Advertisement


পথশিশুদের পূঁজি করেই ফান্ডের প্রচেষ্টায় মরিয়া অভি-লুসি সিন্ডিকেট

বিশেষ প্রতিবেদক।। পথশিশুদের পূঁজি করেই  দেশী বিদেশী ফান্ডের প্রচেষ্টায়  কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে  ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর দুই দিন ব্যাপী “ঋতুবতী: প্রাণের প্রবাহিনী” নামের  একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নাম সর্বস্ব  একটি ভুইফোঁড় সংগঠন।  সমাজ সেবা অফিসের অনুমোদন বিহীন সুভাস নামের ওই ভুইফোড় সংগঠনটিতে জড়িত রয়েছে জেলার বাইরে থেকে আগত কয়েকজন মাদকসেবী ও প্রতারক ।  এদের মধ্যে অভি কিম্বেল অন্যতম। স্ত্রী লুসি তৃপ্তি গোমেজের এনজিও’র চাকরির সুবাদে শহরের বাহারছড়ার জসিম উদ্দিনের ফ্লাটে বসবাস করে তারা। প্রতিদিনই যেখানে চলে মাদকের আসর।  বেকার অভি  রাতে মাদকাসক্ত অবস্থায় শহরময় ঘুরে বেড়ায়। সেসময় পথ শিশুদের  খুজে খুজে তাদেরকে গান শোনায়। গানের ফাকে মোবাইলের ভিডিওতে কৌশলে প্রত্যেক শিশুর নাম, পিতার নাম, ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহণ করে। সেখােন থেকে কিছু শিশুদের জুড়ে দেয় গ্যাংস্টার উপাধি। আর তানিয়ে ডকুমেন্টারী  তৈরী করে। পথ শিশুদের সন্ত্রাসী বানিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটিও ভিডিও চিত্র তিনি নানা দপ্তরে ও এনজিওতে পাঠিয়েছেন।

পথশিশুদের  কিশোর গ্যাং অ্যাখা দিয়ে দেশী- বিদেশী দাতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ফান্ডের চেষ্টায় রয়েছে। এই কাজে অভি কিম্বেল অবশ্য একা নন। তার সাথে রয়েছে  মাষ্টারপ্লানার অভি কিম্বেলের স্ত্রী এনজিও’র চাকরীজিবী  লুসি তৃপ্তি গোমেজ। তাঁর সিন্ডিকেটে রয়েছেন জন মাহমুদ, রুবেল, পরান সহ ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট। তারা সবাই ঢাকার বাসিন্দা। তারা  দেশী বিদেশী বিভিন্ন এনজিওতে  কর্মরত। এই সিন্ডিকেটের সাথে স্থানীয় কোন সচেতন তরুণ-তরুনী অথবা স্থানীয় পরিবেশ আন্দোলনের সাথে যুক্ত কোন সংগঠনকে সাথে রাখেনি। এমনই তথ্য জানান নাম প্রকাশে অনিচছুক এক সময় তাদের সাথে যুক্ত থাকা শহরের শিল্প চর্চার সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন স্থানীয় সচেতন যুবক।

তারা আরো জানান, শিল্পি হিসেবে অভি কিম্বেল শুরুর দিকে গ্রহন যোগ্য থাকলেও পরে বুঝা যায় অভি এবং তার ঢাকার সহকর্মীরা মূলত অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শিল্প চর্চাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা পথশিশুদের ব্যবহার করে’ই তাদেরকে গ্যাং স্টার কিশোর গ্যাং অ্যাখা দিয়ে সুপথে ফেরানোর কথা বলে  দাতা সংস্তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিরয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় মেতেছে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শিল্প চর্চার প্রলোভনে  সহযোগিতায় ‘সুভাষ’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে দাতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ফান্ড হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী ১৩-১৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ‘এডভোকেটিং ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, প্রকৃতি ও পুরুষ-নারী এবং চিলড্রেন ওয়ার্কশপ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ নামে গোল টেবিলের আয়োজন করেছে এই সিন্ডিকেট। যেখানে গোল টেবিলে আলোচনার পাশাপাশি অভি কিম্বেলের শিশুদের নিয়ে করা গানের ভিডিও এবং বিভিন্ন কার্যক্রম প্রদর্শিত হবে। মূলত দাতা সংস্থার কাছ থেকে মোটা অংকের ফান্ড নিতে এই গোল টেবিল বৈঠক। অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ফান্ড নেওয়ার খবরও রয়েছে। এই অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকও আমন্ত্রিত অতিথি। ইতিমধ্যেই তারা দাতা সংস্থার দৃষ্টি আর্কষণে সরকারী দপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তরে শিশুদের নিয়ে তাদের তৈরী করা ভিডিও পাঠিয়ে দিয়েছে। তাদের এই প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন হলেই তারা পেতে যাচ্ছে বড় অংকের টাকা। অথচ দুইদিন ব্যাপী এই কর্মসূচি’র ব্যাপারে কিছুই জানেননা কক্সবাজারে পরিবেশবাদী সংগঠন ও শহরের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন সহ সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম জানান, পর্যটন শিল্প বিকাশের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে বাপা সহ ১০-১৫ টি সংগঠন রয়েছে এই আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এনজিও মার্কা কথিত কিছু পরিবেশ সংগঠন সভা-সেমিনারের বাহানায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুগভীর পরিকল্পনায় লিপ্ত। এমনকি তারা ঢাকা থেকে কিছু নাম সর্বস্ব সংগঠনকে কক্সবাজারের পরিবেশ রক্ষায় ভাড়াটে হিসেবে নিয়ে আসছে। অথচ কক্সবাজারের পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষায় তাদের বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই।


বিষয়টির ব্যাপারে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কল্যাণমূলক সংগঠন ‘নতুন জীবন’ এর সাধারণ সম্পাদক সুমন শর্মা জানান, কোমলমতি পথশিশুদের নিয়ে যারা বানিজ্যে লিপ্ত হয়েছে তারা আদৌ সুস্থ্য মানুষ বলে মনে হয়না। যেখানে এই শিশুদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত হয়নি সেখানে শিশুদের দিয়ে গান করিয়ে বিশ^কে দেখিয়ে দাতা সংস্থার কাছ থেকে ফান্ডের চেষ্টায় রয়েছে। এসব মানুষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে। নিয়মিত মাদকসেবি অভি কিম্বেল। তার সাথে নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেট এবং কক্সবাজারের একজন সাবেক ডিবি পুলিশের কর্মকর্তার সাথে তার ভাল সর্ম্পক রয়েছে প্রচারনা চালায়। অভি কিম্বেল খুবই ধুরন্ধর। তার পকেটেই সার্বক্ষনিক থাকে গাঁজা সহ বিভিন্ন মাদক। চলাচল করেন  লাইসেন্সবিহীন শব্দ দূষণকারী মোটরসাইকেল নিয়ে।  পুলিশ ধরলে কখনো গীতিকার কখনো মন্ত্রীর আত্নীয় কখনো ম্যাজিষ্ট্রেটের বন্ধু পরিচয়ে পার পায়। এসব বিষয় বুঝতে পেরে অভি কিম্বেলের কাছ থেকে সরে পড়েন শিল্প চর্চার সাথে জড়িত স্থানীয় সচেতন কয়েকজন যুবক। যদিও প্রভাবশালী দুই-একজন অভি কিম্বেলের সাথে রয়েছে ফান্ডের লোভে। যাদের ব্যবহার করেই অভি কিম্বেলরা এই শহরে ঠিকে আছে।

এছাড়া সম্প্রতি অভি কিম্বেল শিশুদের ভিডিও করার মাধ্যমে উদ্দেশ্য হাসিল হওয়ার পরে শিশুদের  মারধর করেছে।  শিশুদের অনেককে কিশোর গ্যাং হিসেবে প্রকাশ করার চেষ্টা করছে তার ধারণকৃত ভিডিওতে। জুবাইর নামে এক শিশুকে জুবাইয়ের ভাই গ্যাং হিসেবে প্রচার করেছে তার ধারণকৃত ভিডিওতে। এছাড়া রায়হান ও আতিক নামে দুই শিশুর গায়ে কিশোর গ্যাং এর অপবাদ দিয়ে মারধর করেছে। এমনও খবর রয়েছে কিশোর গ্যাংকে কেন্দ্র করে আরেকটি প্রজেক্টে দাড় করানোর জন্য’ই অভি’র স্ত্রী লুসি এই পরিকল্পনা করছে। যেটি শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

এ ব্যাপারে অভি কিম্বেল জানান, দুইদিন ব্যাপি অনুষ্ঠানের আয়োজক তিনি নন। জনৈক রানা এটি আয়োজন করেছে। আর এতে তিনি অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত।

টিটি/এমআর