Advertisement


আজ চৈত্র সংক্রান্তি


হক ফারুক আহমেদ 🌑

কবি নির্মলেন্দু গুণ তার ‘শেষ চৈত্রের সূর্য’ কবিতায় লিখেছেন- ‘অখণ্ড এই সময়টাকে/আমরা সবে ভাগ করেছি/ফাল্গুন চৈত বৈশাখে।/এই পৃথিবী ক্লান্ত হয়ে/পশ্চিমে যায় ডুবে/আমরা ভাবি সময় গেল;/নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখে/ফিরে তাকাই পুবে।’- বাংলার বুকে আজ কবির কথার মতোই চৈত্রের শেষ সূর্য ধরা দেবে।

আজ চৈত্র সংক্রান্তি। ঋতুরাজ বসন্তের যেমন শেষ দিন ঠিক একইভাবে চৈত্রেরই শেষ দিন। আজকের যে সূর্যোদয় হবে তা বঙ্গাব্দ ১৪২৩-এর শেষ সূর্যোদয়। আর আজকের সূর্যাস্তের মধ্য দিয়েই বিদায় নেবে আরও একটি বাংলা বছর। আজ অতীতকে বিদায় জানানোর দিন, বিদায় জানানোর দিন সকল জরা, জীর্ণ আর মলিনতাকে।

চৈত্র সংক্রান্তি বাঙালির জীবন ও লোকাচারে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ পুরনোকে বিদায় জানিয়ে কাল সকালেই আসবে ১ বৈশাখের নতুন ভোর। নতুন আলো নতুন প্রত্যাশা। তবুও পুরনো বছরকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানোর রীতির প্রচলন আছে এই বাংলায়।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা চৈত্র সংক্রান্তির আজকের এ দিনটিকে অত্যন্ত পুণ্যের দিন বলে মনে করেন। আচার অনুযায়ী এ দিনে বিদায় উৎসব পালন করে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। দোকানপাট ধুয়ে-মুছে বছরের যত সব জঞ্জাল, অশুচিতাকে দূর করা হয়।

পরদিনই খোলা হবে ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশের নতুন খাতা- যার লোকায়ত নাম ‘হালখাতা’। ধূপ ধুনোর সুগন্ধিতে ভারি করে রাখা হবে ঘরের পরিবেশ। তাছাড়া অভ্যাগত এলেই গোলাপ পানি ছিটিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হবে।

খরিদ্দারদের কাছে বকেয়া টাকা তুলতে বছরের প্রথম দিনটিকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার রেওয়াজ হাজারও বছরের পুরনো। মূলত আজকের দিন থেকেই হালখাতা নিয়ে নতুন বছরের অপেক্ষায় থাকেন ব্যবসায়ীরা। পুরনো বছরের হিসাব-নিকাশ ঘুচিয়ে ক্রেতার সঙ্গে নতুন সম্পর্ক তৈরিতে চলে মিষ্টিমুখ।

রাজধানীর বুকে তাঁতিবাজার, শাঁখারীপট্টি, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার, চকবাজার এলাকায় তাই এখন এ নিয়ে চলছে বিশেষ আয়োজন। পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা মিলল লাল মলাটের হালখাতা নিয়ে নতুন বছরের অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা।

আর এদিকে উৎসবের আমেজে আরও কয়েক দিন আগ থেকেই মেতে আছে বাংলার পাহাড়ি অঞ্চল পার্বত্য এলাকাগুলো।

চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে বাংলার পথে প্রান্তরে নানা জায়গায় বসেছে মেলা। গান, বাজনা ও যাত্রাপালাসহ নানা আয়োজনে উঠে আসে লোকজসংস্কৃতির নানা সম্ভার। বর্তমানে শহুরে সভ্যতার বিস্তৃতির কারণে আবহমান গ্রামবাংলার আনন্দমুখর পরিবেশে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে এখন শহর ও তার আশপাশের এলাকায় নগর সংস্কৃতির আমেজে চৈত্র সংক্রান্তির উৎসব হয় ও মেলা বসে, যা এক সর্বজনীন মিলনমেলার রূপ নিয়েছে।