Advertisement


মহেশখালীতে প্যারাবন নিধনকালে প্রশাসনের যৌথ অভিযান, ৩ লাখ টাকা জরিমানা

প্যারাবনের কয়েক লাখ লাখ বাইন গাছ কেটে হাজার হাজার একর বনভূমি দখলে নিলো ভূমিদস্যুরা


রকিয়ত উল্লাহ।। কক্সবাজারের মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের পশ্চিমে ঘটিভাঙা এলাকায় হাজার হাজার একর প্যারাবনের বাইন গাছ কেটে ধ্বংস করে লবণ মাঠ ও চিংড়ি ঘের তৈরি করে আসছে কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। গত কয়েক মাসে ওই এলাকায় প্যারাবনের প্রায় ১০০০ একর জায়গা দখল করে আওয়ামী লীগ বিএনপি একাট্টা হয়ে চিংড়ি ঘেরের জন্য খননযন্ত্র দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা আসছিল। সেখানে কাটা হয়েছে প্যারাবনের অন্তত কয়েক লাখ বাইন গাছ। অবশেষে পরিবেশবাদী সংগঠন ও মহেশখালী সচেতন মহলের প্রতিবাদের মুখে বিশাল প্যারাবন কেটে নদীর চর দখল করে লবণ মাঠ ও চিংড়ী ঘের তৈরির সময় যৌথ অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় সরকারি জমির দখলদাররা পালিয়ে গেলেও খনন যন্ত্র দিয়ে বাঁধ নির্মাণের সময় দুই ব্যক্তিকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়, বিকল করে দেওয়া হয় ওই খনন যন্ত্রও। ২৩ মার্চ (শনিবার) সকালে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীকি মারমার নেতৃত্বে এসিল্যান্ড, পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসারসহ বন বিভাগকে নিয়ে টানা ৩ ঘন্টাব্যাপি এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

জানা গেছে- দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন উপজেলার শীর্ষ নেতার ইন্ধনে কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা চ্যানেলে কয়েকটি গ্রুপ সিন্ডিকেট করে শ্রমিক দিয়ে প্যারাবনের লাখ লাখ বাইন গাছ কেটে খননযন্ত্র স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে চিংড়ী ঘের নির্মাণের জন্য বাঁধ তৈরি করে আসছিল। ইতোমধ্যে কয়েকটি ঘের প্রস্তুতও হয়ে যায়। এনিয়ে কয়েকবার নামেমাত্র অভিযান পরিচালনা করা হলেও ফের এসব সরকারি জমি দখলে নেন ভূমিদস্যুরা। গত কয়েকদিন ধরে ভূমিদস্যুরা টানা প্যারাবন নিধন করে চিংড়ী ঘের তৈরি করে আসছিলো।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে- সরকারি জমি দখল করে ধারাবাহিক ভাবে প্যারাবন নিধন ও অবৈধ ভাবে ঘের নির্মাণের পটভূমিতে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মীকি মারমার নেতৃত্বে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তাজবীর হোসেন, কোস্টগার্ড, থানা পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় অভিযান চালানো হয়। প্রশাসনের এ অভিযানিক দল আসার খবর পেয়ে প্যারাবন নিধনকারীরা পালিয়ে গেলেও বন নিধনযজ্ঞের বেশ কিছু আলামত ও তথ্য সংগ্রহ করেন প্রশাসন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানিয়েছেন- অভিযান পরিচালনাকালে অবৈধভাবে এক্সকেভেটর দিয়ে ভূগর্ভের মাটি উত্তোলন ও প্যারাবন ধ্বংস করে নতুন করে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করার সময় ঘটনাস্থলে থাকা দুই ব্যক্তিকে- বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০এ ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা করা দুই ব্যক্তি হলেন- বড় মহেশখালীর ফকিরাঘোনা এলাকার মৃত আব্দুল গনির পুত্র আবুল হোসেন (৫০) ও ময়মনসিংহের জনৈক আলাল উদ্দিনের পুত্র এমদাদুল হক (৪০)।

জানা গেছে- ওই এলাকায় একাধিক অবৈধ ঘের গড়ে উঠলেও অভিযানের সময় অবৈধভাবে গড়া উঠা কয়েকটি চিংড়ি ঘেরে অভিযান চালালেও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে পারেনি বা কোনো ঘেরের বাঁধ কেটে দেয়নি অভিযানিক দল। অভিযান সূত্র জানিয়েছে- মূলতঃ প্যারাবনের ভেতর মাটি খনন করে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছিলো।

অভিযান প্রসঙ্গে মহেশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ তাজবীর হোসেন বলেন- একটি অসাধু চক্র মহেশখালীর ঘটিভাঙ্গার প্যারাবন নিধন করে যাচ্ছে, প্রশাসন বার বার অভিযান চালালেও তারা কোনো মতে থামছে না, এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ভোর থেকে এ যৌথ অভিযান চালানো হয়। এ সময় কয়েকজনকে ধাওয়া করা হলেও বনের ভেতর ঢুকে পড়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। এ প্যারাবন মহেশখালীবাসীকে দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে, চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে প্যারাবন নিধন করে যাচ্ছে, তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ প্যারাবন রক্ষার সামাজিক আন্দোলনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে এ নিয়ে জনগণ ও গণমাধ্যমর্কমীদের সহযোগীতা কামনা করেন। প্যারাবন নিধনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি যে কোনো মূল্যে এই প্যারাবন নিধনকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে বলে জানান। একই সাথে তিনি প্যারাবন নিধনকারীদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তাদেরকে এমন কাজ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মীকি মারমা জানান- ঘটিভাঙ্গায় সরকারি ভূমি দখল করে প্যারাবন কাটা ও মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় একটি মামলায় দুই ব্যক্তিকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ  অভিযান অব্যাহত থাকবে।