Advertisement


ঘুষের জন্য কাঁকড়া আহরণকারী ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি, জব্দ করা বিপুল কাঁকড়া উদাও (ভিডিওসহ)

মহেশখালী বন-বিভাগে ঘুষ-দুর্নীতি নিত্যদিনের ব্যাপার


মাহবুব রোকন।। মহেশখালীতে রপ্তানির উদ্দেশ্য বাজারজাত করতে নিয়ে যাওয়ার পথে ১১ঝুঁড়ি কাঁকড়া আটকিয়ে মামলা করেছে বন-বিভাগ। আটক করা
হয়েছে কাঁকড়া পরিবহণ কাজে ব্যবহৃত গাড়িটিও। ২৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বন আইনে এ মামলা করা হয়। পরিবহনের সময় গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ কাঁকড়া বন-বিভাগের লোকজন নিয়ে গেলেও এর বেশির ভাগ কাঁকড়া বন-বিভাগ গোপনে সরিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাঁকড়া আহরণকারী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন -দাবি করা ঘুষের টাকা না পেয়ে বন-বিভাগ এ কাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে বন-বিভাগ বলছে জীবিত কাঁকড়াগুলো বনে অবমুক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে আমরা বক্তব্য নিতে বার বার ফোন করার পরও বন-বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান ফোন রিসিভ করেননি। অডিও ক্লিপ▽


তবে মহেশখালীর সংবাদকর্মী আবু বক্কর ছিদ্দিক ফোনে এ কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছেন। এ সময় গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান -১১ঝুঁড়ি কাঁকড়াসহ একটি গাড়ি আটকানো হয়েছে। এখানে প্রায় ৩০ কেজি কাঁকড়া জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হয়েছে। তবে ঠিক কি কারণে কাঁকড়া জব্দ করা হলো -তা জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা উত্তর এড়িয়ে গিয়ে স্থানীয় বিট কর্মকর্তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, বড় মহেশখালী কাঁকড়া সমিতির ৮ জন ক্ষুদ্র কাঁকড়া ব্যবসায়ি রপ্তানির উদ্দেশ্যই প্রতিবারের মতো ২৭ ডিসেম্বর একটি পিকআপে করে ঢাকার উত্তরায় ১১টি ঝুঁড়িতে প্রায় ৬৬০ কেজি কাঁকড়া নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বন-বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জের একটি টিম সড়কের কালারমার ছড়ার ইউনুছখালীতে কাঁকড়াসহ গাড়িটি আটক করে বন-বিভাগের শাপলাপুর অফিসে নিয়ে যায়।

কাঁকড়া ব্যবসায়িদের সাথে কথা বলে জানা যায়- বড় মহেশখালী কাঁকড়া সমিতির কালাচাঁনের ১ঝুঁড়ি, আজিজের ১ঝুঁড়ি, ছোটনের ১ঝুঁড়ি, সালামত উল্লাহর ১ঝুঁড়ি, মো. রবির ২ ঝুঁড়ি, সুকুমার ২ ঝুঁড়ি, বাহাদুর এর ১ ও ফারুকের ২ ঝুঁড়ি কাঁকড়া ছিল গাড়িতে। প্রতি ঝুঁড়িতে থাকা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কেজি কাঁকড়া মিলে গাড়িতে মোট প্রায় ৬৫০ কেজি কাঁকড়া ছিল। যার আনুমানিক মূল্য ৫ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার বিকেলে আলাপকালে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি ছোটন, আজিজ ও সালামত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এমন ঘটনায় তারা বেশ হতাশা প্রকাশ করেন। তারা জানান -"বিভিন্ন সময় উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা থেকে উৎসাহ দিলেও রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসের নেতৃত্বে আমাদের কাঁকড়া আটক করে নিয়ে যাওয়ায় আমরা খুবই আহত হয়েছি। আমাদের কষ্টের কাঁকড়াগুলো নিয়ে গিয়ে গোপনে তারাই আবার বিক্রি করে দেয়। এ কেমন নৈতিকতা?" 

ঘুষের টাকা কম হওয়ায় অভিযান।। ভিডিও▽

ঘুষের টাকা কম হওয়ায় বন-বিভাগের 'কথিত অভিযান'

মহেশখালীতে ঘুষের টাকা কম হওয়ায় বন-বিভাগের 'কথিত অভিযানঃ

Posted by moheshkhalirsobkhabor.com on Tuesday, December 28, 2021
বড় মহেশখালী কাঁকড়া সমিতির সভাপতি কালাচাঁন জানান- আমরা কাঁকড়া সমিতির পক্ষ থেকে  নিয়মিত ৭০-৮০ হাজার করে বনবিভাগকে টাকা দেই। এবার করোনাকালে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বন বিভাগকে তাদের চাহিদামত টাকা দিতে পারিনাই। তাই কাঁকড়াসহ গাড়ি আটকিয়ে নিয়ে গিয়ে হয়রানি করছে। বন-বিভাগকে কেন টাকা দেন? -জানতে চাইলে কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান -টাকা না দিলে তারা পথে গাড়ি আটক করে নানা হয়রানি করে। বন বিভাগ অনেকটা দরদাম করে দাবির মাধ্যমে টাকা নেয় বলে জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, অনুমোদন ছাড়া বন থেকে কাঁকড়া ধরা নিষেধ। যদিও রপ্তানির উদ্দেশ্য কাঁকড়া নিয়ে গেলে বন বিভাগ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এছাড়াও জব্দের চেয়ে বেশি কাঁকড়ার পরিমাণ বেশি হলে তা অনুসন্ধান করা হবে এবং যে কাঁকড়াগুলো জব্দ করা হয়েছে সেখানে জীবিতগুলো ফের বনে অবমুক্ত করা হবে।

এদিকে বন-বিভাগের এ অভিযানের পর তারা অভিযানের তথ্যটি গোপন করার চেষ্টা চালায়, সাংবাদিকরা যাতে তথ্য নিতে না পারে সে ব্যবস্থা করে। অভিযানের পর থেকে কাঁকড়া আহরণকারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের মধ্যে আতংক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অপরদিকে মঙ্গলবার বিকেলে মহেশখালী উপজেলা সদর এলাকায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ক্ষতিগ্রস্ত কাঁকড়া ব্যবসায়ি মো. ফারুখ। তিনি বন-বিভাগ কর্তৃক এতোসব কাঁকড়া গোপন করায় বিষ্ময় প্রকাশ করেন এবং এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।
উদাও হয়েগেছে কাঁকড়া।। ভিডিও▽

বন-বিভাগের কাণ্ড!

বড় মহেশখালীর কাঁকড়া ব্যবসায়িদের প্রতি বন-বিভাগের এ কেমন জুলুম!

Posted by moheshkhalirsobkhabor.com on Tuesday, December 28, 2021
এদিকে আরটিভি অনলাইন এক খবরে কাঁকড়া বহনকারী গাড়ির চালক মনছুর আলম এর বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। এতে গাড়ি চালক মনছুর বলেন -"ইউনুছখালী বাজার থেকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা আমাদের ট্রাকটি শাপলাপুর বিটে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে আমাকে তাড়িয়ে দেন তারা। বন বিভাগের লোকজন রাতের বেলা কাঁকড়াগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।"

অথচ এর আগে সাংবাদিক আবু বক্কর ছিদ্দিক এর সাথে ফোনালাপে গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান -অভিযানের সময় গাড়ি চালকসহ অন্যরা পালিয়ে যায় বলে তথ্য দেন। 
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে -রাতে গাড়িতে লোকজনের সাথে বন-বিভাগের বেশ আলাপ হয়। তখন মিনতি করেও কাঁকড়াগুলো ফেরত পাননি তারা। সকালে 'অফিসে দেখা করেন' বলে তাড়িয়ে দেন। বন-বিভাগ সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন বলে দাবি তাদের। 

এদিকে একাধিক ওয়াকিবহাল সূত্রের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বন-বিভাগের ঘুষ -দুর্নীতি চলে আসছে দীর্ঘ দিন থেকে। এখানে ঘুষ-দুর্নীতি নিত্যদিনের ব্যাপার। তাদের দুর্নীতির কারণে মহেশখালীতে প্যারাবন উজাড়, সরকারি ভূমি দখল ও পাহাড় কাটার মতো জঘন্য কাজগুলো চলে আসছে। মূলতঃ ঘুষ পেতে সময়ের হেরফের হওয়ায় অভিযানের নামে ক্ষুদ্র কাঁকড়া ব্যবসায়িদের এমন ক্ষতি করেছে। তারা এ নিয়ে এলাকার এমপি আশেক উল্লাহ রফিকসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ এর পাশাপাশি বন বিভাগের ঘুষ বাণিজ্য বন্ধের দাবি জানান।

প্রতিবেদন সহযোগী: সব খবরের টিম মেম্বারগণ।