Advertisement


কুতুবদিয়ার সাবেক সফল ওসি ফেরদৌস এর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী মুকুলের মামলা

 (ফাইল ছবি-২০১৭) ১৯টি অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার হওয়া মুকুল।
সৈয়দুল কাদের
মেজর (অবঃ) সিনহা হত্যাকান্ডের পর সুযোগ বুঝে এবার মামলা ব্যবসায় নেমেছে উপকূলের শীর্ষ সন্ত্রাসী মকুল। এই মামলাবাজের কারণে কুতুবদিয়া উপজেলার অসংখ্য লোকজন অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। র‌্যাব তাকে ১৯টি অস্ত্র ও বিপুল সংখ্যক গুলিসহ গ্রেপ্তার করলেও সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো জলদস্যুতায় নেমেছে। এই সন্ত্রাসীর ভয়ে অনেক জেলে সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছে। ১ সেপ্টম্বর সন্ত্রাসীদের প্রধান মুকুল কুতুবদিয়া থানার সাবেক সফল ওসি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রেস ক্লাবের সভাপতিকে আসামী করে আদালতে মামলা করেছে। আদালত অভিযোগটি সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ নিয়েছেন।

পুলিশের এই সফল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের মামলা করায় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়র সৃষ্টি হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় দীর্ঘদিন থেকে মুকুলের নেতৃত্বে কুতুবদিয়ায় জলদস্যুদের আস্তানা গড়ে তুলে। ২০১৮ সালের শুরুতে কুতুবদিয়াকে জলদস্যুমুক্ত করার ঘোষণা দেন তৎকালীন ওসি দিদারুল ফেরদৌস। এতে সফল হন। কুতুবদিয়া থেকে জলদস্যু ও ইয়াবা ব্যবসায়ি উৎখাত হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে উপকূলের এই শীর্ষ সন্ত্রাসী।

তার বিরুদ্ধে অস্ত্র,সন্ত্রাস, চাঁদাবাজীসহ ১১টি মামলা রয়েছে। তৎমধ্যে অস্ত্র মামলা দুইটি কুতুবদিয়া থানা মামলা নং- ৯, তারিখ ২২ জুন ২০১৭, কুতুবদিয়া থানা মামলা নং- ১৪, তারিখ ১৯ সেপ্টম্বর ২০১৮। সিআর দ্রুত বিচার মামলা নং ০৩/১৯, কুতুবদিয়া থানা মামলা নং-০৫, তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭, সিআর মামলা নং-১২০-১৭, সিআর মামলা নং-১২২/১৭, সিআর মামলা নং-২০৮/১৮, কুতুবদিয়া থানা মামলা নং-০২(১১)১৮, কুতুবদিয়া থানা মামলা নং-১(৯)১৮।

কুতুবদিয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি জয়নাল কোম্পানী জানিয়েছেন, জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আমরা এখন মুকুল আতংকে ভুগতেছি। যেকোন সময় সাগরে বড় ধরণের জলদস্যুতা শুরু করেতে পারে। ইতোমধ্যে সে পুনরায় বাহিনী গঠনের জন্য তৎপতা চালাচ্ছে। পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে মামলা করা হুমকি দেয়। তার মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে অসংখ্য নিরীহ লোকজন এলাকা ছাড়া হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশের মনোবল দুর্বল করার জন্য সে তৎপরতা চালাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে কুতুবদিয়া উপজেলাকে সে জলদস্যুদের অভয়ারণ্য হিসাবে গড়ে তুলবে।

কুতুবদিয়া উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আবু জাফর ছিদ্দিকী জানিয়েছেন কুতুবদিয়ার আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হওয়ায় জলদস্যু ও ইয়াবা কারবারিরা এলাকা ছাড়া হয়েছিল। তারা পুনরায় অনৈতিক কাজ শুরু করতে পুলিশকে মামলার ভয় দেখাচ্ছে। বড় সন্ত্রাসীরাও যে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে আমি শুনে অবাক হয়েছি। যাদের কারণে কুতুবদিয়ায় একটা সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে, বন্ধ হয়ে গেছে খুন, জলদস্যুতা,রাহাজানী, মাদক ব্যবসা, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজ যার কৃতিত্ব দিচ্ছেন কুতুবদিয়া থানার সাবেক ওসি দিদারুল ফেরদৌসকে। বর্তমান ওসিও সেই ধারাবাহিকতা এখনো অক্ষুন্ন রেখেছেন। ভাল কাজ করতে গেলে এই সন্ত্রাসীরা যেকারো বিরুদ্ধে মামলা করবে। এরা মামলা ব্যবসায়ী।

মহেশখালীর বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ শফিউল আলম জানিয়েছেন, এটি পুলিশের বিচক্ষণ কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার পরিকল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। মুকুল একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাকে ইতোমধ্যে র‌্যাব ও পুলিশ দুইবার বিপুল সংখ্যক অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে। সে আবারো সাগরে জলদস্যুতার জন্য প্রস্তুতি নিতেই পুলিশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী।

আলী আকবর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুচ্ছফা বিকম জানিয়েছেন কুতুবদিয়া থানার ওসি দিদারুল ফেরদৌস তিনি একজন শুধু পুলিশ কর্মকর্তা নন, তিনি একজন শিক্ষকও। তিনি কুতুবয়িায় অসংখ্য ভাল কাজ করেছেন। যেকোন ভাল কাজ জলদস্যুদের ভাল লাগার কথা নয়। অস্ত্রধারীরা প্রশাসনকে দুর্বল করতে যা ইচ্ছা করতে পারে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সিকদার জানিয়েছেন, মাদকের আকড়ায় পরিণত হওয়া কুতুবদিয়া এখন প্রায় মাদকমুক্ত। দীর্ঘদিন পরে কুতুবদিয়ার মানুষ এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারে। যিনি একাজটি করেছেন তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের মামলা একটি হাস্যকর বিষয়। আমরা অভিলম্বে এসব মামলা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানাচ্ছি। স্থানীয় লোকজনের মতে পুলিশের তৎপরতার কারণে শীর্ষ সন্ত্রাসী মুকুলকে ১৯টি অস্ত্রসহ র‌্যাব গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। তার যে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে ওই বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রশাসন মোকাবেল করতে ভয় পায়। যে যতদিন জেলে ছিল ততদিন সাগরে কোন জলদস্যুতা হয়নি। বর্তমানে বেরিয়ে এসে তার বাহিনী পুনরায় চাঙ্গা করতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে।

কুতুবদিয়া থানার সাবেক ওসি দিদারুল ফেরদৌস জানিয়েছেন, সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করলে সবকিছু সম্ভব। আমি থাকাকালীন সময়ে আড়াই বছরের মধ্যে কোন খুন হয়নি। মাদক প্রায় নির্মূল হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও সাধারণ লোকজন সহযোগীতা করেছে বিধায় এসব সম্ভব হয়েছে।