Advertisement


মাতারবাড়ির শ্রমিক আন্দোলনের পোস্টমর্টেমঃ কেনো আন্দোলন হচ্ছে? ::

আ ন ম হাসান, মহেশখালীর সব খবর ।।
মহেশখালীর মাতারবাড়িতে দেশের সর্ববৃহত প্রকল্প তাপ ভিত্তিক কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে স্থানীয় শ্রমিকদের ছাটাই করা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ৷ ঘনঘন শ্রমিকদের আন্দোলন, মানববন্ধন করা নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ৷ দৈনন্দিন কাজের অগ্রগতিতেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে ৷

নিয়মিত শ্রমিক আন্দোলন শ্রমিক ছাটাই নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়াতে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন ও প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল ৷ পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়াতে বেকায়দায় রয়েছে বাকী স্থানীয় শ্রমিক সহ দেশের অন্যান্য স্থান হতে আসা শ্রমিকরা ৷
কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের শুরুতে স্থানীয় শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দরা কমিটমেন্ট দিলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছেনা বলে স্থানীয় শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে ৷

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কর্তৃক স্থানীয় শ্রমিকদের ছাটাই, বহিরাগত শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ও অন্তর্ভুক্ত করাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেৃ ৷ যা বর্তমানে নিয়মিত আন্দোলনে রুপ নিয়েছে বলে জানা যায় ৷ সাধারণ শ্রমিকদের আন্দোলনকে ঘিরে শুরু থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে উপজেলা শ্রমিকলীগ নেতা স্থানীয় বাসিন্দা  মুসা কলিমউল্লাহ ৷ স্থানীয় শ্রমিকদের পাশে থেকে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার কারণে মুসা সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করেন, পাশাপাশি  প্রশংসিত ও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন ৷

অপরদিকে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে স্থানীয় আর কোন রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিক নেতাদের অংশগ্রহণ না করাতে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ৷ অনেকেই এই শ্রমিক আন্দোলনকে ব্যাক্তিগত স্বার্থের আন্দোলন বলে মন্তব্য করেন ৷ শ্রমিক নেতা মুসার সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়াতে  স্থানীয় রাজনীতির স্বার্থসিদ্ধির বাস্তবায়ন বলে মনে করেন তারা ৷ তাছাড়া মাতারবাড়ীতে স্থানীয়ভাবে কোন শ্রমিক ইউনিয়ন বা সংগঠন না থাকাতে আন্দোলনকে ঘিরে প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত ৷

শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, মাতরবাড়ীতে বিভিন্ন কোম্পানীর আওতায় স্থানীয় ও বিভিন্ন অঞ্চলের মিলে প্রায় সাড়ে চার হাজারের মতো শ্রমিক দৈনিক মজুরি হারে কাজ করে আসছে ৷
বর্তমানে লকডাউনের কারনে আনুমানিক হাজার দেড়েক মতো শ্রমিক কাজে অনুপস্থিত রয়েছে ৷ প্রকল্পের বিভিন্ন কোম্পানীতে স্থানীয় নেতারা কমিশন ভিত্তিক  শ্রমিক সাপ্লাইয় দিয়ে থাকেন ৷
শ্রমিক সাপ্লাইয়ের কাজে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ, আওয়ামীলীগ নেতা জি এম ছমি উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কাদের, শ্রমিকলীগ নেতা মুসা কলিম উল্লাহ সহ অনেকের নাম উঠে আসে ৷ এদের প্রত্যেকের নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক রয়েছে বলে জানা যায় ৷

অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, নিজ আত্মীয় স্বজনদের শ্রমিক বানিয়ে মুসার আন্ডারে প্রায় ৭০জনের মতো সাধারণ শ্রমিক রয়েছে ৷ তাদেরকে কাজে অন্তর্ভুক্ত করতে বিভিন্ন কোম্পানীর কাছে উপজেলা শ্রমিকলীগের সহ সভাপতি পরিচয়ে কোটেশন দিয়ে থাকেন ৷ তার চাহিদামাফিক শ্রমিকদের কাজে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে মানববন্ধন সহ শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করে তাদেরকে চাপে ফেলতে বাধ্য করেন ৷ বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করাকে পুঁজি করে মুসা তার কার্যসিদ্ধি করে থাকে, এবং কোম্পানীগুলো তাদের মান রক্ষার্থে মুসার চাহিদা মিটাতে চেষ্টা করে থাকেন ৷ এর ব্যাতিক্রম হলেই আন্দোলন মানববন্ধনের ডাক দিয়ে থাকেন ৷ অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মুসা তার শ্রমিক সাপ্লাইয়ের বিপরীতে প্রতিজন হতে নিয়মিত কমিশন নিয়ে থাকে ৷ কমিশন বানিজ্য টিকিয়ে রাখতে শ্রমিকদের আপনজন বলে নিজেকে বারবার সামনে নিয়ে আসছে ৷

স্থানীয় শ্রমিকদের আন্দোলনে ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের অংশগ্রহণ বা তাদের কোন ভুমিকা না থাকাতে বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে ৷ এ প্রসংগে ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি নুরুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শ্রমিকলীগ সবসময় অগ্রণী ভুমিকা পালন করে আসছে ৷ কিন্তু কারো ব্যাক্তিগত আন্দোলনে শ্রমিকলীগ কেনো নিজেদের জড়াবে ৷ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা শ্রমিকদের মাঝে ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের কোন কর্মী নেই ৷ আমাদের কোন কর্মী আক্রান্ত বা অন্যায়ের শিকার হলে আমরা অবশ্যই এগিয়ে আসবো ৷ তাছাড়া স্থানীয় শ্রমিক বলতে আমরা পুরো মহেশখালী তথা জেলাকেই বুঝি ৷

স্থানীয় শ্রমিকদের ছাটাই করা হলে মানববন্ধন, আন্দোলন কেনো উপজেলা জেলা সদরে বা বদরখালী ব্রীজের ঐখানে করা হয়না, বারবার কেনো প্রকল্পের স্থানে করা হয় বলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন ৷
মুসা কলিমুল্লার অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মাতারবাড়ীতে শ্রমিকলীগের কমিটি আছে ৷ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ইউনিয়ন কমিটি কাজ করবে ৷ আমরা ব্যার্থ হলে উপজেলা জেলা কমিটির সহযোগীতা চাইব, এবং এটাই সিস্টেম ৷ কিন্তু মুসা উপজেলা কমিটির নেতা হয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বারবার নিজেকে উপস্থাপন করাটা অনধিকার চর্চা বলে মন্তব্য করেন ৷

শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার আলমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার মতো কোন কাজে শ্রমিকলীগের সম্পৃক্ততা নেই ৷ মাতারবাড়ীতে সাধারণ শ্রমিকদের আন্দোলনের কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেলেও শ্রমিকলীগের সাথে কোন ধরনের আলোচনা ও অবহিত করা হয়নি ৷ এতে শ্রমিকলীগকে জড়ানোটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ৷ মুসা কলিমুল্লাহর অংশগ্রহণ করাতে শ্রমিকলীগ কি নিজেদের দায় এড়াতে পারবে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কারও ব্যাক্তিগত কাজে শ্রমিকলীগ হস্তক্ষেপ করেনা ৷ তবে ব্যাক্তিগত কাজে যদি কেউ সংগঠনের নাম পদ পদবী ব্যাবহার করে সংগঠনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক নিয়মে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে ৷ মুসা কলিমুল্লাহ নিজেকে উপজেলা শ্রমিকলীগের সহ সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে পরিচয় দিয়ে আসলেও সাংগঠনিকভাবে তিনি উপজেলা শ্রমিকলীগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা যায় ৷