Advertisement


মহেশখালীতে মাইক ব্যবহার করতে পুলিশের অনুমতি লাগবে, ঘোষণার বাস্তবায়ন চায় দ্বীপবাসী


মহেশখালী দ্বীপে কারণে অকারণে উচ্চমাত্রার শব্দযোগে যত্রতত্র মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পুলিশ প্রশাসন। এনিয়ে মহেশখালীতে যে কোনো ধরণের মাইকের ব্যবহার করতে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে মর্ম ঘোষণা দিয়েছেন থানা পুলিশ। অনুমতি না নিয়ে মাইক ব্যবহার করা হলে সংশ্লিষ্টদের কঠোর মূল্য দিতে হবে বলেও পুলিশের তরফে বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মহেশখালীর সকল মাইক সার্ভিসকে বিষয়টি থানার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান -মহেশখালীর মতো একটি দ্বীপ উপজেলায় প্রতিদিন কারণে অকারণে বহু মাইক রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। বাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরণের সভা-সমাবেশের নামে বিরক্তিকর ভাবে এই মাইকের ব্যবহার হয়। দীর্ঘদিন থেকে কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে মহেশখালীতে এটি হয়ে আসছে। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে দ্বীপের একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যন্ত খুব বিশৃঙ্খল ভাবে এটি লক্ষ করা যায়। প্রতিনিয়ত ব্যাপক শব্দ-দূষণের মাধ্যমে এই তৎপরতা চলার কারণে সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, রুগী ও বিভিন্ন দপ্তরের প্রাত্যহিক কাজে ভিগ্নতার সৃষ্টি হচ্ছে এই নিয়ন্ত্রণহীন ও অপরিকল্পিত ভাবে মাইকের ব্যবহারের কারণে। তিনি বলেন পুলিশ আইনে এ ধরণের বিষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পষ্ট ভাবে বলা আছে। যে কোনো ধরণের সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ সব ধরণের তৎপরতায় মাইকের ব্যবহার করতে চাইলে জেলা প্রশাসক হয়ে পুলিশ সুপার এবং শেষতক থানার পূর্বানুমতি নিতে হয়। কোন মিছিল কোন কোন পথ দিয়ে যেয়ে কোথায় শেষ হবে এসব বিষয় খোলাসা ভাবে লিখে তা অনুমোদন নেওয়ার বিধান আছে। এসব নিয়ম মানা না হলে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণসহ গ্রেফতার পূর্বক জেলে পাঠানোর বিধান রয়েছে বলে জানান তিনি। ওসি বলেন মহেশখালীর এমন বিষয় আমলে এনে নাগরিক স্বার্থের কথা চিন্তা করে মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে মহেশখালীতে মাইক সার্ভিসের ব্যবসার সাথে যুক্ত সকাল ব্যবসায়ীকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তিনি বলেন -থানা পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে পাশকাটিয়ে কেউ বেপরোয়া মাইকের ব্যবহার করতে চাইলে তাকে কঠোর মূল্য দিতে হবে। সূত্র জানায় -গত কয়েক বছর ধরে মহেশখালীতে মাইকে বেপরোয়া ব্যবহার বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশের নামে অপ্রয়োজনীয় ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে মাইক। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে নানা অখ্যাত ডাক্তার আসার কথা বলে অহরহ মাইকিং করা হয়। প্রতিনিয়ত এমন তৎপরতায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিল দ্বীপাঞ্চলের মানুষ। গতকাল দিনের মধ্যভাগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পুলিশের এমন উদ্যোগের কথা প্রচার হলে বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে বেশ আশার সৃষ্টি করেছে। মহেশখালীর বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষকে এমন উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়ে ফেজবুকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া করতে দেখাগেছে। তবে অনেকের শঙ্কা এই উদ্যোগটি শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ পাবে কিনা -এ নিয়ে। জানাগেছে -দুনিয়ার সভ্য সমাজে এমন শব্দদূষণের বিরুদ্ধে নাগরিকগণ সক্রিয় থাকে। এ নিয়ে রয়েছে আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসও। বিভিন্ন স্থানে আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ভাবে দমন করা হয় এমনসব শব্দদূষণ। বাংলাদেশে রয়েছে এ নিয়ে আইনের নির্দেশনা। দেশে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের আওতায় গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় -শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০১৬ শিরোনামে গেজেট আকারে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করেন। বিধিমালায় এর বিভিন্নদিক স্পষ্ট করা হয়েছে। আইনের আওতায় এ নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিধান রয়েছে বলে সূত্রে প্রকাশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে -শব্দদূষণের ফলে মানুষের শ্রবণশক্তি সাময়িক বা স্থায়ী ভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।