Advertisement


মডেল কালারমার ছড়া ইউনিয়ন গঠনে আমার পঁচিশ দফা

মুহম্মদ হেলাল উদ্দিন


হালাইয়ামার ছড়া> হালাইয়ারমার ছড়া> হালামার ছড়া> কালাইয়ারমার ছড়া> কালারমার ছড়া।

নামের এ বিবর্তন দীর্ঘদিনের। আরো অনেক থাকতে পারে, থাকাটা স্বাভাবিক। অতো পুরাতন জানার সুযোগ হয়নি। শুরু করব এভাবে-
১৯৩৭ সালে কালারমার ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের যাত্রা শুরু। বয়স হয়েছে দীর্ঘ সাড়ে আট দশক। মাত্র পনেরো বছর পরেই একশো বছরের কোটা অতিক্রম করবে ইউনিয়নটি। শুরুতে প্রেসিডেন্ট, পরে চেয়ারম্যান পদাধিকারী এ ইউনিয়নের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নব্বই দশকের আগে কিভাবে এ ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালিত হতো ব্যক্তিগতভাবে চাক্ষুষ নই। যা জানি সব কিছু শুনা কথা। তবে নব্বইয়ের দশক থেকে বেশির ভাগই নিজে দেখেছি, প্রত্যক্ষ করেছি। বিভিন্ন কারণে এলাকায় সংশ্লিষ্ট ছিলাম ও আছি বলে পরিষদ ও এলাকার বেশিরভাগ কাজের বিষয়ে স্পষ্টভাবে অবগত হতে হয়েছে।
বেশিরভাগ চেয়ারম্যানকে দেখেছি নির্বাচিত হওয়ার আগে এলাকায় থাকলেও নির্বাচিত হয়ে কক্সবাজার জেলা সদরে অবস্থান করতে। কক্সবাজার জেলা শহরের বিভিন্ন হোটেলে, নিজের বাসা অথবা ভাড়া বাসায় দিনের পর দিন অবস্থান করতেন। সাধারন মানুষকে জরুরী কাজে অপ্রয়োজনীয় ও অন্যায্য হয়রানী ভোগ করতে হয়েছে। বিচারের নামে এখতিয়ার বহির্ভূত হস্থক্ষেপ হয়েছে অহরহ। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন নিয়মিতই। বিভিন্ন গোষ্ঠির মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে হাসিল করেছেন নিজের স্বার্থ। অনেকে তৈরী করেছিলেন নিজস্ব বলয়। সম্মানী লোকজনদের করেছেন অসম্মানিত। বিচারের নামে নিরীহ মানুষকে ভোগ করতে হয়েছে নির্মম যন্ত্রণা। সেবক হয়ে করেছেন শাসন। পরিষদের সেবা সমূহ অনেকাংশেই ছিল সাধারনের নাগালের বাইরে। ওয়ারিশ সনদ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম আর জন্ম সনদ নিয়ে চরম দায়িত্বহীনতার কথা প্রচার আছে।
একজন চেয়ারম্যানকে পেয়েছিলাম, ছাত্রদের মূল্যায়ন করতে দেখেছি। পরিষদের বিচার চলাকালে আমি আমার এক বন্ধুর জন্য তার সাথেই জাতীয়তা সনদপত্র সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। চেয়ারম্যান সাহেব বিচারের মধ্যেই তার সচিবকে নির্দেশ দিয়ে সনদপত্র সরবরাহ করেছিলেন। একজনকে দেখেছি এলাকার একজন প্রবীণ লোককে পা ধরে সালাম করতে। উন্নয়নের জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত টাকা যথাযথ খাতে খরচ না করে সরকারী কোষাগারে ফেরত দিয়ে পুরস্কারজয়ী হওয়ার ঘটনাও দেখেছি। এনারাই পরে তাদের নামের আগে-পরে সফল, সৎ ইত্যাদি পদবি ধারণ করেছেন।
একজন চেয়ারম্যানকে এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে অবগত করেছিলাম,"এই কাজটি আগের চেয়ারম্যানরা করে এসেছেন। ভালো কাজ, পারলে আপনিও অব্যাহত রাখুন। "তিনি বলেছিলেন, "আগে কে কি করেছে সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।" পরের নির্বাচনে প্রকাশ্যে এ কথা বলেছিলাম। তিনি হারলেন। আগেরজন যদি একটি ভালো কাজ করেন, আপনি সেটি অব্যাহত রাখলে অসুবিধা কোথায়? ভালোটা গ্রহণ, খারাপটা বর্জনের সংস্কৃতি এখনো আয়ত্ব করতে পারছি না কেনো?
মানুষ শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবেই অন্যের কাছে বিচার প্রার্থনা করে। আপনি ন্যায় বিচার না করে, আরেকজন দিয়ে প্রভাবিত হয়ে কাজ করলে তার জবাবদিহিতা আপনাকেই করতে হবে। আশপাশের লোকজনের উপর আস্থা হারিয়েই মানুষ পরিষদে যায়। আপনি যদি যার ভয়ে পরিষদে গেলো তাকে দিয়েই বিচার আয়োজন করেন মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। নিকটাত্মীয়, শুভাকাঙ্খীদাবীদারদের প্রভাবে আপনি প্রভাবিত হলে আগেই সরে যান। আগে এরূপ ঘটনায় আমরা বিব্রত হয়েছি। আর হতে চাই না। বেয়াদবির চেয়ে গরহাজির ভালো।
আশার কথা হচ্ছে, এতসব নেতিবাচক তথ্যের পরেও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব হোছাইন মোহাম্মদ ইব্রাহীম সাহেবের আমলে (তিনি যখন ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন) মানুষ ন্যায় বিচার পেতেন বলে এলাকায় ব্যাপক প্রচার ও তার সু-খ্যাতি আছে। প্রত্যেক আমলে আরো অনেক ভালো কাজ অবশ্যই আছে। তবে, খারাপটাই মানুষের কষ্ট দেয় বেশি। ভালোটা পাওয়া নাগরিকের অধিকার, খারাপটা নয়।
অন্যকোনো আইনগত জটিলতা সৃষ্টি না হলে আগামী ১৫ জুন এ ইউনিয়নের সাধারন নির্বাচন অনুষ্টিত হবে। নির্বাচন কমিশনের আদেশমতে প্রচার-প্রচারনা হবে না। প্রার্থীরা নিয়ম-নীতি মেনে বিভিন্নভাবে ভোট প্রার্থনা করবেন এটা স্বাভাবিক। প্রতিশ্রুতিও দিবেন। প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে অনেক বিষয়ের সাথে নিচের বিষয়গুলো যোগ করা যায় কি-না ভেবে দেখা দরকার মনে করছি। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়গুলোকে নির্বাচনের পর নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের প্রতিপালন করার চেষ্টা করতেও অনুরোধ করব।

০১) কোন প্রকার হয়রানী ছাড়া বিচার প্রত্যাশীদের অভিযোগ গ্রহণ করে জামানত গ্রহণ না করে সম্ভব কম সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে অভিযোগ গ্রহণের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। কোন পক্ষ পরিষদের বিচারে অসন্তুষ্ট হলে তাকে উচ্চ আদালকে যেতে কোন ভাবেই বাধাগ্রস্থ করা যাবে না। এখতিয়ারভূক্ত বিষয় সমাধান করার জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখাতে হবে।
০২) প্রতি দুই বা তিন মাসে একবার করে উন্মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করে সর্বস্তরের মানুষের সমস্যা, অভিযোগ শুনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সভাটি পর্যায়ক্রমে বৃহত্তর প্রতিটি ওয়ার্ডে (বর্তমানে তিনটি ওয়ার্ড) করা যায়। পরবর্তী সভায় আগের সভায় প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ অবহিত করতে হবে।
০৩) সরকারি প্রশাসনের সহযোগিতায় চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজী, সন্ত্রাস বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ও সম্ভাব্য স্থানকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করে স্থানীয় সৎ, গ্রহণযোগ্য, আগ্রহী ও উদ্যোগীদের নিয়ে টিম গঠন করে পাহারার ব্যবস্থা সহ বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচী গ্রহণ করা যায়। প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজের দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে।
০৪) জাতীয়তা সনদ, জন্ম সনদ, ওয়ারিশ সনদপত্র সরবরাহে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে শতভাগ। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী, গরিব ও অসহায় লোকদের এসব সনদপত্র বিনা ফি'তে সরবরাহ করা যায় কি-না তা বিবেচনা করতে হবে। এসব সনদপত্র সরবরাহে যুক্তিসংগত কারণ না থাকলে মোটেই বিলম্ব করা যাবে না।
০৫) নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। কোনভাবেই এসব অপরাধে জড়িতদের ছাড় দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও সময়ক্ষেপন না করে আইনগত পরামর্শ প্রদান করতে হবে।
০৬) বিচার ব্যবস্থায় অবশ্যই শতভাগ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কোন পক্ষপাতদুষ্ট লোককে নিয়ে বিচারের আয়োজন করা যাবে না। পরিষদ হবে নিরপেক্ষ ও সাধারন মানুষের আস্থার প্রতীক।
০৭) বেকার ও দরিদ্রদের বিশেষত বিধবা ও অসহায় নারীদের বৃত্তিমূলক ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সহযোগীতা করতে হবে। পরিষদ এরকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা নিজেরাই একটা কাজের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
০৮) শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ উন্নয়ন বাজেট বরাদ্ধ দিতে হবে।
০৯) ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি বণ্টনের ক্ষেত্রে কোন প্রকার অনুকম্পা প্রদর্শন না করে প্রাপ্যতার অধিকার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।
১০) অতীতের সকল প্রকার হিংসা, বিদ্ধেষ, ঘৃণা পরিহার করে একটি মডেল ইউনিয়ন গঠনে কাজ করতে হবে।
১১) বিশেষ তহবিল গঠন করে গরিব ও অসহায় মেয়েদের বিয়ে, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখা, গরীব ও অসহায় লোকদের চিকিৎসা, দরিদ্র লোকজনকে আইনগত সহায়তা প্রদান করতে হবে।
১২) যৌতুক, বাল্যবিবাহ, মাদক, ইভটিজিং, জুয়া ইত্যাদি সামাজিক ব্যাধি দূর করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
১৩) দূর্নীতি শতভাগ নির্মূল করতে হবে। প্রচলিত আইনের পরিপন্থী কোনো কর্মকান্ডকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
১৪) পরিষদের এখতিয়ারভূক্ত রাস্তা, পথ, ঘাট ইত্যাদির অবকাঠামোগত উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে সমগ্র এলাকা সমাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
১৫) ইউনিয়নের সকল প্রকার নাগরিক সেবা ও অধিকার খুব সহজে সাধারনের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
১৬) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার ও নতুন ড্রেন তৈরি করতে হবে।
১৭) বিশুদ্ধ পানীয় ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৮) গোষ্ঠীগত দ্বন্ধ ও আধিপত্য বিস্তার নির্মূল করে একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য মডেল ইউনিয়ন গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
১৯) ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়মিতভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিতর্ক, মেধা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এলাকার যোগ্য, সম্মানিত লোকজন ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ কমিঠি এ প্রতিযোগিতার কাঠামো ঠিক করবেন।
২০) ইউনিয়নের সুবিধাজনক স্থানে একটি গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২১) স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমূহের কার্যক্রম জোরদার করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
২২) সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরের সাথে তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে জন-অধিকার আদায় ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি আন্তরিকভাবেই চিন্তা আর বাস্তবায়নের কাজ করতে হবে।
২৩) তরুন সমাজকে সঠিক পথে হাঁটতে সহযোগিতা করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থপনার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার বিকল্প কমই।
২৪) ঐতিহাসিক ও বিরল স্থাপনা সমূহ সংরক্ষণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২৫) প্রচলিত আইন ও বিধি বহির্ভূত না হলে পরিষদের সকল কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য এলাকার প্রায় সর্বজন শ্রদ্ধেয়, গ্রহনযোগ্য, মেধাবী লোকদের সমন্বয়ে একটি পরামর্শক কমিঠি গঠন করা যায় কি-না তা বিবেচনা করা।
তবে, শুধু চেয়ারম্যান ও তার সদস্যদের দ্বারা একটি ইউনিয়নকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজন সকল নাগরিকের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি সবাইকে পালন করতে হবে নিজ নিজ দায়িত্ব। দায়িত্বশীল সু-নাগরিকের ভূমিকা পালন করতে হবে সবার।

এ ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া গুণীজনের সংখ্যা অনেক। আমাদের অর্জনের পাল্লাও বেশ ভারী। কিন্তু, বিগত দিনে আমরা স্বার্থের দ্বন্ধের কারণে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হুমকিতে পড়তে যাচ্ছি। হুমকিতে ফেলে দিচ্ছি নিজেদের, নিজেরাই। আর নয় পিছিয়ে থাকা। নিজেদের স্বার্থেই করতে হবে যুদ্ধ, জিততে হবে নিজেদেরই। জয় হোক মেহনতি মানুষের।
বিনয়াবনত- এ ইউনিয়নের স্থায়ি বাসিন্দা হিসাবে ভাবনা গুলো একান্তই আমার নিজের। কারো দ্বি-মত থাকাটা অতি স্বাভাবিক।