Advertisement


দস্যুদের 'মাস্টার জোন' সোনাদিয়া, মাসের হিসেবে বিক্রি হয় লুণ্ঠিত মালামাল

সোনাদিয়া ও কক্সবাজার ভিত্তিক শক্ত আন্তঃজেলা দস্যু চক্র সক্রিয়


নিজস্ব প্রতিবেদক।। আত্মসমর্পণ তৎপরতা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর শক্ত তৎরতার মুখে গেল কিছু দিন দস্যু তৎপরতা শিতিল থাকলেও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মহেশখালীর সোনাদিয়া ভিত্তিক জলদস্যুদের লুটপাট কর্মকাণ্ড। দস্যুরা দুর্গম দ্বীপ হিসেবে সোনাদিয়াকে দস্যুতার 'মাস্টার জোন' হিসেবে নিয়ে সমুদ্রে চালিয়ে যাচ্ছে নিরাপদ লুঠযজ্ঞ। সোনাদিয়া কেন্দ্রিক লুঠের মালামাল বিক্রি হচ্ছে মাসের হিসেবে, কম মূল্যে এ সব মালামাল কেনার জন্যও গড়ে ওঠেছে আলাদা একটি সিন্ডিকেট। টোটাল বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে সোনাদিয়া ও কক্সবাজার ভিত্তিক একটি শক্তিশালি সিন্ডিকেট। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।

সূত্র জানিয়েছে -সোনাদিয়ায় প্রতি মাসে বিক্রি হচ্ছে জলদস্যু সিন্ডিকেট কর্তৃক লুটকৃত কোটি টাকার মালামাল। বঙ্গোপসাগরে লুটকৃত এসব মালামাল নির্বিঘ্নে বিক্রি করতে পারায় উৎসাহিত হচ্ছে জলদস্যুরা। এসব মালামাল কমমূল্যে ক্রয় করে চড়াদামে বিক্রি করে কোটি টাকা আয়ও করছে একটি সিন্ডিকেট। সোনাদিয়ার একরাম ও শাহিনের নেতৃত্বাধীন এই সিন্ডিকেটের সাথে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রিক একটি চক্র জড়িত বলে অভিযোগ ফিশিং ট্রলার মালিকদের।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ-জলদস্যুদের লুটকৃত মালামালের হাট এখন সোনাদিয়া। প্রতিমাসে কোটি টাকার মালামাল ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। যার ফলে বেপারোয়া হয়ে উঠেছে জলদস্যুরা। কেউ প্রতিবাদ করলে মিথ্যা ভয়ভীতি ও মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে প্রতিবাদকারীদের।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়- কুতুবজুম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত আবদুল গফুর নাগুকে হত্যার পর বেপরোয়া হয়ে উঠে জলদস্যুরা। এই হত্যাকান্ডের পর ক্রয়সফায়ারে নিহত হয় ঘটনার প্রধান আসামী বতইল্যা ও জাম্বু। পরে একরামের ভাই মকছুদসহ কয়েকজন জলদস্যু র‌্যাবের হাতে আত্মসমর্পন করলে কিছুদিনের জন্য জলদস্যুতাও বন্ধ হয়ে যায় সোনাদিয়ার মোহনায়। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে মকছুদ ও তার ভাই একরাম এবং শাহিন এর নেতৃত্বে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে জলদস্যুরা। বর্তমানে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে এই চক্র।

ঘটিভাঙ্গার এক সাবেক মেম্বার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন বর্তমানে সোনাদিয়া এলাকা দিয়ে আর ফিশিং ট্রলার যেতে চায় না। একরাম, মকছুদ ও শাহিনের নিয়ন্ত্রণাধীন সিন্ডিকেট এর আশ্রয়ে রয়েছে অন্তত ৩০-৩৫ জনের একটি জলদস্যু বাহিনী। ওই বাহিনীতে কুতুবদিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও মহেশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নের জলদস্যু রয়েছে। তারা বঙ্গোপাসাগরে ফিশিং ট্রলার লুট করে এই সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করে। ক্রয়কৃত এসব মালামাল কক্সবাজারে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ভিত্তিক আরেকটি সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করে। তাদের কারণে অসংখ্য ট্রলার মালিক সর্বশান্ত হয়েছেন।

বদরখালীর ট্রলার মালিক আমিনুর রহমান জানিয়েছেন বঙ্গোপসাগরে লুটকরা মালামাল কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া থেকে আবার ক্রয় করেছি। প্রতি বছর এই সমস্যা মোকাবেলা করে আসছি। আমরা কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।

কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এদের অত্যচারে অনেক শ্রমিক পেশা পরিবর্তন করেছে। সাগরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। মুলত জলদস্যুরা মালামাল বিক্রি করতে না পারলে জলদস্যুতা অনেক কমে যেত। বর্তমানে সোনাদিয়ার এই সিন্ডিকেট এর কারণে উৎসাহিত হচ্ছে জলদস্যুরা। অনেকেই আত্মসমর্পন করে প্রাপ্ত সরকারি অর্থ অপচয় করছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে।

বিভিন্ন সময় দেখা যায় গডফাদাররাই বিভিন্ন লোকজনকে জলদস্যু বলে আটক করে প্রশাসনের হাতে তোলে দিচ্ছে। এটি শুধুমাত্র নিজেদের আড়াল করার কৌশল। সোনাদিয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে না আসলে সমস্যা আরো প্রকট হতে পারে।

এদিকে সোনাদিয়া ভিত্তিক দস্যুতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায়ও কমতি নাই, সস্প্রতি বিভিন্ন সময় পুলিশ এখান থেকে একাধিক দস্যু আটক ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে। সর্বশেষ র‌্যাবের অভিযানে মহেশখালী চ্যানেল থেকে আটক হয়েছে ৬ জলদস্যু, উদ্ধার হয়েছে অবৈধ অস্ত্র।

এ বিষয়ে সিন্ডিকেট প্রধানদের একজন হিসেবে খ্যাত সোনাদিয়ার একরাম জানান- তারা এসব কাজে জড়িত নয়। বরং প্রয়োজনে তারা প্রশাসনকে সহযোগীতা করছে। এটি একটি ষড়যন্ত্র।

মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. আবদুল হাই জানিয়েছেন, কোন অপরাধি ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। পুলিশ তথ্য পেলেই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। জলদস্যুতাসহ সকল অপরাধমুলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কোন পরিবর্তন হবে না।