহ, আমি ও আমার মাসুম সন্তানের প্রতি একটু দয়া করো। তোমার মিরাকল বিশ্ববাসীকে দেখাও খোদা।"
এ পোস্ট প্রকাশের পর কিছুটা আশার সঞ্চার হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য মানুষ রিসাতের জন্য দোয়া করে লিখতে থাকেন।
পরে "ইয়া আল্লাহ, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও" শিরোনামে লেখা আবেগঘন আরও একটি পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন-
"আমার ছেলেটা গাড়িতে চড়তে ভয় পেতো। গাড়িতে উঠলেই তার বমি হয়। দূরে কোথাও গেলে বমি করতে করতে কাহিল হয়ে যেতো। এখন অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে কী চমৎকার চলে আসছে কক্সবাজারে! কোন বমি নেই। বমি আসছে- এই কথা বলার ভাষাও নেই। নিথর পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সের সিটে। একবারও বলছে না- পাপ্পা, জানালাটা খুলে দাও! এমন দৃশ্য বাবা হিসেবে আমাকে সহ্য করতে হচ্ছে!...তুমি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও, আল্লাহ।"
এর কিছু সময় শেষে "আমার আদরের রিতাজ আর নেই" মর্মে তৃতীয় পোস্ট দেওয়ার পর সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। অপর এক পোস্টে জানাজার তথ্যটি নিশ্চিত করেন সাংবাদিক আনছার হোসেন।
জিইউসি'র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আনছার হোসেনের পুত্র রিতাজের এই অকাল ও অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে কক্সবাজারের সাংবাদিক সমাজ গভীরভাবে শোকাহত হয়ে পড়েছেন। সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার (জেইউসি)-এর সভাপতি নুরুল ইসলাম হেলালী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাফর এক যৌথ শোকবার্তায় মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এছাড়া বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি কক্সবাজার জেলার পক্ষ থেকেও গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। এক শোকবার্তায় দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, স্ত্রীকে হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই সন্তান হারানো আল্লাহ তা’আলার এক কঠিন পরীক্ষা। তারা সাংবাদিক আনছার হোসেনের জন্য সবর ও ধৈর্য কামনা করেন এবং মরহুম রিতাজ হোসেনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
সাংবাদিক আনছার হোসেন এর সন্তান রিতাজ এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন- 'দৈনিক কক্সবাজার' পরিবার। তারা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে- শোকসন্তপ্ত পরিবারকে শোক সইবার শক্তি দান করবার প্রার্থনা করেন মহান আল্লাহর দরবারে।
সাংবাদিক আনছার হোসেন এর সন্তান রিতাজ এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে- 'মহেশখালীর সব খবর' পরিবার। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে শোক সইবার শক্তি দান করবার প্রার্থনা করছি মহান আল্লাহর দরবারে।
কিশোর বয়সেই জীবনের আলো নিভে যাওয়া রিতাজের মৃত্যু কক্সবাজারজুড়ে গভীর শোকের আবহ তৈরি করেছে। সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের মানুষ শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
