Advertisement


মহেশখালী থানা ও পুলিশ ক্যাম্পে বসে অবৈধ 'বিচার' -সালিশি দরবার; সামাধানের নামে চলে প্রহসন


সব খবর ডেস্ক।। মহেশখালী থানার আওতাধীন বেশ কয়েকটি পুলিশ ক্যাম্পে চালু হয়েছে নতুন এক বিচার ব্যবস্থা, এসব যেনো অন্য এক স্বঘোষিত আদালত। আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনা মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে বা তুলনামূলক নিরাপরাদ ব্যক্তিকে অপরাধী বানিয়ে থানায় বসে সমাধানের নামে চলছে প্রহসন। আর এ কাজের জন্য ব্যবহার হয় সঙ্গবদ্ধ দালাল ও কথিত বিচারক (শালিশকার) চক্র। করা হয় কন্টাক।

জানা গেছে- সামাজিক সংঘাত থেকে শুরু করে নারী নির্যাতন; মাদক কিংবা আমলযোগ্য যে কোনো অপরাধ থানায় বসে মীমাংসার নামে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চলছে। মহেশখালী থানাসহ ক্যাম্পে ক্যাম্পে চালু করা নতুন এ অবৈধ বিচারব্যবস্থাকে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন বলে দাবি করেছেন আইনজ্ঞরা।

সূত্র বলছে, উপজেলার কালারমার ছড়া, হোয়ানক ও মাতারবাড়ি ইউনিয়নের বিট ক্যাম্পে দায়িত্বরত এসআই ও এএসআইদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উল্লেখযোগ্য।

থানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে ছোট বিষয়গুলো থানায় বসে সমাধান করা হয়। তবে গুরুতর অভিযোগগুলো মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। মহেশখালী থানার আওতাধিন ইউনিয়ন পর্যায়ের ক্যাম্পগুলোর বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন-চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার সভাপতি জিয়া হাবিব আহসান মহেশখালীর সব খবরকে বলেন, ‘থানায় কোনো মামলার আপস করা কিংবা বিচার না করার নির্দেশনা রয়েছে উচ্চ আদালতের। এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। এ নির্দেশনা কেউ অমান্য করলে তা হবে আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’

জানা যায়- মহেশখালী থানা ও ক্যাম্পে ক্যাম্পে আইনের বিধান লঙ্ঘন করে প্রতিনিয়তই বসছে কথিত বিচারের নামে সালিশ-দরবার। নারী নির্যাতনের অভিযোগ থেকে শুরু করে জায়গা দখল-বেদখল, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মধ্যে মারামারিসহ আমলযোগ্য প্রায় সব অভিযোগই রহস্যজনক কারণে মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে কথিত সমাধানের নামে শুরু হয় বিচার ও সালিশ দরবার। আপত্তিজনক 'বিচার'র নামে দুই পক্ষ থেকেই নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এ বিচারব্যবস্থার তদারকি করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজেই। আর তার উজির-নাজির হিসেবে রয়েছেন থানার সেকেন্ড অফিসার, এসআই-এএসআইরা প্রায় সবাই। শুধু বিচারব্যবস্থা নয়, মহেশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত)'র বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। শুধু ওসির সততাকে পুঁজি করে সকলেই গোপনে ভালো মানুষ সাজার কাজে ব্যস্ত বলে একাধিক সূত্রের অভিযোগ।

একাধিক ভুক্তভোগী জানান- মহেশখালী থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করতে চায় না। তারা সমাধানের নামে শুরু করে 'বিচার'। এতেই তাদের লাভ। বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষ নিয়ে থানার ভিতরে, থানার সামনে গোল ঘরে বা ক্ষেত্র বিশেষ ক্যাম্পে ক্যাম্পে বসে এ বিচার। এ সময় খরচের নামে উভয় পক্ষ থেকে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। যে বেশি টাকা দিতে পারে পুলিশের 'রায়' যায় তারই পক্ষে। শুধু এতেই শেষ নয় মহেশখালী থানার এ বিধান পরিপন্থী প্রহসন বলে ওয়াকিবহাল সূত্রের দাবি।

সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে, কালারমার ছড়া ক্যাম্পের এএসআই জসিম উদ্দিন ক্যাম্প ছাড়াও পথপ্রান্তরে ও পাড়ায় পাড়ায় বসান সালিশি দরবার। লালন করে দালাল সিন্ডিকেট, উভয় পক্ষ থেকে হাতিয়ে নেন ঘুষের টাকা। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত ভার দেওয়া হলেও প্রতিপক্ষের অর্থের বিনিময়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন উল্টো।

একই চিত্র উপজেলার অন্যসব ক্যাম্পেও। পুলিশ, দালাল ও শালিশকার চক্র আদালতের পরিভাষিক শব্দ 'বিচার', 'বিচারক', 'রায়' শব্দত্রয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে চলছে বলে ওয়াকিবহাল সূত্রের অভিযোগ। যা আইনত সম্পূর্ণ অন্যয় ও আইনের লঙ্গন। অথচ বিগত সময় মহেশখালীতে শালিশ করতে গিয়ে শালিশের সিদ্ধান্তে এ শব্দগুলো ব্যবহারের বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল।