Advertisement


চরম সংকটের দিন যাচ্ছে মহেশখালীর লবণ চাষিদের

সৈয়দুল কাদের || মাঠে উৎপাদিত লবণের দাম নেই, আশানুরূপ লবণ উৎপাদন হলেও চরম অর্থ সংকটে লবণ চাষীরা। মাঠ ভর্তি লবণ থাকলেও ক্রয়-বিক্রয় নেই মৌসুমের শুরু থেকেই। ফলে খরচ যোগাতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে চাষীদের। লবণের দাম কম থাকায় বিক্রয় করতে চাষীদের অনিহার পাশাপাশি ক্রয় করতেও অনিহা ব্যবসায়িদের।

মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা গ্রামের লবণ চাষী নুরুল কবির জানিয়েছেন, প্রায় ৬ একর জামিতে তিনি লবণ চাষ করছেন। ইতোমধ্যে প্রায় দুই হাজার মণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। দাম কম থাকায় এককেজি লবণও বিক্রি করতে পারেননি।

প্রতিদিন ৮ জন শ্রমিক কাজ করছেন লবণ মাঠে। তাদের প্রতিদিনের খরচ ও বেতন দিতে হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। এতে প্রতি মাসেই খরচ পড়ছে প্রায় দুলাখ টাকা। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে চাষ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে জমির ইজারা মুল্য ছাড়া পলিথিন ও বেতন বাবদ খরচ পড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা। লবণের ফাড়িয়াদের কাছ থেকে নিয়ে এসব টাকা খরচ করেছি। এখন তারাও টাকা দিচ্ছে না, লবণও বিক্রি হচ্ছে না। এতে চাষ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

চকরিয়ার বদরখালীর ৩ নং ঘোনার লবণ চাষী বেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ফাড়িয়া খরচ বাদ দিয়ে মাঠ পর্যায়ে চাষীরা লবণের দাম পাচ্ছেন প্রতি মণে মাত্র ১৬০-৬৫ টাকা। এই দরে লবণ বিক্রি করলে পুঁজির ৩০ ভাগ লোকসান যাবে। লবণের দাম বৃদ্ধি পাবে এমন আশা নিয়ে চাষ শুরু করলেও দাম বাড়ার কোন সুযোগ দেখছি না। এখন চাষ করেই আমরা বিপাকে পড়েছি। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী মৌসুমে আর চাষী পাওয়া যাবে না। প্রজেক্টে লবণ চাষের চাইতে চিংড়ি চাষ অনেক লাভজনক হবে।

বড় মহেশখালীর সাবেক মেম্বার মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, প্রতিটি লবণ চাষী এখন অর্থ সংকটের মধ্যে রয়েছে। কোন আয় নেই। লবণ উৎপাদন করে আমরা বিপাকে পড়েছি। চাষীদের সরকারি ভাবে সহযোগীতা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। এছাড়া সরকার মাঠ পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে লবণ ক্রয় না করলে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হবে না। চাষীরা আর্থিকভাবে সমস্যায় পড়ায় ব্যবসায়িরাও বিপাকে পড়েছেন। তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

এদিকে বিসিক লবণ শিল্পকে রক্ষা করতে ও দাম বাড়াতে নানামূখী তৎপরতা চালালেও কেন বাড়ছেনা তা নিয়ে চাষীদের মাঝে নানা প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে।

মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অবহিত করার পরও দাম না বাড়ায় অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছেন লবণ চাষীরা।

বাংলাদেশ লবণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী জানিয়েছেন, লবণ শিল্পকে বাঁচাতে লবণ বোর্ড স্থাপনের বিকল্প নেই। লবণের দাম নিশ্চিত করতে সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বিভিন্ন স্থানে অবহিত করছেন। আরো নেতৃবৃন্দ যারা আছেন সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে লবণ চাষে নিরুৎসাহিত হবে চাষীরা।

কক্সবাজার বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, লবণের ন্যায্য দাম নিয়ে আমরা এখনো আশাবাদি। সরকার কোনভাবেই লবণ আমদানি করার পক্ষে নয়। তবে কৌশলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অপ্রয়োজনীয় সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করে থাকে। বর্তমানে যে পরিমাণ লবণ উদ্ধৃত রয়েছে এবং উৎপাদিত হচ্ছে এতে লবণ ঘাটতির কোন আশংকা নেই।