Advertisement


কালারমার ছড়ায় ভোটের হাওয়া: বাকযুদ্ধ ও পরস্পর বিরোধী অভিযোগে উত্তেজনাপূর্ণ ভোটের মাঠ

কে বিদ্রোহী প্রার্থী? -তা নিয়ে চলছে মিমাংসাহীন আলোচনা


ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ।। নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঘোষণা হলো দেশের বাকি থাকা দশম ইউপি নির্বাচনের নয় ধাপের নির্বাচনী তফসীল। চায়ের স্টল থেকে দলীয় কার্যালয়ে এ নির্বাচন নিয়ে সবখানে চলছে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ। সিয়াম সাধনার মাস রমজানের পর ঈদের রেষ শেষ না হতেই এরই মাঝে হাওয়া বইতে শুরু করেছে ভোট উৎসবের।

নয় ধাপের এ নির্বাচনে মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ও বড় মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদ দু'টিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আর এজন্য গোপনে বা প্রকাশ্যে প্রার্থীরা মাঠ গোছাচ্ছেন। কিন্তু বোদ্ধারা মনে করছেন, সংঘাত-সহিংসতা আর প্রাণহানির পুরনো রেওয়াজ নিয়েই ফিরছে আসন্ন কালারমার ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী চিত্র। ভোট উৎসবকে ঘিরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এ ইউনিয়নে। এতে শঙ্কায় রয়েছে হাজারো ভোটার ও আ.লীগ-বিএনপিসহ অন্য দলের তৃনমূল নেতাকর্মীরা।

এলাকার বিভিন্ন স্তরের ভোটাররা জানাচ্ছেন- প্রার্থীরা একক আধিপত্য জিইয়ে রাখতে এবং কেউ জনগণকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়ে মাঠ দখলে করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক প্রার্থী অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে ছুঁড়ে দিচ্ছেন হত্যার মতো জীবন শঙ্কার অভিযোগ। তৃণমূলের এ অভ্যন্তরীণ কাঁদাছোড়াছুড়িতে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন বলে মনে করছেন এলাকার রাজনীতিবিদরা৷

জানা গেছে, গত ৬ মে শুক্রবার নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করতে প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বর্ধিত সভার আয়োজন করে কালারমার ছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। কালারমার ছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া বর্ধিত সভা ৪টা পর্যন্ত ঠিকভাবে চললেও সাড়ে ৪টায় গিয়ে বাঁধে হট্টগোল। বর্ধিত সভায় ক্ষমতাসীন এ দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেওয়া শেষ করার পর কক্সবাজার জেলা তাঁতিলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে আজিম মোহাম্মদ ছিবগাতুল্লাহকে সভার প্রধান অতিথি বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি দিতেই তাতে জামায়াত নেতার ছেলে বলে বাধা দেন ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ। এ সময় সভাস্থালে ছিবগাতুল্লাহকে হেনস্তা করা হয় বলেও অভিযোগ ঐ ছাত্রলীগ নেতার। পরে সভায় উপস্থিতির একাংশ  সভা বর্জন করে চলে যান। 

 

এদিকে ওই রাতে উপজেলা আ.লীগ নেতা সেলিম চৌধুরীর বাসায় তারেক বিন ওসমান শরীফকে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ তোলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাংবাদিকসহ কয়েকজন মিলে গোপন বৈঠকে বসার ইঙ্গিত করে স্ট্যাটাস দেন তিনি। পরে যদিও একই সময় সেলিম চৌধুরী এবং তাঁতিলীগ নেতা ছিবগাতুল্লাহও একই অভিযোগ তোলেন সামাজিক মাধ্যমটিতে।

সূত্রের তথ্যমতে- এবারের নির্বাচনে কালারমার ছড়া ইউনিয়নে প্রবীণ কোনো রাজনীতিবিদ বা প্রার্থী মাঠে না আসলেও বা বিএনপির প্রার্থী না থাকার সম্ভাবনা বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নৌকার মাঝি হতে উপজেলা-জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে জোর লবিং শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত এ ইউনিয়নে বর্তমান ইউনিয়ন আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফসহ আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আ.লীগ নেতা সেলিম চৌধুরী, উপজেলা আ.লীগের সদস্য সরওয়ার আজিম, সাবেক কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ জাকারিয়া, কালারমার ছড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হাসান আরিফ, কালারমার ছড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি  ও বর্তমান মেম্বার আখতারুজ্জামান বাবু, জেলা তাঁতিলীগের নেতা ফজলে আজিম মো. সিগবাতুল্লাহকে ভোটের মাঠে দেখা মিলেছে। তবে নৌকার টিকিট নিশ্চিত করতে পারলে আ.লীগের এক প্রার্থী ছাড়া বাকিরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের বিধিবিধানে উল্লেখ থাকলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে জেলা তাঁতিলীগ নেতা ছিবগাতুল্লাহর।

এদিকে কালারমার ছড়ায় ভোটের মাঠে আলোচনায় থাকা প্রার্থীরা একে অপরকে দোষারোপ করে নানা তথ্য উপস্থাপন করছেন। মনোনয়ন প্রাত্যাশীদের কেউ বলছেন জামায়াতের দায়িত্বশীল পরিবারের সন্তান, কেউ অভিযোগ করছেন- ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে উঠে এসে নৌকার মনোনয়ন চাওয়া হচ্ছে। একই ভাবে গত নির্বাচনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী তারেক শরীফ ও সেলিম চৌধুরী পরস্পর পরস্পরকে বিদ্রোহী প্রার্থী বলে দাবি করে নানা তথ্য উপস্থাপন করেই চলছেন। মূলতঃ কেই বিদ্রোহী প্রার্থী -এ সংকটটা নিরসনে দলের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত দরকার বলে মনে করছেন স্থানীয় ভাবে দলটির একাধিক সূত্র।

অপরদিকে মাঠ জরিপ বলছে, গত ৫ বছরে কালারমার ছড়ায় রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফকেই ফের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান জনগণ। ইউনিয়ন পরিষদের কোনো সেবায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েননি বলেও অনেক ভোটাররা জানিয়েছেন। তাছাড়াও কালারমার ছড়া ইউনিয়ন আ.লীগের নেতাকর্মীরা একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার দাবি তোলার পাশাপাশি এ ইউনিয়নের খেটে-খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে সকলেই ফের বর্তমান চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান। 

গত ৫ বছরে কালারমার ছড়া ব্যাপক কর্মযজ্ঞের সাথে ইউনিয়নটি সরকার কতৃক ঘোষিত হয়েছে "দূর্যোগ সহনশীল ইউনিয়ন' হিসেবে। অব্যাহত রয়েছে মডেল ইউনিয়ন হিসেবে রূপ দেওয়ার কাজ। রাস্তাঘাটে আমুল পরিবর্তন এসেছে তার আমলে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে তারেক চেয়ারম্যানকে ফের চেয়ারম্যান করা ছাড়া বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা।

উল্লেখ্য, গত ২০১৬ সালের ২২ মার্চ এ ইউনিয়নের নির্বাচন উচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন স্থগিত করার পর একই বছরের ২৩ মে এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এখলাসুর রহমানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১২ হাজার ৭৯৭ ভোটে জয়লাভ করেন বর্তমান চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান।