Advertisement


মহেশখালীতে শাহরিয়ার ইয়ামিনের উদ্যোগে পানির সংকট অবসানের পথে: ঘরেই আসবে বিশুদ্ধ পানি


বার্তা পরিবেশক।।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে এবং তরুণ নেতা শাহরিয়ার মোহাম্মদ ইয়ামিনের উদ্যোগে মহেশখালী উপজেলায় একটি বৃহৎ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করে ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল কর্মকর্তারা ৫ নম্বর ওয়ার্ড ঘোনাপাড়া ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড চরপাড়ার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।

জানা গেছে- প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঘোনাপাড়া ও চরপাড়ার প্রায় ৫০০ পরিবারের বাসিন্দারা প্রথমবারের মতো সরাসরি পানি সরবরাহের আওতায় আসবেন। এই উদ্যোগের ফলে এসব এলাকার মানুষ—বিশেষ করে নারী ও শিশুরা—আর কষ্ট করে দূর-দূরান্ত থেকে কলসি কাঁধে পানি আনতে বাধ্য হবেন না। এতে যেমন দৈনন্দিন জীবনের দুর্ভোগ কমবে, তেমনি সময় ও শ্রম বাঁচবে, যা তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সামগ্রিক জীবনমানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

স্থানীয়দের ভাষায়- বছরের পর বছর ধরে তারা পাহাড়ি বা উঁচু এলাকার ঝিরি কিংবা সরকারি-বেসরকারি কিছু অকার্যকর টিউবওয়েলের ওপর নির্ভর করতেন। শুকনো মৌসুমে পানি একেবারেই মেলে না, বর্ষায় আবার দূষিত পানি পান করে নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হন অনেকেই। অনেক মা-বোনকে দিনে একাধিকবার ২-৩ কিলোমিটার পথ হেঁটে পানি আনতে হয়, যা শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি সময়ের বড় অপচয়।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান- সিটি কর্পোরেশনের আদলে এই দুই ওয়ার্ডে পানির লাইনের মাধ্যমে সরাসরি পানি সরবরাহ করা হবে। প্রাথমিকভাবে একটি আধুনিক ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের ঘরে পানি পৌঁছে দেওয়া হবে। প্ল্যান্টটি এমনভাবে ডিজাইন করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে আরও পরিবার এতে সংযুক্ত হতে পারে।

এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব, শাহরিয়ার মোহাম্মদ ইয়ামিন জানান- আমাদের লক্ষ্য শুধু পানি সরবরাহ নয়, বরং মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন। ঘোনাপাড়া ও চরপাড়ার শত শত পরিবার বছরের পর বছর ধরে বিশুদ্ধ পানির সংকটে ছিল। বিশেষ করে মা-বোনদের প্রতিদিন ২-৩ কিলোমিটার হেঁটে পানি আনার কষ্ট আমাদের চোখে পড়ে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা তাদের সেই দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান দিতে চাই। টেকসই ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই প্ল্যান্ট শুধু পানি দেবে না, এটি স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ঈদের পরপরই কাজ শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। 

পরিদর্শনের সময় উপস্থিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জানান- এই প্রকল্প শুধু একটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, এটি একটি সামাজিক বিপ্লবের সূচনা। বিশেষ করে নারীদের জীবনযাত্রায় বিশাল পরিবর্তন আনবে এই পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। একজন নারীকে প্রতিদিন শুধু পানি সংগ্রহের পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। পানির সহজ প্রাপ্যতা মানেই সময়ের সাশ্রয়, যা শিক্ষার সুযোগ, গৃহস্থালির কাজ এবং পারিবারিক যত্নে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে ঈদের পরপরই। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ও প্রকৌশলগত সমীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে এবং টেকনিক্যাল নকশা প্রস্তুতের কাজ চলছে।

মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হতে যাচ্ছে। এটি শুধু পানি সরবরাহ নয়, বরং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী ক্ষমতায়ন ও পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির মতো একাধিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG) অর্জনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা এই প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর, প্রশাসন এবং সরকারকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন- "আমরা স্বপ্নও দেখিনি, আমাদের ঘরে ঘরে এমনভাবে পানি আসবে। আল্লাহর রহমতে, এটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের জীবন অনেক সহজ হবে।"

সরকারের জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় মোহেশখালী যেন টেকসই উন্নয়নের নতুন দিগন্তে পা রাখতে পারে, এ প্রত্যাশায় রয়েছে পুরো অঞ্চলের মানুষ।