Advertisement


উত্তর মহেশখালীঃ পক্ষ-বিপক্ষ, নিরপেক্ষ


মুহম্মদ রুহুল আমিন।।

'মহেশখালী' উপজেলা পরবর্তী তন্মধ্যে দ্বিতীয় উপজেলা হইবে কি হইবে না অথবা উপজেলা চাহিব কি চাহিব না, কেন চাহিব আর কেন চাহিব না; এই নিইয়া মহেশখালীর কুয়োর বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বিস্তর আলোচনা চলিতেছে। সাধারণ নাগরিক হিসেবে স্বভাবতই আমার মনেও একই প্রশ্ন উদিত হইয়াছে। বস্তুত এইখানে (মহেশখালী) আরটা উপজেলা 'প্রয়োজন কি না' প্রশ্নে আমার নাই জ্ঞানে হ্যাঁ-সূচক কথাই বলিতে হয়। সামগ্রিক বিবেচনায় দ্বিতীয় উপজেলার প্রাঙ্গিকতা প্রান্তিক-গোষ্ঠীর নাকি অপরিপক্ব নেতার পরিপক্ব ভানের ফর্মূলা, তাহা বিস্তর তর্ক সাপেক্ষ। তবে কোনটা জেলা, কোনটা উপজেলা বা থানা অথবা ইউনিয়ন আর গ্রাম হইবে; তাহা কেবল যুক্তির উপরে নির্ভর করিবে না। এইখানে জনমতের চাহিদা আর সরকারের সদিচ্ছার উপরে সব কিছুই নির্ভরশীল। যুক্তিখণ্ডন আর তর্ক বাদ দিইয়া কেবল একযুক্তির কাছেই সবই ম্লান হইবে, সেইটি হইতেছে জনদাবি। এখন আমাদের এইটাই প্রমাণ করিতে হইবে। কিন্তু  কিভাবে?

সাধারণ স্বীকারোক্তি মতে, আশে-পাশে নতুন উপজেলা গজিয়া উঠিবার পিছনে যৌক্তিকথা না প্রয়োজনীয়তা নাকি কাহারও তদবির ছিল, ইহা তাহাদের বিষয়; যাহারা নতুন উপজেলা পাইয়াছেন। আমরা তাহা আমল না করিলেও চলিবে। তবু্ও দেখা যাইতেছে কক্সবাজারে ঈদগাঁও থানাকে উপজেলা ঘোষণা করিবার পরক্ষণ হইতে মহেশখালীর শাপলাপুর, হোয়ানক, কালারমারছড়া, ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি এই পাঁচ ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে একধরনের অসন্তুষ কিংবা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈয়ার হইয়াছে। সবচাইতে বেশি অসন্তুষ তৈয়ার হইয়াছে মহেশখালীর দক্ষিণ প্রান্তের মানুষের মধ্যে। ইহার কারণ মোটেও বুঝি নাই। উত্তর প্রান্তের মানুষের দাবি হইতেছে, দীর্ঘদিন হইতে "উত্তর মহেশখালী" আলাদা উপজেলা করিবার দাবি উঠিয়াছে। কিন্তু তাহা বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই অসন্তুষ রটিতেছে। কেহ কেহ এইটিকে আলাদা ষড়যন্ত্র বলিয়া প্রচার চালাইয়াছেন। আবার কেহ বলিয়াছেন, ইহা আমাদের প্রাণের দাবি। এইসব পক্ষে-বিপক্ষে মত  মিলিয়া গণতান্ত্রিক মত না হইয়া সহিংসতার রূপ পাইয়াছে। কেননা তাহারা বাঙালি মুসলমানের ধাঁচে অনেকটা মহেশখালীর কুয়োর বুদ্ধিজীবী।

মহেশখালীতে দ্বিতীয়  উপজেলা করিবার যৌক্তিকতা আর পরবর্তী প্রভাব সম্পর্কে একটু আলোচনা করা দরকার পড়িবে। ধারণায় মহেশখালীতে আরটি উপজেলা হইলো। তখন নামকরণ কি হইবে, তাহা নিয়াও বিরাট আন্দোলন পাঁকাইবে। ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই। ইহা ব্যতীত এইখানে একটা সাধারণ সমিতি গজিয়া উঠিলেও  গ্রুপকর্তৃত্ব অনুসরণ করিতেছে । এই প্রভাব দিনদিন প্রসার ঘটিতেছে। শেষমেশ উপজেলা হইলে তাহা নদী বা খালের নিয়ন্ত্রণে চলিয়া যাইবে।

এইবারের ফিরিস্তি  উপজেলার কেন্দ্র কোথায় হইবে। মানিয়া লইলাম তাহা মাতারবাড়িতে স্থাপিত হইয়াছে। এইক্ষণে শাপলাপুরের মানুষের  অবস্থান কি হইবে? শাপলাপুরের দক্ষিণে যাত্রা বাবুরা রহিয়াছেন। তাহারা যাত্রার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া উত্তর-দক্ষিণ হেলিয়া-দুলিয়া সুযোগ বুঝিয়া নৌকায় ঘুমাইয়া থাকিবেন। ইশারায় আন্দোলন চলিবে, কেহ মানিবে, কেহ মানিবে না। তাহারা আন্দোলনে শরিক হইবে না, বরং অজানা লোভে কাতর হইয়া চরম বিরোধীতায় মাতিয়া উঠিবেন। তাহা বৈ মাতারবাড়িতে কেন্দ্র হইলে হোয়ানকের মানুষও বিরোধীতার মাতম ছড়াইবেন। এই সুযোগে মহেশখালীর কর্তা নেতারা উপজেলা না হইবার সুযোগ কাজে লাগাইবেন। কার্যত তাহারা কখনও চাহিবে না মহেশখালী ভাগ হইয়া উত্তর দিক হইতে বহটা উড়াইতে থাকুক, যেমন কি আমরাও চাহিতেছি এইখানে আমরা বহটা উড়াইতে থাকি। বহটা যেই উড়াইক না কেন আমরা সঙ্গীত গাইতে থাকিবো, এই ছাড়া আমাদের পথ থাকিবে না।  প্রকারান্তে উপজেলা হইবার সুযোগ থাকিলেও তাহা অজানা কারণে বন্ধ হইয়া যাইবে। কাজেই সত্যি সত্যি উপজেলা দাবির কণ্ঠে জোর থাকিলে মানুষের আবেগে না খেলিয়া সরাসরি বাস্তবতার পক্ষে জমনত সৃষ্টি করিবার বিকল্প দেখিতেছি না। এই বিকল্প ঘরের কোণে বসিয়া ফেসবুক নির্ভর হওয়া চলিবে না। ইহার আলাদা কাঠামো থাকিবে।

সেইসব কাঠামো পরবর্তীতে বলা হইবে। তাহা ছাড়া রাজনৈতিক সহায়তা ও নির্দিষ্ট বলয়ের বাইরে মাতিয়া উপজেলা বাস্তবায়ন যেই কতটা কষ্টসাধ্য হইবে, সেইটা শুধু গণবুদ্ধিজীবী কেন কুয়োর বুদ্ধিজীবীরাও বুঝিয়া লইবেন কিন্তু স্বীকার করিবেন না। তাহা হইলে মহেশখালীতে কি আরটা উপজেলার প্রয়োজনীয়তা রহিলো না? তাহা অবশ্য রহিয়াছে। কুয়ার বুদ্ধিজীবীর একদল আলাদা উপজেলা করাকে বিরূপভাবে ব্যাখ্যা করিয়াছেন। সেইসব ব্যাখ্যা কি অর্থে ব্যাখ্যা, আমি অন্তত বুঝি নাই। আমার মনে হইয়াছে, তাহা কেবল বিরাম চিহ্ন বিহীন কয়টা বাক্য, যাহার মর্মার্থ শুদ্ধও নহে প্রাসঙ্গিকও নহে।

মহেশখালীর চলমান ইস্যু লইয়া অনেকে গদবাঁধা মন্তব্য করিয়াছেন। কাহারও মন্তব্যে আমার কোনো বিরোধ নাই তবে দুইমত থাকিতে পারে। তাহাদের অনেকে প্রথমে আপত্তি তুলিয়াছেন, মহেশখালীতে 'উত্তর মহেশখালী' আবার কি জিনিস? ইহাতে আমার মনে ধরিয়াছে, মহেশখালীতে "বড় মহেশখালী" রহিয়াছে, ইহাতে কাহারও বিরোধ নাই। ছোট মহেখালী রহিয়াছে, তাহাতেও বিরোধ নাই। বিরোধ কেবল উত্তর মহেশখালীতে।

[ চলমান ]

লেখকঃ মহেশখালীর সন্তান ও শিক্ষক