Advertisement


মাতারবাড়ী ইউপি নির্বাচন নিয়ে কেন এত আগ্রহ: নেপথ্যে কি?




এ.এম হোবাইব সজীব,

আগামী ১১ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১১ এপ্রিল মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

জানাযায়, উন্নয়নের পাশাপাশি সেবার ভান্ডার ইউনিয়ন পরিষদ। নাগরিক জীবনের সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায়। মেগা প্রকল্পের অধ্যুষিত কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী দেশি-বিদেশি লোকজনের অবস্থানের কারণে অনেক মানুষের কাছে অত্র এলাকা যেন মধ্যপ্রাচ্য। প্রকল্পতে চাকরি যারা করেন তাদের বেতন মধ্যপ্রাচ্যের চেয়েও কম না।  প্রকল্পের কর্মকর্তা কর্মচারিদের সাথে চেয়ারম্যানদের থাকে সখ্যতা। তাছাড়া এখানে প্রকল্পে বিভিন্ন ব্যবসা করে অনেক চিটকে চুর থেকে  হয়েছেন কোটিপতি। ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে অনেকের। এ কারণে এখানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নব্য কোটিপতি টাকাওয়ালাদের আগ্রহ বাড়ছে। মানুষের সেবার মান উন্নত করতে অন্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর মতো এখন প্রতিযোগিতায় রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। পাঁচ বছর পর এ প্রতিযোগিতা হয়।

এই নির্বাচনকে ঘিরে মাতারবাড়ী  সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন মুখর। মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীরা হিসাব-নিকাশ করতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা এবার রক্তচুষা, জলদস্যু ও নব্য কোটিপতিসহ যাদের দাপটে সাধারণ জনগণ কাছে যেতে পারবেনা তাঁদেরককে বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছেন। নৌকার মাঝি যেই হোক নিরব বিপ্লব ঘটাবেন বলছেন স্থানিয় একাধিক সূত্রে।

বৈধ আয়ের পথ ছাড়াই রাতারাতি বিত্তশালী বনে যাওয়া কয়েক জন মানুষ মাতারবাড়ীর জন্য বড় আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বেপরোয়া কর্মকান্ড দেশ ও সমাজের সর্বস্তরে অসম পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, ঘটাচ্ছে সীমাহীন বিশৃঙ্খলা। সমাজে কোন্দল-সংঘাত, জবর দখলদারি, একচ্ছত্র আধিপত্যের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাসহ লাগামহীন অপরাধ-অপকর্মের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা। তাদেরই একটি বড় অংশ দলীয় নেতৃত্ব দখল করছে, ছিনিয়ে নিচ্ছে জনপ্রতিনিধির চেয়ার। শুরু হয়েছে শাসন-শোষণের মাধ্যমে রাতারাতি সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা। ফলে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, তদবিরবাজি থেকে শুরু করে সব ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে বাধাহীনভাবে।

জানা যায়, সর্বশেষ এক দশকে মাদক, টেন্ডার, দলীয় প্রভাব, দখলবাজি, দালালি, প্রতারণামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমেই অন্তত কয়েক ডজন কোটিপতির জন্ম হয়েছে পুরো মাতারবাড়ী। এর বেশির ভাগেরই বৈধ আয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, উৎসহীন বেশুমার টাকার গরমে তারা সমাজ, দল ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে নানা বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে নিজেদের ক্ষমতা জানান দেয়। নির্বাচনকে ঘিরে ভূঁইফোড় গণমাধ্যমের কয়েকজন কথিত সংবাদকর্মীকে তাঁদের কব্জায় নিয়ে নিচে তাঁদের পক্ষ দুই এক লাইন লিখতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। সর্বত্রই অসম লড়াই সৃষ্টি করে

অনুসন্ধানসূত্রে জানা যায়, হঠাৎ বড়লোক বা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার বৈধ কোনো উপায় নেই বাংলাদেশে। ‘যদি লাইগ্যা যায়’ ধরনের লটারিব্যবস্থাও নেই। আছে রাতারাতি অলৌকিক কায়দায় আলাদিনের আশ্চর্য জাদুর প্রদীপ লাভ, ‘ম্যাগনেটিক পিলার’ কিংবা তক্ষক লেনদেনের বাণিজ্য, ঠিকাদারি ব্যবসা চালানো, ইয়াবা বাণিজ্যে অংশগ্রহণ আর তাদের সর্বোত্তম পথ হিসেবে রয়েছে তদবিরবাজির দাপুটে বাণিজ্য। সর্বজনীন পথ হলো ঠিকাদারি বাণিজ্য : অলৌকিকতার বাইরে রাতারাতি অগাধ টাকার মালিক হওয়ার সর্বজনীন পথ একটাই, তা হলো ? ‘ঠিকাদারি বাণিজ্য’। ক্ষমতাসীন দলের লেবাস লাগিয়ে নানা ধূর্ততা, কূটকৌশল, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে নয় ছয় করে নিম্মমানের সামগ্রী সরবরাহ করে 

আর বহুমুখী প্রতারণাকে পুঁজি করে এ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে একটি মহল। ঠিকাদাররা সরকারের নানা সেক্টরে কাজ করলেও নেই জবাবদিহি, হয় না কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ, যেমন খুশি তেমনভাবেই লুটপাট চালানো যায়। যার জলজ্যান্ত প্রমাণ হঠাৎ ফুলেফেঁপে প্রতাপশালী হওয়াদের শোড়াউন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের আগমনকে ঘিরে প্রত্যক্ষ করল মাতারবাড়ীবাসী।

নানা কূটকৌশল আর নেটওয়ার্ক মেইনটেন করে নিমেষেই কোটিপতি হয়ে ওঠার আরেকটি নিশ্চিত পথ হলো ইয়াবা বাণিজ্য। 


স্থানিয় খোকন  নামের এক ভোটার জানান, আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা কোটি কোটি টাকা খরচ করার মতো ক্ষমতা রাখে। কারণ অনেকে মনে করছেন চেয়ারম্যান হতে পারলে লুটপাট করে তার চেয়ে চার গুণ টাকা আয় করতে পারবেন। 

সচেতন ভোটার  দিদারুল ইসলাম বলেন, এবার মাতারবাড়ী  ইউনিয়নের নব্য কোটিপতিরা চেয়ারম্যান হতে তৎপরতা শুরু করেছেন। আমরা সচেতন ভোটাররা এবার যোগ্য প্রার্থী দেখে চেয়ারম্যান  নির্বাচিত করবো। আগামী মাসের ১১ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এখন থেকে মাতারবাড়ীকে নির্বাচনী হাওয়ায় গোটা নির্বাচনী এলাকা যেন দোল খাচ্ছে।

ভোটারদের বিভিন্ন ধরণের আবেগ-অনুভূতির মধ্যে হিসাব নিকাশ ও ভোটারদের বাগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি আওয়ামীলীগ প্রার্থী এগিয়ে আছে। তবে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীর তৎপরতাও দেখা মিলেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দোয়া চেয়ে প্রচারণায়ও মনোযোগী প্রার্থীরা। তবে সোনার হরিণ নৌকা কে পাচ্ছেন সে দিকে থাকিয়ে রয়েছেন অনেকে। তার পরেও দেখা যাক কে হচ্ছেন ভাগ্যবান নৌকার মাঝি। ###