Advertisement


নৈতিক দায় থেকে পদত্যাগ করেছি

ঢাকা: নৈতিক দায় থেকেই আমি পদত্যাগ করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার হাতে আমি পদত্যাগপত্র দিয়েছি।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নানা সমালোচনার মুখে সদ্য পদত্যাগী গভর্নর ড. আতিউর রহমান এ কথা বলেন।

ড. আতিউর রহমান বলেন, ঘটনাটির তদন্ত হচ্ছে, রিপোর্ট পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। 

প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিজ হাতে গড়েছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। তার গাইডেন্স নিয়ে আমি ব্যাংক চালিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক কোথা থেকে কোথায় এসেছে তা আপনারা সবাই জানেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরঙ্কুশ সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব ছিলো না।

রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলার
আমি যখন যাচ্ছি তখন রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলার। যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন রিজার্ভ ছিলো ছয় বিলিয়ন ডলার। আমি পুরোপুরি সফল হয়েছি বলবো না, তবে ব্যাংকের নতুন একটি ধারা তৈরি করেছি।

প্রাইভেট ব্যাংকের কাছে কৃতজ্ঞ
আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাংকগুলো। সবগুলো ব্যাংক আমার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিলো। এই সেক্টরের ব্যাংকগুলো যেভাবে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেত কাজ করেছে তার জন্য আমি গর্বিত, কৃতজ্ঞ।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো যেন আরও বেশি সুযোগ পায়
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সমস্যা আছে। আমি সেসব সমস্যা সমাধানেও চেষ্টা করেছি। সবগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে পেরেছি। রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংগুলো যেন আরও বেশি সুযোগ পায় সে ব্যবস্থায় সরকার আরও নজর দেবে বলে আশা করি।

সাইবার অ্যাটাক ভূমিকম্পের মতো
বাংলাদেশ ব্যাংকে যে ঘটনাটি ঘটলো তা আমাদের বুঝে ওঠার আগেই হয়ে গেছে। এ ধরনের বিষয় থেকে আমাদের তৈরি হওয়ার ব্যাপার আছে। সাইবার অ্যাটাক সারা বিশ্বের সমস্যা, এটি বেশ জটিলও। কিছু দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ মিলিয়নের ঝামেলা হয়েছিল। এটা সব জায়গাতেই হতে পারে।

সাইবার অ্যাটাক জঙ্গি আক্রমণের মতো। ভূমিকম্পের মতো। এটি কখন যে আসবে তা বোঝার উপায় নেই। তাই প্রস্তুত থাকতে হবে। এটি জটিল ও অজানা বিষয়। আমাদের বিষয়টি বুঝে উঠতে সময় লেগেছে। সে জন্যই এমন ঘটনা ঘটেছে।

বিষয়টি উদ্বেগের জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন একটি সমস্যা এই সাইবার অ্যাটাক। যা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।
সংকটটাকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে চাই। এটা একটি হাইটেক সাইবার অ্যাটাক। এটা কোন দিয়ে আসছে, কোথা থেকে আসছে এটা আমরা বুঝে উঠতে পারিটি। সব মিলে এক ধরনের অস্ষ্টতা ছিলো। যখন এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটলো ঠিক তখনই বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনাটি ঘটলো।

এক সেন্ট্রাল ব্যাংকের সঙ্গে আরেক সেন্ট্রাল ব্যাংকের এমওইউ আছে। সে অনুযায়ী কাজ করতে হয়। যখন আমরা বুঝতে পেরেছি টাকাগুলো আনা সম্ভব হবে, তখন আমি সরকারকে জানিয়েছি। অর্থমন্ত্রীকে লিখিত দিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তার আগে আমার সাবধানতা আনতে হলো যেন যে কটা টাকা আছে সেগুলো যেন নিরাপদ থাকে।

পদত্যাগপত্র দেখে কেঁদেছেন প্রধানমন্ত্রী
আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি, আমি গত ত্রিশ বছর শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করেছি। তিনি যেহেতু আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলেন, তার কাছেই পদত্যাগপত্র দিয়েছি। তিনি পদত্যাগপত্র হাতে নিয়ে কেঁদেছেন। বলেছেন, আপনি যেটা করে দেখালেন সেটা কেউ করেনি। এটা একটি দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রী আরও যা বলেছেন সেটা আপনারা জানতে পারবেন।

সন্তানের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে আগলে রেখেছি
ঘটনার পর আমি দিল্লিতে গিয়েছিলাম। সেখানে অরুণ জেটলি সঙ্গে কথা বলেছি। এর মধ্যে দু’দিন ছুটি ছিলো, আমি সবসময় অনলাইনে কাজ করেছি। কিন্তু এটাকে বড় একটি ঘটনার মতো করে ব্যাখার কোনো কারণ ছিলো না। অর্থমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও উপরে নিয়ে যাবেন বলেই আশা। আমি আমার সন্তানের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে আগলে রেখেছি। আমি একটি ওপেন বুক। আমি, কোথা থেকে কোথায় এসেছি তা সবার জ‍ানা। আপনাদের সহযোগিতা না পেলে আমার মতো গরিবের ছেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হতে পারতো না।

স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি, শিক্ষকতায় ফিরছি
এই দেশেটা আমাদের মা। বাংলাদেশ ব্যাংকে যে কাজ আমি শুরু করে দিয়েছি সেটা যেন চলে। আমার উত্তরসূরি সেটা যেন এগিয়ে নেন। দেশটাকে সামনের দিকে নিয়ে যাবেন বলে আশা। আগামীতে আপনাদের সঙ্গে আবারও দেখা হবে রানিং শিক্ষক হিসেবে। শেষ পর্যন্ত আবার শিক্ষকতায় ফিরছি। ভেবে ভালো লাগছে এখন আমি আরও বাস্তবতা থেকে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে পারবো। বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবো।