নিজস্ব প্রতিবেদক।। মহেশখালী উপজেলার কুখ্যাত সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু ও চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত ফরিদুল আলম ওরফে দালাল ফরিদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে দীর্ঘদিন বেপরোয়া ক্ষমতা প্রদর্শনকারী ফরিদুল আলম কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ (এলও) অফিসে দালালির মাধ্যমে একটি শক্তিশালী প্রভাব–বৃত্ত তৈরি করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে হামলার জন্য অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগসহ ছাত্রদের উপর হামলার মামলাসহ অন্তত ১০টিরও বেশি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা মৌজার বুধার ঘোনা এলাকায় প্রায় ৫৮ একর লবণ মাঠ দখলে নিতে তিনি আওয়ামী লীগের একাংশের প্রভাবশালী নেতাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল চেয়ারম্যানের রেফারেন্সে তিনি সেখানে অনিয়মিতভাবে একটি আনসার ক্যাম্প স্থাপন করান। পরে সেই ক্যাম্পকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন লবণ মাঠটি জোরপূর্বক দখলে রাখেন।
জমির মালিকরা হাইকোর্টে রিট করলে আদালত আনসার ক্যাম্প প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ার পরও ফরিদ নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে আবারও জোরদখল কায়েম করেন বলে স্থানীয়রা জানান।
অভিযোগ রয়েছে, তার সশস্ত্র বাহিনী স্থানীয় লোকজনের ওপর গুলি, হামলা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনকে নিয়মিত ঘটনা হিসেবে চালিয়ে আসছিল। দীর্ঘদিন প্রাণনাশের আশঙ্কায় ভুক্তভোগীরা মামলা করতেও সাহস পায়নি।
জানা গেছে, গত বর্ষায় আইল্যা ঘোনা এলাকায় একটি চিংড়ি ঘেরে হালমা করতে গেলে তার অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় থানা পুলিশ জিআর ১৩/২৫ নম্বর মামলা রুজু করে। এর আগেও চাঁদাবাজি, জমি দখল, সংঘবদ্ধ হামলা এবং অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন এলও অফিসের দালাল হিসেবে কাজ করে তিনি অধিগ্রহণ–সংক্রান্ত জটিলতার সুযোগ নিয়ে শতাধিক সাধারণ মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। টাকা উত্তোলনের নামে প্রতারণা, ভুয়া মামলা দিয়ে অর্থ আটকে রাখা, কমিশন ভিত্তিক দালালি এবং একাধিক চেক প্রতারণার মামলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রায় দুই দশক ধরে তার এসব অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ফরিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একটি বড় ধরনের অবৈধ অস্ত্র ভাণ্ডার। বিভিন্ন সময় তার ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসী বাহিনী বিভিন্ন ঘের ও লবণ মাঠ এলাকায় এ সব অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা গেছে। অবশেষে সে সন্ত্রাসী ফরিদ গ্রেফতার হয়েছে, এবার তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। তারা অবিলম্বে তার অস্ত্র ভাণ্ডারে পুলিশি অভিযানের দাবি জানিয়েছেন।

