Advertisement


মহেশখালী-কক্সবাজার পারাপারে বাড়ছে সুবিধা, কমবে দুর্ভোগ


এ.কে রিফাত।।  ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আরও একটি জেটি পাচ্ছে  দ্বীপবাসী। মহেশখালী জেটিঘাটে বেড়েছে যাত্রীসেবার মান, মজুদ করা হচ্ছে পর্যাপ্ত সংখ্যক লাইফ জ্যাকেট, হুইল চেয়ারসহ যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের সামগ্রী সমুহ। তাছাড়াও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে যাত্রীছাউনি। গত কয়েক দিন আগ থেকে এ সব বাস্তবায়নের কাজ শুরু। যার ফলে পূর্বের যতোসব হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে দ্বীপের সাড়ে চার লাখ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- বহুবছর আগে থেকে মহেশখালী জেটিঘাটে প্রতিনিয়ত হরেক রকমের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে মহেশখালী থেকে কক্সবাজার আসা যাওয়া করা সাধারন যাত্রীদের। বর্ষা মৌসুমে বাঁকখালী নদীতে প্রাণ দিতে হয়েছে অনেককে। তাছাড়াও স্পিটবোটে উঠা নামা করতে গিয়ে নদীতে পড়ে আহতের ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। অন্যদিকে ভাটার সময় খালে পানি না থাকায় মুল জেটি থেকে অনেকদুর পর্যন্ত কাদামাটি অতিক্রম করে হেটে যাওয়া আসা করতে হত যাত্রীদের।

এ সব ঘটনার প্রেক্ষিতে মহেশখালী কুতুবদিয়ার সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, উপজেলা প্রশাসন ও মহেশখালীর পৌর মেয়র মকছুদ মিয়ার সার্বিক প্রচেষ্টায় অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় যাত্রী হয়রানী কমেছে তুলনামুলকভাবে।

তারই ধারাবাহিকতায় বিগত কয়েকবছরে বেশ কয়েকবার মুল নদী থেকে জেটিঘাট পর্যন্ত যে খালটি রয়েছে সেটি ড্রেজিং এর মাধ্যমে খনন করা হয়। যার ফলে ভাটার সময়ও পর্যাপ্ত পরিমান পানি থাকে ওই খালে। এতে করে পূর্বের ন্যায় সাধারন যাত্রীদের ভাটার সময় আর কষ্ট করে পায়ে হেঁটে কাঁদামাটি অতিক্রম করে বোটে উঠা-নামা করতে হয়না।

যাত্রী সুরক্ষার জন্য বর্ষা মৌসুমের ব্যবহারের প্রয়োজনে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানের প্রচেষ্টায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করা হয়, নদীতে বসানো হয় বয়া। তাছাড়ে বোটে ব্যবহারের জন্য স্টিকার ও সিগন্যাল লাইটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। সেই সাথে সাধারন রোগীদের সুবিধার্থে দেওয়া হয়েছিলো বেশ কয়েকটি হুইল চেয়ারও।

তাছাড়া মেয়র মকছুদ মিয়ার প্রচেষ্টায় জেটি কেন্দ্রিক বিভিন্ন উন্নয়ন কাজও হচ্ছে ধারাবাহিক ভাবে। এক সময় চলাচল অযোগ্য জরাজীর্ণ, ছোটখাট অসংখ্য  গর্তে ভরা জেটির মুল হাইওয়েটি ছিলো ব্যাবহার অনুপযোগী। এখানে সাধারন যাত্রী ছাড়াও রোগীদের আসা যাওয়াতে বেশ কষ্ট হয়ে যেতো। এমন জরাজীর্ণ হাইওয়েটি পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে নতুন করে টেকসই উন্নয়ন কাজ করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জান যায়, ২০১২ সালে জ্বলানী তেলের দাম ছিলো প্রতি লিটার ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।  পরবর্তীতে তেলের দাম ৫ দফা বৃদ্ধি পাওয়ার পরে বর্তমানে ১৪০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। সেই সময় থেকে স্পীড বোট, হেলপার, ড্রাইভার ও বোট মালিকদের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধি করার জোরালো দাবী করে আসলেও মেয়র মকছুদ তাদেরকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দমিয়ে রেখে আসছেন।

মহেশখালীর গনমানুষের স্বার্থে ১০ বছর ধরে ৭৫ টাকা ধরে রাখা হয় তার প্রচেষ্টায়। এ অবস্থায় অনেক বোট মালিক ভাড়া বৃদ্ধির দাবি আদায় করতে না পেরে বোট বিক্রি করে দিয়ে এ খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করে দেন।

তাছাড়াও বিগত সময় মহেশখালী পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে মুল জেটির শেষপ্রান্তের সাথে সম্প্রসারিত ভাবে আরও একটি কাঠের জেটি নির্মান করে দেওয়া হয়েছিলো। দীর্ঘদিন এ কাঠের জেটি থাকলেও বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে তা বারবার ভেঙ্গে যাওয়াতে ওই জেটিটা পুর্বের তুলনায় এক চতুর্থাংশ কমিয়ে এনে শুধুমাত্র যাত্রীরা যাতে নির্বিগ্নে বোটে উঠা নামা করতে পারে তার জন্য কাঠের তৈরী একটি টেকসই সিঁড়ি করে দেওয়া হয়, যা এখনও বিদ্যমান।

তাছাড়া রাত্রীকালীন সময়ে যে কোন মুহুর্তে রোগীদের জন্য বোট রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বহু আগে থেকে।

এদিকে সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের একান্ত প্রচেষ্টায় সাধারন রোগীদের জন্য আইওএম থেকে একটি অত্যাধুনিক ওয়াটার এম্ব্যুল্যান্সের ব্যাবস্থাও করে দেওয়া হয়৷

এক সময় যাত্রীদের বোটে উঠার বিষয়ে কোনো শৃঙ্খলা না থাকলেও বছরখানেক আগ থেকে যাত্রীকে লাইনে দাঁড়িয়ে সিরিয়ালের মাধ্যমে বোটে উঠার ব্যবস্থা করা হয়।

জেটি এলাকার সৌন্দর্যবর্ধনের ইতোমধ্যে  'আই লাভ মহেশখালী' মহেশখালী পয়েন্ট স্থাপন করা হয়। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি অত্যাধুনিক পান ভাষ্কর্য স্থাপন, গণসৌচাগার, যাত্রীদের জন্য রেস্টরুমসহ বিভিন্ন সুবিধা সম্বলিত প্রকল্প হাতে নিয়েছেন যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

একই ভাবে সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এর প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিল থেকে মহেশখালী পৌর এলাকায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি নতুন জেটিঘাট উপহার স্বরুপ ঘোষণা করেন।
এই জেটিটি নির্মানের ক্ষেত্রে বন বিভাগ বাঁধা দিলে জেলা আইন- শৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় বন বিভাগের এই সিদ্ধান্তকে সম্পুর্ন অযাচিত বলে এই বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতেই কড়া সমালোচনা করেন মেয়র মকছুদ মিয়া। যার ফলে বন-বিভাগ তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। তারই ফলস্রুতিতে নতুন এই জেটিটি নির্মানে এর কোন বাঁধা নেই। বর্তমানে ওই জেটিটির কাজ শুরু হয়ে দ্রুত সময়ে তা শেষ হবে বলে জানা যায়।

এরইমধ্যে যাত্রীদের বর্ষা মৌসুমে বোটের জন্য সাময়িক অপেক্ষা করার সময় বৃষ্টিতে ভিজতে না হয় সেজন্য বর্তমান জেটির শেষ প্রান্তে যাত্রীছাউনি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে পৌরসভার উদ্যোগে। দ্রুত সময়ে এ কাজ সম্পন্ন হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।