Advertisement


মহেশখালীতে বন বিভাগের বনবিনাশ আর লোপাটের দেড় যুগ

প্রত্যাশিত সুফল পায়নি উপকার ভোগিরা

ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ।। মহেশখালীতে বন বিভাগের বনবিনাশ আর লোপাটের মধ্য দিয়ে পার হলো সামাজিক বনায়নের ১৭ বছর। গত ২০০৪-৫ সালে দেড় লাখ চারাগাছ রোপণের মাধ্যমে শুরু হওয়া সামাজিক বনায়নের ৮০জন উপকার ভোগির ৬০জন ১৭ বছর পার করে ২০২২ সালে এসে সুফল

পেয়েছে প্রতিজন ৮৮ হাজার ৮শ ৬৮টাকা করে। আর কৃষি বাগানে ২০ জন পেয়ছে ৬৩ হাজার ৬৩৯টাকা করে। উপকার ভোগিরা গত ১৭ বছরে বন রক্ষণাবেক্ষণ ও বন নিরাপত্তা চার্জসহ সামাজিক বনায়নের খরচ চালিয়েছে প্রায় ১৭ হাজার করে। সবশেষ গত ৯ জানুয়ারি চেক বিতরণ অনুষ্ঠানের নামে ফের ১ হাজার টাকাসহ মোট ১৮ হাজার টাকা খরচ পেয়েছে ৮৮ হাজার করে। 

সমাজের দরিদ্রদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করা, জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা, ভূমিক্ষয় রোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা, ভূমির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং সামগ্রিকভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়ন সাধন করা-সহ সরকারের নেওয়া জনগোষ্ঠীভিত্তিক বৃক্ষরোপণ ও বাগান সৃজনের এ কর্মসূচিতে মহেশখালীতে গত দেড় যুগে করা হয়েছে নির্বিচারে বনবিনাশ, বৃক্ষ নিধন ও পাহাড় কাটা। এসব অনিয়মের সাথে স্থানিয় প্রভাবশালীদের সাথে সরাসরি যোগসাজশ রয়েছে বন বিভাগ মহেশখালী কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকতাসহ বিভিন্ন এলাকার বিট কর্মকর্তাদের। শুধু তাই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে কাজ না করে উত্তোলন করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা। 

দেশিয় গণমাধ্যম সুত্রে জানা যায়, মহেশখালী বনবিভাগের লোকজনের অসহযোগিতা এবং বনকর্মী ও হেডম্যানদের যোগসাজশে একাধিক কাঠ চোর চক্র দিব্যি হানা দিয়ে সামাজিক বনায়নের মুল্যবান গাছপালা নিধন করে ফার্নিচার ব্যবসায়ী ও স-মিলে বিক্রি করেছে। গত কয়েক বছরে উপজেলার প্রায় বিট কর্মকর্তা বনায়ন নিধনের মহোৎসবে মেতেছিল। বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়া ৮ কোটি টাকা বরাদ্দে তেমন কোনো কাজ না করে লুটে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা৷ আর সামাজিক বনায়নের নতুন বনাঞ্চলে পাহাড় কেটে  স্থানিয়দের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে চাষাবাদ করা হয়েছে। 

স্থানিয়দের অভিযোগ, এলাকাভিত্তিক বিট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্থানিয় অসাধু কাট চোর ও ফার্নিচার ব্যবসায়িরা রাতের আঁধারে সামাজিক বনায়নের বহু বৃক্ষ নিধন করেছে। বিশেষ করে মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়ন ও কালারমারছড়া ইউনিয়নের নোনাছড়ি, আঁধারঘোনা, কালারমারছড়া, সোনাপাড়া, ঝাপুয়া ও ইউনুছখালীসহ বিভিন্ন স-মিলে সরকারি বৃক্ষ নিয়ে যায়। কয়েকটি মিলে জরিমানাও করে বন বিভাগের কর্মকর্তারা। স্থানিয়রা আরও জানান, যেসব কারণে সরকার সামাজিক বনায়নের মত মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে সেটির বাস্তবরূপ হচ্ছে না৷ সরকারের উদ্যোগ উপেক্ষা করে ঠিকই, পাহাড় নিধন, বৃক্ষ নিধন হচ্ছে। 

এদিকে তথ্য অনুযায়ী, মহেশখালীর ৮০ হেক্টর পাহাড়ি ও কৃষি বনে গত ২০০৪-৫ সালে সামাজিক বনায়নের দেড় লাখ চারাগাছ রোপন করা হয়। ২০২২ সালে এসে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে মাত্র ২৩ হাজার গাছের টাকা পায় উপকার ভোগিরা। বাকি ১ লাখ ২৭ হাজার চারা ও মাদার ট্রি বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিধন করা হয়। ২০০৪-৫-এর সৃজিত বাগান শেষ করে ২০২২ সালে নতুন করে আবারও চারাগাছ সৃজন করলো উপকার ভোগিরা। তবে নতুন বনায়নে পূরনো তালিকায় নতুনভাবে আরও সদস্য নেওয়া হয়েছে। তবে নতুন এবং পূরোনো তালিকায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ও বিত্তবানদের দেখা গিয়েছে।

অন্যদিকে মহেশখালীতে সামাজিক বনায়নের নামে এমন অনিয়ম নিয়ে পরিবেশবাদী অলিউর রহমান রোশাই জানান, গরীব জনগনের অর্থ লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। এই বিষয়ে সব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম থেকে দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি বলেন, এভাবে চললে এক সময় বিশাল হুমকির মুখে পড়বে মহেশখালীর পাহাড়ী দ্বীপ। এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে বার বার ফোন করেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।