Advertisement


বিলুপ্তির পথে আমাদের কুহেলিয়া নদী


রকিয়ত উল্লাহ।।
মহেশখালীর উপজেলায় কালারমার ছড়া ঘেষে মাতারবাড়ী-ধলঘাটায়-মাঝখানে অবস্থিত কোহেলিয়া নদী। আদি কাল থেকে যুগ যুগ বছর ধরে জোয়ার-ভাটায় আপন গতিতে ভরা যৌবনে প্রবাহিত হত কোহেলিয়া নদীর স্রোত। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে কক্সবাজারের মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী  শতশত বছরের পুরানো কোহেলিয়া নদী হারিয়ে যাওয়ার পথে। মাতারবাড়ীতে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মাতারবাড়ীর দক্ষিণে ১৪’শ ১৪ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে বর্তমানে সেখানে মাটি ভরাট করে প্রকল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। আর সেসব প্রকল্পের বিভিন্ন বর্জ্য ও পলি মাটি গুলো পাইপের মাধ্যমে সরাসরি কোহেলিয়া নদীর উপর ফেলায় দিন দিন ভরাট হচ্ছে নদীটি । ফলে ঐ নদীর উপর চলাচল কারী ইঞ্জিনচালিত লবণের বোট ও বিভিন্ন ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এদিকে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পলি মাটি নদীর পানির সাথে মিশে গিয়ে বর্তমানে নদীর পানি ঘোলাটে এবং দূষিত হওয়ায় প্রায় অর্ধশত চিংড়ি মাছের প্রজেক্টের মাছ মারা গেছে ।  এ কারনে চলতি চিংড়ি প্রজেক্টের ইজারাদাররা কয়েক’শ কোটি টাকা লোকসান হতে পারে বলে জানান চিংড়ি ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ ,বাংলাদেশে ছোট বড় প্রায় ২৫০ টিরও বেশী নদ-নদী রয়েছে, আর এ নদীর উপর লাখ লাখ মানুষ তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু এ নদী দিন দিন ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় জেলেদের জালে আগের মত তেমন আর ধরা পড়ছেনা সামুদ্রিক মাছ । ফলে বেকারত্ব ও অনহারে দিন যাপন করতেছে শতশত জেলে পরিবার। তেমনি মাতারবাড়ীর রাজঘাট এলাকার জেলে আব্দুল হামিদ বলেন কোহেলিয়া নদীতে প্রায় ৩০বছর মাছ ধরে সংসার চালিয়েছি।এখন কোহেলিয়া নদী ভরাট হওয়ার কারণে মাছ ধরা পড়ে না তাই এখন বেকার হয়ে  সংসার চালানোর জন্য লেবারের কাজ করি মাঝে মধ্যে।

নদী ভরাটের কারনে ভাটার সময় ছাড়াও পূর্ণ জোয়ারেও এখন বড় ও মাঝারি লবন বোট চলাচল করতে পারছে না ।  আগে এ নদীতে দেখা যেত পাঁচ হাজার মণ ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন লবনের বোট চলাচল করলেও এখন সে বড় ও মাঝারি কোন ইঞ্জিন জাতীয় নৌ-যান চলাচল করতে পারছে না ।  শুধু তাই নয় এ নদীর উপর নির্ভরশীল ভিবিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষের একমাত্র অায়ের উৎস হারিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল । 

এদিকে নদীতে জেগে ওঠা চর গুলো একের পর এক খন্ড খন্ড ভাবে দখলে করে নিচ্ছে প্রভাবশালী ভূমি দস্যুরা ।  তারা প্রথমে ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে মাছের ঘর তৈরি করে নদীর চর অবৈধ ভাবে দখল করে নিচ্ছে , ফলে দিন দিন ছোট হয়ে অাসছে কোহেলিয়া নদী ।  এভাবে একের পর এক ভূমি দস্যুরা নদীর চর দখলে নিলেও এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের । 

কোহেলিয়া নদী রক্ষা কমিটির আহবায়ক ও দৈনিক ইত্তেফাকের মহেশখালী প্রতিনিধি  সাংবাদিক আবুল বশর পারভেজ বলেন

মাতারবাড়ীর বলেন কোহেলিয়া নদীটি যেভাবে দ্রুত ভরাট হচ্ছে  তা যদি  সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এর বিহিত ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই হারিয়ে যাবে এ নদীটি ।  তাই উক্ত নদীটি দ ড্রেসিং এর ব্যবস্থা করে জেলেদের মাছ ধরার ব্যাবস্থা সহ পণ্যবাহী ট্রলার চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের জোর দাবী জানাচ্ছি ।  বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা’র) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন যে কোন কারনে কোহেলিয়া নদী মারা গেলে এখান কার শত শত জেলে এবং লবন চাষী ও ব্যবসায়ীর জীবন হুমকির মূখে পড়বে ।  কাজেই প্রকৃতি এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা উল্লেখ করে তিনি বলেন , কোহেলিয়া নদীর আশে পাশে চলমান অপরিকল্পিত ভরাট ও দখল প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করাসহ যতাযত ভাবে কোহেলিয়া নদীর সিমানা নির্ধারণ করে তা উদ্ধার করা উচিৎ।