Advertisement


মাকে মনে পড়ে: মাকে ছাড়া একটি বছর, স্মৃতির প্রতিটি ধাপে মায়ের ছায়া


আবুল বশর পারভেজ

মা-বিহীন একটি বছর। প্রতিক্ষণেই মনে পড়ে মায়ের অসংখ্য স্মৃতি। হে মাওলা, আমার জননীকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন।

২০২৪ সালের ৩০ জুলাই, পৃথিবীর সমস্ত মায়া ত্যাগ করে আমার মা মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দেন। মা কখনো শরীরের বড় কোনো অসুস্থতা প্রকাশ করেননি- শুধু হাঁটুতে ব্যথা ছিল, চলাফেরায় সামান্য কষ্ট হতো, এটুকুই ছিল দৃশ্যমান কষ্টের চিহ্ন।

গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে হাঁটুর ব্যথা ও হৃদরোগজনিত সমস্যার কারণে মাকে মহেশখালী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই প্রথম জানা যায়, মা জরায়ু ও কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে তাঁর শারীরিক সক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। এরপর মাকে নিয়ে যাই কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের কিডনি বিভাগে মা টানা ১৭ দিন ভর্তি ছিলেন। ডায়ালাইসিসের পর কিছুটা সুস্থতা অনুভব করলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে বাসায় নিয়ে আসি। ঈদুল আজহার সময়টা কেটেছে সেই হাসপাতালে।

বাসায় ফেরার পর মা একটু হাঁটাচলা শুরু করেন। কিন্তু মাত্র দুই দিন পর থেকেই মা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তী তিন রাত তাঁর ঘুম হয়নি। তখন স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই।

এসময়ে আমার নানা বাড়ির আত্মীয়স্বজন মাকে দেখতে আসেন। মা তাঁদের সঙ্গে আবেগঘন সময় কাটান- নাতি-নাতনিদের কোলে নিয়ে আদর করেন। হঠাৎ পঞ্চম দিনে মা অচেতন হয়ে পড়লে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ি।

ডা. আজমল হুদার সহায়তায় মাকে আবারও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে, পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই টানা ২৭ দিন অচেতন অবস্থায় থেকে মা আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন। ( ইন্না-লিল্লাহে ওয়িন্নাইলাইহে রাজিউন)

সেদিন বিরামহীন বৃষ্টিতে কবর খননের সময় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে গিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে যখন মা-কে কবরে শায়িত করা হয়, আশ্চর্যজনকভাবে সেই পানিটুকুও ছিল না।

আজ এক বছর পেরিয়ে গেল। আর দেখি না মায়ের মুখে সেই স্নিগ্ধ হাসি। গভীর রাতে কেউ আর দরজা খুলে বলে না- "তুই এখনও ঘুমাসনি?" 

মা আর জিজ্ঞেস করে না- "তুই ভাত খাবি না?"মা বলতেন- "ছেলের হাতে টাকা নেই, বাড়ি করতে পারেনি, আমার চিকিৎসা কীভাবে হবে?"

মায়ের শাসন, আদর, স্নেহ, ভালোবাসা, উপদেশ- সবই আজ শুধুই স্মৃতি।

রাতে খাবার শেষে মা কখনো ফল, কখনো নাস্তা হাতে নিয়ে এসে বলতেন- "খা বাবা"। আমি বলতাম, "এগুলো তো আমি আনি নাই, কোথা থেকে আসল?" মা বলতেন, "অমুক চাচি দিয়েছেন, তোর জন্য রেখেছি।" যদি খেতাম না, আচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিতেন।

আজ সেই মায়ের শূন্যতা প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করছি। মা, তুমি কেমন আছো অন্ধকার কবরে? আর কি কখনও বলবে না- "এত রাত জেগে কী করিস?" জ্বর হলে মা কোরআন পড়ে সমস্ত শরীরে ফুঁ দিয়ে দিতেন।

মা কখনো কারও ওপর রাগ করলে তার চেহারার হাসি আর চাহনিতেই বুঝে যেতাম। আর সেই অভিমান ভাঙাতে মাকে জড়িয়ে ধরলেই সব ঠিক হয়ে যেত।

এক সময় বাড়ি ছিল না, কিন্তু মা ছিলেন। আজ বাড়ি আছে, কিন্তু মা নেই। বাবা এখন বোনদের ফোনে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন, বুকটা হু হু করে কেঁদে উঠে।

হে মহান প্রভু, আমার মাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমার বাবাকে সুস্থতা ও দীর্ঘ হায়াত দান করুন। আমিন।