Advertisement


মাতারবাড়িতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম, কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধসে পড়ছে বাঁধ

শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ


কাইমুল ইসলাম ছোটন।। মাতারবাড়িতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই বেড়িবাঁধ ধসে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। ফলে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ। অবস্থার কোনো সুরাহা না হওয়ায় হতাশ এলাকাবাসী। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে -বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না।

জনৈক স্থানীয় বাসিন্দা জানান- "বেড়িবাঁধ নির্মাণের শুরু থেকে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থা হয়নি বরং আমাদের উচ্ছেদ ও মামলার ভয় দেখানো হয়েছে। নকশা অনুযায়ী কাজ না করে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় মাটি কম দেওয়া থেকে শুরু করে বসতভিটা থেকে মাটি নেওয়ার কারণে বর্ষাকালে পানি জমে থাকার পাশাপাশি পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে । কর্তৃপক্ষ বেড়িবাঁধ ঘেঁষে বালি উত্তোলন করার কারণে বেড়িবাঁধটি ফের ধসে পড়ছে। এর আগেও এমন অনিয়ম হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এ অবস্থায় বার বার সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে যাচ্ছে। সঠিকভাবে সংস্কার করা না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে আরও বড় ধরনের ভাঙন দেখা যেতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা আরও বলেন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে লোকালয়ে এখনো পানি প্রবেশ করছে। ঠিকাদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিও কোন কথা বলতেছে না। ঠিকাদার দায়সারা ভাবে কাজ করে সরকারি অর্থ লুটে নিচ্ছেন। এভাবে চললে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে মাতারবাড়ির মানুষ।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।

জানা গেছে, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা। ৮০০ মিটারের বেড়িবাঁধটি নির্মাণের জন্য ৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন এলাকা নির্ধারণ করে কাজ বণ্টন করা হয় ঠিকাদারদের। চলতি বছরের জুন মাসে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। সম্পন্ন কাজ হওয়ার পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে টাকা ছাড় করা হবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে।

কিন্তু জুনে কাজ হওয়ার বাধ্যবাধকতার কথা অস্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন- "প্রথমে আমরা কাজ সম্পন্ন করেছি। এখন নতুন করে কাজ করা হচ্ছে।"

এদিকে ধলঘাটা ইউনিয়নের হামিদখালী নতুন ঘোনা (আঞ্চলিক) এলাকার বেড়িবাঁধের একই অবস্থা বলে জানা যাচ্ছে। এখানে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে যে কোনো মূহুর্তে বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাই তা দ্রুত সংস্কারের দাবি এলাকাবাসী।

সরেজমিনে বেড়িবাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- ৮০০ মিটারের বেড়িবাঁধ নির্মাণে এক ঠিকাদারের কাজের সাথে অন্য ঠিকাদারের কাজে কোন মিল নেই। আঁকাবাঁকা বেড়িবাঁধে নির্মাণ করে কোনো জায়গায় মাটি, কোথাও জিওব্যাগ বেশি বা কম দিচ্ছেন।

সূত্র বলছে- শর্ত অনুযায়ী প্রস্থ ১০ মিটার হওয়ার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় তা ৮-৯ মিটার। দেওয়া হচ্ছে না নিয়মমাফিক জিওব্যাগ। তাছাড়া নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের ৫ টি স্থানে জিওব্যাগসহ মাটি ধসে গেছে। অনেক জিওব্যাগ সমুদ্র সৈকতে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্ততঃ নতুন ১০ টি জায়গায় বড় ফাটল ধরছে বেড়িবাঁধে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের কারণে ৯ মিটার বেড়িবাঁধে কোন জিওব্যাগ দেওয়া হয়নি। খোলা অংশে দেওয়ায় মাটিগুলো নিয়ে ফেলেছেন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় বাসিন্দা পারভিন আকতার বলেন- "এখনও বর্ষা আসেনি। কাজ শেষ হওয়ার আগে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। এটা ছাড়া অন্য জায়গা নেই, ৩ সন্তান নিয়ে কোথাও যাব জানিনা।"

স্থানীয় বাসিন্দা মুজাম্মেল হক বলেন- "বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বসতভিটা থেকে মাটি নেওয়া হয়েছে। ফলে এখানে গর্ত তৈরি হওয়ায় বর্ষাকালে শিশুরা পানিতে ডুবে মরে যেতে পারেন। বারবার বেড়িবাঁধ সংস্কার হলেও আমাদের শঙ্কা কাটছে না।

স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী- বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে বিগত কয়েক বছরে প্রায় ১০০টি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। নিঃস্ব হয়ে বাধ্য হয়েছেন অনেক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে। কেউ কেউ মাথা গোঁজানোর ঠাঁই নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে মাতারবাড়ি-ধলঘাটার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে আশংকা করে তারা টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম আবু হায়দার বলেন- মাতারবাড়ির বেড়িবাঁধ টেকসই হওয়া দরকার। টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে মাতারবাড়িকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনিও দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানান।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন- মাতারবাড়িতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য নকশা পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়দের রক্ষা করার জন্য বর্তমানে জিওব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পানির তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৯ মিটার খালি  অংশের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, নকশাতে ভুলক্রমে এটা হিসাব করা হয়নি। তাই খালি পড়ে আছে। কয়েকদিনের মধ্যে ঠিক করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

বেড়িবাঁধের কাছ থেকে বালি উত্তোলন করলে বেড়িবাঁধ ক্ষতি হয় কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- এতে কোন ক্ষতি হয় না। মানুষ আমাদের (পানি উন্নয়ন বোর্ডের) জায়গায় ঘরবাড়ি গড়ে তুলেছেন, এখান থেকে বালি নেওয়ার নিয়ম আছে। সর্বোপরি বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোন অনিয়ম হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

[ অনুমতি ছাড়া এ ওয়েবসাইটের কিছু কপি করা বেআইনি। ]