Advertisement


মহেশখালীর ফুটবলার মুন্নার বেড়ে ওঠার গল্প ::

কিছুদিন আগেও তাঁর নাম কজনই বা জানত। ধীরে ধীরে কক্সবাজার ছেড়ে বেড়িয়ে আজ তিনি দেশের এক ফুটবল তারাকা । হ্যাঁ, কথা হচ্ছে দেশীয় ফুটবলার  মতিউর রহমান মুন্নাকে নিয়ে। তার বেড়ে উঠা নিয়ে লিখেছেন রকিউত উল্লাহ
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়ার ফকিরজুম পাড়া গ্রামে জন্ম মতিউর রহমান মুন্নার। তিনি আব্দুস সাত্তার সওদাগর ও ভেলুয়া বেগম দম্পতির ৮ সন্তানের  ছোট সন্তান।
এখন এই গ্রামের সব ছেলেদেরই লক্ষ্য একটাই। তারা মুন্নার মতো ফুটবল তারকা হতে চায়। মহেশখালী তথা কক্সবাজারের গণ্ডি পেরিয়ে এখন মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সাংসদের এক নির্ভর যোগ্য ফুটবলার তিনি।

শিশু বয়সে কালারমারছড়ার সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয় লেখাপড়া করার সময় স্কুলের পক্ষ হয়ে  প্রাইমারী লেভেল স্কুল ভিত্তিক হাউসিং জুন খেলায় অংশগ্রহণ করে সেরা গোল দাতা ও চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবার নজর কাড়েন। তখন চোখ পড়ে স্থানীয় ফুটবলার সাঈদীর। পরে মুন্নাকে নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা শুরু করে দেন সাঈদী। তারপর বিভিন্ন কোচিং ও দিক নির্দেশনায় মতিউর রহমান মুন্নাকে ফুটবলার তৈরীর কাজ শুরু করেন।
কালারমারছড়ার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া কালীন নিম্ম মাধ্যমিক স্কুল ভিত্তিক জুন খেলায় অংশগ্রহণ করে মহেশখালীতে সাড়া ফেলেন। ঠিক সেই সময়ে ৭ম শ্রেণিতে পড়াকালীন কক্সবাজারে বিকেএসপির সিলেক্ট টিম আসলে কক্সবাজার জেলা স্টেডিয়ামে ট্রায়াল দিয়ে সিলেক্ট হন। তারপর খুলনার বিকেএসপি শাখায় ১ মাসের ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন। তারপর দুই মাসের ক্যম্পে সিলেট বিকেএসপি ডাক পায়। তারপরও সেখানে দু মাসের  ক্যম্প সম্পন্ন করে পারিবারিক কারণে ভর্তি হতে পারে নি। তারপর কক্সবাজার শহরের টেকনিক্যাল এন্ড কলেজে ভর্তি হন।
কক্সবাজারে চলে যাওয়ার পর জেলার অন্যতম ফুটবলার মাসুদের নজরে পড়ে। তার দিক নির্দেশনায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন টিমের হয়ে খেলতে থাকেন। খেলার সময় বিভিন্ন উপজেলায় সুনাম অর্জন করেন। তারপর কক্সবাজার লীগ শুরু হলে চকরিয়ার শেখ জামাল ও অলস্টার ক্লাবের পক্ষ হয়ে খেলে পরপর দুবার চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর জেলা পর্যায়ে মহেশখালী উপজেলার হয়ে খেলে বেশ সুনাম অর্জন করেন। এরপরে কক্সবাজার জেলা টিমে সিলেক্ট হন। তারপর কক্সবাজার জেলা টিমের পক্ষ হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হন। তারপর চট্টগ্রামের কল্লোল সংঘ, রাইজিং স্টার,চট্টগ্রাম মোহামেডান পক্ষ হয়ে একাধিক ম্যাচ  খেলেন।
তারপর থেকে সফলতা এসে ধরা দে। যোগদেন কক্সবাজারের সাড়াজাগানো টিম কক্সসিটিতে।সেকেন্ড বি লীগ ২০১০-২০১১ মৌসুমে প্রথম ঢাকার মাঠে চট্টগ্রাম আবহানির বিপক্ষে কক্স সিটির পক্ষ হয়ে অভিষেক হয়। অভিষেকের প্রথম বছরেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাজিমাৎ করেন। এরপর  নানা কারনে কক্সসিটি ক্লাব নিষিদ্ধ হলে যোগ দেন ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে। সেই  ২০১৩-২০১৪ মৌসুমে ৮ গোল করে আবার ও নজর আসেন মতিউর রহমাম মুন্না। এরপর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস লীগে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের  হয়ে খেলে ২০১৫ সালে রানার্স আপ অর্জন করেন। ২০১৬ সালে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এস.সি হয়ে খেলেন। তারপর নজর পড়ে বাংলাদেশের অন্যতম  কোচ সেন্টুর। তার হাত ধরেই যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধা ক্রীড়া সংসদ ঢাকায়। এরপর থেকেই বিপিএল এ মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সাংসদের এক নির্ভর যোগ্য মিড ফিল্ডার হিসাবে ২০১৭-বর্তমান পর্যন্ত খেলে আসতেছেন।
তিনি খেলাধুলায় নিয়োজিত থাকলেও লেখাপড়া থেকে বিরত থাকেনি। তিনি বর্তমানে গ্রীণ ইউনির্ভারসিটিতে  সামাজিক বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করে আসছেন।
তার সাফল্য দেখে স্থানীয় কয়েকজন ক্ষুদে ফুটবলার তাকে আইডল হিসাবে মানলেও তিনি তার আইডল মানেন কক্সবাজারের  মহেশখালীর আরেক গর্বিত জাতীয় ফুটবলার বর্তমান বসুন্ধরা কিংস এর সফল অধিনায়ক তৌহিদুল আলম সবুজ। তার হাত ধরেই জাতীয় দলে খেলার অপেক্ষায় আছেন।