Advertisement


মিছিল-হামলায় মহেশখালীতে ঘটনাবহুল রাত


মাহবুব রোকন।।
হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক ইস্যুতে মহেশখালীতে গভীর রাতে হেফাজতের ব্যানারে হঠাৎ দফায় দফায় লাঠি মিছিল হয়েছে, মিছিল থেকে বিভিস্থানে ব্যাপক হামলা ও ভাংচুর করা হয়। কালারমার ছড়ায় বৌদ্ধ মন্দিরে আক্রমণের চেষ্টা করা হয়েছে, বড় মহেশখালীতে আওয়ামী লীগ অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও থানা এলাকায় হামলা হয়েছে। কালারমার ছড়ায় যুবলীগ নেতা বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর হয়েছে, পুলিশকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে, আহত হয়েছে একাধিক পুলিশ সদস্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি করেছে।

এ সব ঘটনায় রাতেই মহেশখালী থানায় পুলিশ বাদি হয়ে প্রায় ৩০০জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তারেক রহমান জুয়েলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার বিষয়ে হার্ডলাইনে যাচ্ছে প্রশাসন।
রাতেই মহেশখালী এসেছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। সংগ্রহ করা হচ্ছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ববৃন্দ আজ মহেশখালী আসবেন।

হেফাজতের ব্যানারে মূলতঃ জামায়াত-বিএনপির লোকজন এ তণ্ডব চালিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবি। -খবর একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের।
পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায় -হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ‘অবরুদ্ধ’ হয়েছেন— এমন খবর মহেশখালী এসে পৌঁছুলে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো মহেশখালীর ভিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ব্যানারে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। গ্রাম এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে বাজার এলাকায় জড়ো হয়। রাত ১২টার কিছু সময় পর একটি বিশাল লাঠি মিছিল বড় মহেশখালী থেকে উপজেলা সদরে আসে, মিছিলটি পৌর শহরের গোরকঘাটা বাজার থেকে সড়কের দু'পাশে ভাঙচুর চালিয়ে উপজেলা পরিষদ এলাকায় যায়, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কাছের জানালা ভাঙচুর করে।
এ সময় মূল ফটক বন্ধ পেয়ে সরকারি কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে মিছিলটি মহেশখালী থানার সামনে গিয়ে থানায় ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে স্লোগান দিতে থাকে। ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে ভাঙচুর চালায়। মিছিলটি প্রধান সড়ক ধরে বড় মহেশখালী ফেরার পথে পালপাড়া এলাকায় সড়কের দু'পাশে বিভিন্ন হিন্দু বাড়িতে হামলা করে।
মিছিলকারীরা বড় মহেশখালী বাজারে পৌঁছে বড় মহেশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজ মিয়া বাশির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা করে এবং বড় মহেশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়েই বেশ তাণ্ডব চালায়। তারা কার্যালয়টির দরোজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে আসবাপত্র বাইরে নিয়ে এসে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানায় -এর কিছু সময় আগে মহেশখালীর উত্তর অংশ কালারমার ছড়া এলাকায় একই কায়দায় বিক্ষোভকারীরা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে ওই এলাকায় একটি ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা করার চেষ্টা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশের একাধিক ইউনিট ওই এলাকায় গেলে মিছিলকারীরা দু'দিক থেকে পুলিশকে ঘিরে ফেলে হামলা করে। পুলিশ এ সময় ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওই এলাকায় বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় যুবলীগ নেতা কলিমুল্লাহ হাসান মুন্নার বাড়িতে হামলা, ভাঙচূর ও লোকজনকে পিটিয়ে আহত করে।
প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে -সড়কের দু'পাশে মুজিব বর্ষ ও স্বাধিনতার ৫০ বছর পূতি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফ্যাস্টুন ও বিলবোর্ড রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের হামলার মূল লক্ষ্য ছিলো এ সব ছবি। সূত্র জানিয়েছে -রাত ১টার পর বিক্ষোভকারীরা সরে যায়। এ ঘটনার পরপরই বিভিন্ন স্থানে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়, জোদার করা হয় পুলিশি টহলও। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় উপসনালয়গুলোতে বাড়তি নিরাপত্ত্বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ সময় বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে বড় মহেশখালী থেকে মহেশখালী উপজেলা ছাত্র দলের আহ্বায়ক তারেক রহমান জুয়েলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে এ সব ঘটনায় রাতেই পুলিশ মামলা করেছে। মামলায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০০জনকে আসামি করা হয়। আরও মামলা প্রকৃয়াধিন আছে এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের সনাক্ত করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার পর কক্সবাজার থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মহেশখালী এসেছে।
এ নিয়ে আজ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মহেশখালী আসবেন বলে জানাগেছে।
এ বিষয়ে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাই ঘটনার অনুরূপ বিবরণ দিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করেছে, পুলিশ যে কোনো উপায়েই এমন জঘন্য ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করবে। এ সকল ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের সনাক্ত করে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম জানান -ইতোমধ্যে মহেশখালীতে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়েছে। সমগ্র বিষয়টিকে কঠোর ভাবে দেখছে পুলিশ।
মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন -গভীর রাতে হঠাত্ করে এমন নেক্কারজনক ঘটনা খুবই দুঃখজনক, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ভাবে দেখছে। তিনি সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন।