Advertisement


আইল্যান্ড হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের প্রতি খোলা চিঠি

আবুল হাসেম ।। 



সম্মানিত মহেশখালী আইল্যান্ড হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ!
আসসালামু আলাইকুম / নমস্কার।

সুদীর্ঘ ২২টি বসন্ত অতিক্রান্ত করেও বিদ্যায়তনের প্রিয় মাটির গন্ধ এখনো আমাকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়। যে বড় ভাইদের স্নেহ ও অনুজদের শ্রদ্ধা নিয়ে জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় পাঁচটি বছর কাটিয়েছি, সে বিদ্যালয়ের সুখস্মৃতিগুলো রোমন্থন করতে ও সম্মানিত বড় ভাই ও প্রিয় ছোট ভাইদের অনেককেই একসাথে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমাকেও তাড়া করে। বিষয়টি নিয়ে অনেকের সম্মিলিত চেষ্টায় একটি ছোটখাটো উদ্যোগও শুরু হয়। এনিয়ে আমার প্রাণপ্রিয় আইল্যান্ড হাই স্কুলের ছোট ভাইদের আগ্রহে স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে একটি পুনর্মিলন অনুষ্ঠান আয়োজনের অগ্রভাগে থেকে কাজ করতে গিয়ে আজকে একটি জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়েছি।  যখন মনে হচ্ছে মহেশখালীতে জন্মগ্রহণ করাটাই যেন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।

চট্টগ্রামে বিগত রমজানের এক ইফতার মাহফিলে উপস্থিত সকলের আগ্রহে প্রিয় আইল্যান্ড হাই স্কুলের সকল প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের এক প্লাটফর্মে দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে স্কুলের একটি রি-ইউনিয়ন করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে বিগত কিছুদিন আগে আমরা চট্টগ্রামে বেশ কিছু ব্যাচের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে একটি প্রস্তুতিসভা করেছিলাম। অনেক বড় ও ছোট ভাইদের মধ্যে যাদের উপস্থিতি আমাদের আয়োজনকে আরো বেশি সুন্দর করে তুলতে পারত তারা ব্যক্তিগত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক কারণে সেদিন উপস্থিত হতে পারেননি। 

যাইহোক একটি প্রাণবন্ত পরিবেশে সুন্দর আলোচনার মাধ্যমে সকলে রি-ইউনিয়ন করার ব্যাপারে একমত পোষণ করলেন। আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় ও আইল্যান্ড হাই স্কুলের গর্ব হুমায়ুন কবির আযাদ ভাইকে (তার মতামত নিয়ে) সভাপতি ও উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সরোয়ার ভাইকে সদস্য সচিব করে সকল ব্যাচের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি ৯১ সদস্যবিশিষ্ট পুনর্মিলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। সকল ব্যাচ প্রতিনিধিদের স্ব স্ব ব্যাচের সকলকে প্রাসঙ্গিক বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়। আয়োজনটির প্রচার সুবিধার্থে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে মোটামুটি পরিচিত সবাইকে এড করা হল ও কিছু ব্যানার ও পোস্টার তৈরির সিদ্ধান্ত হল। নি:সন্দেহে এ কাজটি করতে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবে আমাদের কিছু ভুল হয়েগেছে। অনেকক্ষেত্রে ব্যাচের প্রতিনিধি তার ব্যাচের সকলকে এ বিষয়টি সম্যক অবহিত করতে পারেন নি। হয়ত সকল বিষয়ে সকল পদাধিকারীদেরও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে জানানো হয় নি। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে আমরা সবাই কোন না কোনভাবে জানতে পেরেছি আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ঈদের পরের দিন আমাদের প্রাণের প্রিয় প্রতিষ্ঠানের একটি রি-ইউনিয়ন হতে যাচ্ছে।  কিন্তু বিধিবাম! হায় রে, ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেল দলাদলি, ছড়িয়ে পড়ল দোষারোপের বিষবাষ্প। কার সাথে যে কার ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শগত অনৈক্য রয়েছে তার প্রতিশোধ নিতে বিভিন্ন দলের উদ্ভব হয়ে তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল কেউ কেউ এবং আমাদের এত মহৎ ও সুন্দর একটি আয়োজন দু:খজনক ভাবে অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠল ।

হ্যাঁ, এটা সত্যি যে আয়োজকদের অনেক ভুলভ্রান্তি হয় ও এক্ষেত্রে কিছুটা অনবধানতা আছে, অনেক সিনিয়র ও জুনিয়রকে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া হয়নি।। কিন্তু একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমার প্রাণপ্রিয় স্কুলের কল্যাণার্থে, এর গুণগত মান উন্নয়নে, এর গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তার যে সুযোগ সৃষ্টির একটি উপলক্ষ তৈরি হতে যাচ্ছে, আমাদের একটুখানি সুচিন্তার অভাবে সেটিতো নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে। এতে করে কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির ব্যক্তিগত আক্রোশ হয়ত চরিতার্থ হবে কিন্তু ভবিষ্যতে আর কেউ ভাল ও মহৎ কোন কাজে এগিয়ে আসবেন না! । যে কোন সৃষ্টি অনেকক কঠিন- কিন্তু এটিকে ধ্বংস করা একেবারেই সহজ কাজ। আমার প্রশ্ন এখন আমরা কি করতে পারি?
আমরা করতে পারি-
১. আমাকে যেহেতু এই আয়োজনে  যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় নি, আমি এ অনুষ্ঠান হতেই দিব না। যার অর্থ হয়ত ভবিষ্যতে কোন দিন এ রকম কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করার সাহস কেউ পাবে না। ..এবং একটি উত্তম উদ্যোগের মাঠেই মৃত্যু হল।  
২. আমরা সবাই মিলে যে সকল ভুলভ্রান্তি হয়েছে তা শুধরিয়ে একটি সুন্দর ঈদ পুনর্মিলনী আয়োজন করে অনেক আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারি। আমাদের প্রিয় স্কুলের কল্যাণার্থে তথা আমাদের নিজেদের কল্যাণে স্থায়ী ভাল কিছু সৃষ্টি করতে পারি যা মহেশখালীর অন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারে। এভাবেই তো আলো জ্বলবে।
আজকের সভায় আপনারাই সিদ্ধান্ত নিবেন কি করবেন ।  আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

হাশেম, এক অধম ও অদম্য প্রাক্তন ছাত্র
মহেশখালী আইল্যান্ড হাই স্কুল। 

লেখক: আবুল হাসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

[[সম্পাদিত রূপ