মহাপরিচালকের কাছে চেয়ারম্যানদের সরাসরি অভিযোগ
কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ। তার বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজ বরাদ্দের বিপরীতে ঘুষ দাবিসহ নানা অভিযোগ তুলেন তারা। গত ৫ নভেম্বর কক্সবাজারে আয়োজিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এক কর্মশালায় প্রকাশ্যে মহাপরিচালক মো. আতিকুল হকের কাছে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ তুলেন জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। তার এ দুর্নীতিতে সহায়ক ভূমিকায় রয়েছে সুশীলন নামের একটি এনজিও। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগও করেছেন চেয়ারম্যানরা।
সূত্র জানায়- গত ৫ নভেম্বর কক্সবাজারে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আয়োজনে-‘ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি‘প্লাস’ (ইজিপিপি) বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মো. আতিকুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ। সভায় প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় প্রকল্পসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মন্তব্য চাওয়া হলে -এ সময় চেয়ারম্যানরা মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ করে বলেন- অফিশিয়াল বিশৃঙ্খলার কারণে বর্তমানে জেলার তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বেশ ধীরগতি চলছে। তারা বলেন -জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজারে যোগ দেয়ার পর হতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প পাস করানোর শর্তে মোটা অংকের ঘুষ দাবি করে আসছেন। ঘুষের দাবীকৃত টাকা না দিলে প্রকল্প ছাড় করতে নানা ধরণের গড়িমসি ও সময় ক্ষেপণ করেন। এমনকি বরাদ্দ কমিয়ে নেয়া বা কেটে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটান। অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ছাড়েও নানা তালবাহানা করে কালক্ষেপণ করেন। যার ফলে তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরণের বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
মহাপরিচালকের কাছে চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করে আরও বলেন- ইজিপিপি প্রকল্পের অধীনে জেলার সব ইউনিয়নের নানা ধরণের প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সুশীলন নামের একটি এনজিও। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের নানা ধরণের গড়িমসি করে সুশীলনের কর্মীরা। এমনকি তাদের মাধ্যমেও ঘুষ দাবি করেন জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
চেয়ারম্যানদের দাবী- ইউনিয়নে ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তাবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের কিছু কিছু শ্রমিক মাঝে মধ্যে নিজের পরিবর্তে অনুপস্থিতিতে তাদের নমিনীদেরকে প্রকল্পের কাজে পাঠায়। সুশীলন এনজিও সংস্থার প্রতিনিধি জনৈক ইকবাল নামক ব্যক্তি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দোহাই দিয়ে গত মাসে বদলা শ্রমিকের হাজিরা কর্তন করে দেয়। এই নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান প্রতিবাদ জানান। এতে সুশীলন কর্মকর্তা ইকবাল জানান, এই এনজিও প্রতিনিধির সহিত প্রকল্প সভাপতি ও বিতাড়িত শ্রমিকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও উত্তেজনা সৃষ্টি প্রকল্পে নমিনীর ব্যবস্থা রাখার জন্য জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম পাঁচ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হবে জানায় সুশীলন কর্মকর্তা। মূলতঃ জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সুশীলন এনজিওকে ব্যবহার করে এ সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে।
এদিকে ৫ নভেম্বর কক্সবাজারে আয়োজিত কর্মশালায় চেয়ারম্যানরা জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালকের দৃষ্টি-আকর্ষণ করেন। এ সময় মহাপরিচালক চেয়ারম্যানদের সব কথা শোনে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। অপরদিকে জেলা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম তার বিরুদ্ধে মহাপরিচালককে অভিযোগ করায় অনেকে চেয়ারম্যানের উপর প্রতিশোধমূলক ভূমিকায় নেমেছে বলে ইউপি চেয়ারম্যানদের অভিযোগ।
এদিকে একই রকম অভিযোগ তুলে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর বরাবরে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে।