ঢাকা: মাসের শুরুর পর- মধ্য মার্চে আবারও দেখা
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের। ফরমেটও সেই একই- টি-টোয়েন্টি। বদলেছে শুধু ভেন্যু।
তাতেই কী আসে যায়- এপার বাংলার পর এবার খেলা ওপার বাংলায়।পাকিস্তানের
সঙ্গে চলতি মাসে এশিয়াকাপে মুখোমুখির সেই ফলাফল যদি বিশ্বমঞ্চে একই রকম হয়
তাতে মন্দ হয় না নিশ্চয়! কোটি বাঙালি তো সেটিই চান। ফর্মে থাকা
তামিম-সাব্বির-সাকিব-রিয়াদদের মধ্য থেকে আপন আলোয় কেউ জ্বলে উঠলেই তো
কুপোকাত পাকিস্তান! এর মধ্যে মোস্তাফিজ, আল-আমিনরা কাঙ্ক্ষিত পারফরমেন্স
এনে দিলে তো কথাই নেই।সাকিব আল হাসান বুধবার (১৬ মার্চ)
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের মধ্য দিয়ে নিজের ৫১তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে
যাচ্ছেন। গত ৫০ ম্যাচে সাকিব করেছেন ৯৯৬ রান। তার লাগে আর মাত্র ৪ রান,
তাতেই ‘সুপার সাকিব’ দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে হাজার রানের ক্লাবে ঢুকে
যাবেন। এই ছোট ফরম্যাটে সাকিবের স্ট্রাইক রেটও দারুণ- ১২২ দশমিক ২০। ১৫২
বছরের পুরনো ক্রিকেটের স্বর্গরাজ্য কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ২৫ বছর পর
খেলতে নামছে টিম বাংলাদেশ। তবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সুবাদে
এই স্টেডিয়ামে খেলার মধুর অভিজ্ঞতা আছে সাকিবের- সেটিও পাকিস্তানের বিপক্ষে
ম্যাচে বেশ কাজে দেবে।বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে হিমাচলের ধর্মশালায়
গত ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে সাকিব খেলেন ব্যাটে-বলে নির্ভরযোগ্য এক ইনিংস।
ওভারের শেষ দিকে ঝড়ো ইনিংস আসে তার ব্যাট থেকে। আর বল হাতে নেন মাত্র ১৫
রানে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। যা তার টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ার সেরাও বটে।তবে
সামগ্রিক বিচারে ব্যাট হাতে সাকিব বর্তমানে আগের মতো ধারাবাহিকভাবে জ্বলে
না উঠতে পারলেও বল হাতে কিন্তু ঠিকই নৈপুণ্য দেখিয়ে যাচ্ছেন। তার প্রমাণ
দিচ্ছে বর্তমানে আইসিসি টি-২০ শীর্ষ বোলারদের তালিকাও। যাতে সাকিব উঠে
এসেছেন বিশ্বের আট নম্বর বোলারে। এই অলরাউন্ডার শেষ দশ টি-টোয়েন্টিতে ১৩টি
উইকেট নিয়েছেন।বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরি করা
তামিম ইকবাল শেষ ১০টি টি-টোয়েন্টি খেলে করেছেন ৪৬৯ রান। যার মধ্যে
দুবাই-শারজাহতে পাকিস্তানের প্রিমিয়ার লিগও রয়েছে। তার শেষ দশ ম্যাচের গড়
৪৭! দারুণ এক ফর্মে আছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে হতেই পারে আরেকটি
‘তামিম তাণ্ডব’। গত ম্যাচে ধর্মশালায় ওমানের বোলারদের পিটিয়ে নট আউট ১০৩
রান করা তামিমের অনুপ্রেরণা সেটিই!এ বছর টি-টোয়েন্টিতে এখন
পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের তালিকায় থাকা বাংলাদেশের সাব্বির রহমান যে কতটা
ভয়ঙ্কর, তা তার ব্যাটিং না দেখলে কেউ আন্দাজ করতে পারবেন না।ক্রিকেটের
ক্ষুদ্র এই ভার্সনে ভারতের বাঘা-বাঘা ব্যাটসম্যানদের পেছনে ফেলে ক্রিকেট
বিশ্বের নজর কেড়েছেন এই হার্ড হিটার। তামিম ইকবাল যেমন অবিশ্বাস্য
ধারাবাহিকতায় ব্যাটিং করে যাচ্ছেন ঠিক তেমনি সাব্বিরও ব্যাটিং অর্ডারে তিন
নম্বরে নেমে দিয়ে যাচ্ছেন ধারাবাহিকতার অনন্য নিদর্শন। এ বছর মোট ১২টি
ম্যাচে ৪৩ দশমিক ১১ গড়ে ৩৮৮ রান করেছেন সাব্বির রহমান।
মাহমুদুল্লাহ
রিয়াদ যেন এক ভরসার নাম। পাকিস্তান বধে তিনিও হয়ে উঠতে পারেন নায়ক। যেমনটা
তিনি করেছিলেন গত বছর-২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে। সেবার এই মিডল
অর্ডার ব্যাটসম্যান পর পর দু’টি সেঞ্চুরি করেন। বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে
বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যান এক নতুন উচ্চতায়।
টি-টোয়েন্টিতে
শেষ দিকের পাওয়ার হিটার হিসেবে নির্বাচকদের ভরসার নাম মাহমুদুল্লাহ। গত ২
মার্চ এশিয়াকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঝড়ো ২২ রান তুলেছিলেন তিনি। এবারও তার
ঝড়ো এবং পাওয়ার হিটে বিশ্বমঞ্চে টাইগারদের শুভ সূচনা হতেই পারে। পাশাপাশি
হাত ঘুরাতেও কার্যকরী এই অফব্রেক বলার।
ইনজুরি কাটিয়ে সুপার টেনের
এই ম্যাচে দলে ফিরবেন মোস্তাফিজুর রহমান। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ মার্চের
টি-টোয়েন্টি মিস করেছিলেন এই কাটার মাস্টার। এবার দলে তার অন্তর্ভুক্তি
বার্তি শক্তি টিম বাংলাদেশের। ইতোমধ্যে সেরা অভিষিক্ত ক্রিকেটার হয়েছেন
মোস্তাফিজ। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেলা ক্যারিয়ারের ১০ টি-টোয়েন্টিতে তার
সংগ্রহ ১৩ উইকেট। ইকোনমিও ভালো- ৫ দশমিক ৬১। তার কাটারে কাবু হতেই পারে
পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা।
আল-আমিন টি-২০ শীর্ষ বোলারের তালিকায় উঠে
এসেছেন ছয় নম্বরে। শেষ ১০টি ম্যাচে ৯টিতে বোলিং করে আল-আমিন নিয়েছেন ১৭টি
উইকেট। ম্যাচের শুরুতেই প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের গতি দিয়ে ঘায়েল করে
উইকেট তুলে নিতে পটু এই পেসার। ভূষিত হয়েছেন বিশ্ব একাদশের ক্রিকেটার
হিসেবেও। তার সঙ্গে রয়েছেন ‘গতিদানব’ তাসিকন আহমেদও।
২০১৫ সালে
বাংলাদেশ ওয়ানডেতে নিজেদের ইতিহাসকে নতুন করে লিখেছে। এবার নতুন ইতিহাস
লেখার পালা টি-টোয়েন্টিতেও, সুযোগের শুরু তো কাল থেকেই...।