Advertisement


মহেশখালীতে গণধর্ষণের ঘটনা গোপন করার চেষ্টা ছিল


মাহবুব রোকন।। কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, ওই ছাত্রীর কথিত প্রেমিক রাতের আধারে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে পাশের প্রেমিক ও তার বন্ধুরা মিলে ধানক্ষেতে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ওই কিশোরীকে। এ ঘটনার ভিড়িও ধারণ করে তা ফেসবুকে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কিশোরীর পরিবারের কাছ থকে চাঁদা দাবি করা হয়। পরে স্থানীয়রা এক ধর্ষককে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন। এদিকে ধর্ষকদের হয়ে খবরটি ধামাচাপা দিতে একটি মহল তৎপর থাকায় একটু বিলম্বে খবরটি জানাজানি হয়।

মহেশখালী থানা পুলিশ, স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও এলাকার একাধিক সূত্র জানায় -উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের গুলগুলিয়া পাড়া এলাকায় জনৈক আলী আহমদের পুত্র নুরুল হামিদ পার্শ্ববর্তী এলাকায় নবম শ্রেণী পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রীর সাথে গত কয়েক মাস আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এ সম্পর্কের সূত্র ধরে ১৩ অক্টোবর মধ্যরাতে ওই কিশোরীর সাথে জরুরি কথা আছে বলে কিশোরীকে ফোন করে ঘর থেকে বের করে। পরে তাকে পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেতে নিয়ে গিয়ে কথিত প্রেমিক ও তার দুই বন্ধু মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষকরা এ সময় বিষয়টি তাদের মোবাইল ফোনে ভিড়িও ধারণ করে। পরে মেয়েটি বাড়িতে ফিরে অভিভাবকদের বিষয়টি জানায়। মেয়েটি বাড়িতে ফেরার পরপরই ধর্ষকরা মেয়ের অভিভাবকদের ফোন করে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করতে থাকে। দাবির টাকা না দিলে তারা ধর্ষণের এ ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। পরে বিষয়টি পাড়ার লোকজন জানতে পেরে দাবির টাকা দেওয়ার কথা বলে তাদেরকে ডেকে আনে। এ সময় কথিত প্রেমিক নুরুল হাকিম এর এক বন্ধু ও ধর্ষক স্থানীয় নাবাব আলী মিস্ত্রির পুত্র মোহাম্মদ এবাদ উল্লাহকে আটক করে রাখে স্থানীয়রা। একই সময় ওই এলাকার মোহাম্মদ আলীর পুত্র অপর ধর্ষক খাইরুল আমিনকেও আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে স্থানীয় প্রভাবশালী আকতার কামাল এর পুত্র আশরাফুল ইসলাম রাশেল প্রভাবখাটিয়ে খাইরুল আমিনকে জনতার হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়। পরে ১২ অক্টোবর ভোরে আটক ধর্ষক এবাদ উল্লাহকে জনতা মহেশখালী থানায় সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় ৩ ধর্ষককে আসামি করে ধর্ষিতার মা বাদি হয়ে মহেশখালী থানায় মামলা করেছেন।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইরফান উদ্দিন জানান -রাতে ধর্ষিতা ও তার পরিবারের মুখ থেকে এমন ঘটনার বিবরণ শোনার পর দাবিকৃত চাঁদার টাকা দেওয়ার কথা বলে ধর্ষকদের কৌশলে ডেকে আনা হয়। এ সময় দুই ধর্ষককে আটক করা গেলেও পরে একজনকে প্রভাবশালীরা জনতার হাত থেকে কেড়ে নেয়। তিনি জানান -ধর্ষক এবাদ উল্লাহকে তিনি নিজেই আটক করেছেন, এ সময় ধর্ষকের চুরির আঘাতে তিনি সামান্য আহত হন বলেও জানান।

মহেশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ইমরানুল কবির ঘটনার অনুরূপ বিবরণ দিয়ে জানান -এ গণধর্ষনের ঘটনায় ধর্ষিতার মা বাদি হয়ে কথিত প্রেমিকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন। ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করে আটক ধর্ষক এবাদ উল্লাহকে আদালতের মাধ্যেমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন তিনি নিজেই।

এদিকে গণধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঘটনার পর থেকে একটি মহল নানা চেষ্টা চালিয়ে আসছিল -ফলে ঘটনার দীর্ঘ সময় পর পর্যন্ত খবরটি প্রকাশের বাইরে ছিল। সাংবাদিকরা যাতে খবরটি জানতে না পারে -তার জন্য ধর্ষকদের পক্ষ থেকে চেষ্টা তদবিরের অভাব ছিল না। একটি পক্ষ বিষয়টি স্থানীয় ভাবে আপসের চেষ্টাও চালায় বলে সূত্রে প্রকাশ। এতো কিছুর পরেও কেন তথ্যটি গোপন করতে চাওয়া হয়েছে -তা জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইরফান জানান -মূলতঃ লোকজন বিষয়টি আপস করবে বলে তার কাছে এসেছিল।