জানা যায়- গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালে শুরু হওয়া হালকা বৃষ্টিপাত দুপুর নাগাদ কিছুটা বাড়লেও বাতাসের গতি ছিল স্বাভাবিক। এরইমধ্যে কুতুবজোম, সাইরার ডেইল, ধলঘাটা ও ছোট মহেশখালীর কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। কিন্তু উপকূল বাদে অন্যান্য ইউনিয়ন ছিল প্রায় স্বাভাবিক ও ঝুঁকিমুক্ত। অথচ সেই দিন সকাল থেকে হোয়ানক, কালারমারছড়া ও ধলঘাটা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। এই অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ে সামাজিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গ্রামীণ জনপদ। বিদ্যুৎ না থাকায় থেমে যায় স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে পরদিন (শুক্রবার) বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করার প্রতিশ্রুতি এলেও বাস্তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং দিন গড়িয়েছে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার- তিনটি দিনের একটিতেও বিদ্যুৎ আসেনি হোয়ানক, কালারমারছড়া ও ধলঘাটার বহু গ্রামে। এতে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই অকারণে দিন গোনা দুর্ভোগ প্রমাণ করে, প্রকৃত দুর্যোগ আসলে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে। তাঁদের মতে, এটি কোনো প্রাকৃতিক নয়, একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং অবহেলার ফসল।
কালারমার ছড়ার ফকিরা ঘোনা এলাকার আনোয়ারা বেগম বলেন, 'আমার ছেলে শহরে থাকে, ফোন বন্ধ থাকায় তার খোঁজ জানি না। ফ্রিজে থাকা মাছ, মাংস সব নষ্ট হয়ে গেছে। এটা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বিদ্যুৎ অফিসের গাফিলতির দুর্যোগ। একই গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, '৬০০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দ্বীপে মানুষ বিদ্যুৎহীন থাকবে, এটা কল্পনাও করা যায় না। অফিসে ফোন করলে বন্ধ, না হয় রিসিভ করেন না। ভোগান্তির শেষ নেই।
এছাড়াও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পাশাপাশি পুরো উপজেলা জুড়ে নেটওয়ার্ক বিভ্রাটের ভোগান্তিও কম ছিল না। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার- টানা ৪৮ ঘণ্টা মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল সম্পূর্ণ অচল। ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং- সব কার্যক্রমে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। বিশেষ করে যেসব পরিবার প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, তাঁরা পড়েন চরম সংকটে। ব্যবসায়ীরা বলেন, পণ্য অর্ডার, ব্যাংকিং ও বিকাশ লেনদেন বন্ধ থাকায় তাদের কয়েকদিনের ক্ষতি কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
উপজেলার বহু ভুক্তভোগী পরিবার জানান, ফ্রিজে রাখা হাজার হাজার টাকার খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হয়ে গেছে। শিশু ও বৃদ্ধদের ওষুধ সংরক্ষণ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন অনেকে। মসজিদ-মাদ্রাসায় মাইকের ব্যাটারি চার্জ না থাকায় আজান ও ঘোষণা বন্ধ থাকে অনেক জায়গায়। এই বিদ্যুৎ সংকটের কারণে রাতের অন্ধকারে চুরি, ডাকাতিরও আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। অনেকেই মনে করছেন, এই গাফিলতি বরদাস্ত করার নয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রযুক্তিগত সংস্কার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে।
এ প্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহেশখালী কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, 'বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে কিছু এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছি। আশা করি খুব দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি সচল হবে। তবে স্থানীয়দের দাবি, প্রকৃতপক্ষে খুঁটি ভাঙার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। বরং অভিযোগ রয়েছে, রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সামান্য বৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো উপজেলা।
এদিকে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেদায়েত উল্যাহ বলেন, 'অতিরিক্ত বৃষ্টি কিংবা বড় দুর্যোগ না থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়টি দুঃখজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎকে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল রাখতেও সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দুর্যোগ প্রস্তুতির নামে জনদুর্ভোগ তৈরি করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।