Advertisement


মহেশখালীর সড়ক জুড়ে ডাম্পট্রাক-ইজিবাইক আতঙ্ক

* নির্বিকার প্রশাসন * সড়কের বেহাল দশা * অবৈধ যানে অদক্ষ চালক * ১১ মাসে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ১৩শ


ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ।। পরিবেশবান্ধব ইজিবাইক আর ডাম্পট্রাক এখন মহেশখালীবাসীর জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। আনাড়ি চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে এ জনপদে। যানজটও বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। এ অবস্থায় ইজিবাইক ও ডাম্পার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। পক্ষান্তরে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ভাড়া সাধারণের সাধ্যের মধ্যে থাকায় এর উপযোগিতাও অস্বীকার করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি মহেশখালীর মাতারবাড়ি-চালিয়াতলী সংযোগ সড়কে একটি মালবাহি টমটম গাড়ি উলটে সোহেল (২৬) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বেলা ৩ টার দিকে উপজেলার মাতারবাড়ি -চালিয়াতলী সংযোগ সড়ক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সোহেল ধলঘাটা ইউনিয়নের খাতুনপাড়া গ্রামের মরহুম মোকতার আহমদের ছেলে। সূত্র জানায়,  উলটে যাওয়া ইজিবাইকে তিন যাত্রী আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোহেলকে মৃত ঘোষণা করেন এবং বাকীদের প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

এদিকে গত ২০২১ সালের ১৭ই নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে নোনাছড়ি-কালারমারছড়া সংলগ্ন সড়কের কালারপুল ব্রিজে দ্রুতবেগে আসা টমটমের সাথে সাজ্জাদের ধাক্কা লেগে স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষার্থী শিশু সাজ্জাদুল ইসলামের মৃত্যু হয়। এর ২০ দিন পর আবারো নোনাছড়ি এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় একশিশু আহত হয়। এ নিয়ে মাদ্রাসা কতৃপক্ষের একই সড়কে মানববন্ধনে দাড়ায় পরে উপজেলা ও থানা প্রশাসনের সাথে বৈঠকে বসে ইজিবাইক বন্ধে পদক্ষেপ নেয় সংশ্লিষ্টরা। সময় গড়ালো পদক্ষেপ অকার্যকর রয়ে গেলো।

অন্যদিকে চলতি ২০২২ সালের  ১৪ জুলাই মঙ্গলবার মহেশখালীর পানিরছড়া ও  বড় মহেশখালীতে পরপর ডাম্পার চাপায় ২ শিশু নিহতের পর রাত ১০টার পর ডাম্পার চলাচলের সিদ্ধান্ত বেঁধে দেয় উপজেলা প্রশাসন, কিন্তু সিদ্ধান্তের কয়েকদিন না যেতেই ফের নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে বেপরোয়া হয়ে উঠে মরণঘাতী যান ডাম্পার।  এছাড়া গেলো ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর মহেশখালীর চালিয়াতলী স্কুল মাঠে খেলার সময় সুমাইয়া জান্নাত দিয়া নামে এক শিশু শিক্ষার্থীকে ঘাতক ডাম্পার চালক মোহাম্মদ মামুন ডাম্পার দিয়ে সুমাইয়াকে প্রথমে ধাক্কা পরে পেছনে ছাপা দিয়ে পিষে মেরে ফেলে৷

জানা যায়, মহেশখালী উপজেলার বেশির ভাগ ইজিবাইক চলাচলের জন্য বৈধ কোনো অনুমতিপত্র নেই। নেই চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সও। এমনকি চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, ইজিবাইক চালকদের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ব্যস্ততম সড়কে খেয়াল-খুশি মতো ইজিবাইক দাঁড় করানো, সড়কের ডান পাশ ঘেঁষে চলা, ওভারটেকিং, নির্দিষ্ট  কোনো স্টপেজ না থাকা, টার্ন নিতে গিয়ে জটলা পাকানোর কারণে ইজিবাইক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

স্থানীয় ইয়াছিন কাজেম বলেন, মহেশখালী প্রবেশপথ বদরখালী থেকে ঘোরকঘাটা পর্যন্ত প্রধান সড়কের সাথে যেসকল স্কুল, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে কোনটিরই সামনে গাড়ি গতিরোধক বা স্পিডব্রেকার নেই। এজন্য স্কুল মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াত নিয়ে অবিভাবকেরা খুবই শঙ্কিত। তাই অচিরেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গাড়ি গতিরোধকের ব্যবস্থা করা হয় সে দাবি করছি। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন চাইলে অবৈধ যান বন্ধ করা কোনো ব্যাপার না।

তথ্য মতে গত ১১ মাসে মহেশখালীর জনপদে সড়ক দূর্ঘটনার আহত হয়েছে ১৩শ জনেরও বেশি মানুষ। এ জনপদে দুর্ঘটনায় আহতরা মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। একই ভাবে পাশের চকরিয়া হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় আরও বহুজন। অতিদরিদ্ররা গ্রামের চিকিৎসকদের সেবা নিয়েই ঝুঁকি সেরে নেন।

মহেশখালী নাগরিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের নেতারা জানান, ঝুঁকি নিয়ে মাতারবাড়ি-চালিয়াতলী সড়কে যান চলাচলে প্রায়শই ঘটে প্রাণহানি। সড়ক সংস্কারের পাশাপাশি বন্ধ করতে হবে অবৈধ যান ইজিবাইক। এ ছাড়াও সড়কে সংকেত স্থাপন ও ফুটওয়ে নির্মান, চালকদের লাইসেন্স যাছাই, সড়কে অবৈধ টাকা উত্তোলন বন্ধ, সড়কের উপর মালামাল উঠানামা বন্ধসহ নানা দাবির কথা বলেন।

এ বিষয়ে উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কালারমার ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ মহেশখালীর সব খবরকে বলেন, অদক্ষ যান চালকদের কারণে প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ঘটছে। খুব জরুরিভাবে অবৈধ যান বন্ধ করা উচিৎ। এজন্য সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দ্রুত যাবতীয় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের এ নেতা।