বিএনপি নেতা মাসুমসহ একাধিক ঠিকাদার ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের অভিযোগ
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাতারবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মাসুমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম এস ইব্রাহিম এন্টারপ্রাইজ সাব-ঠিকাদারের মাধ্যমে কোল পাওয়ার প্রকল্পের অন্তর্গত পস্কো কোম্পানির কাছ থেকে অবকাঠামো ভেঙে ইট সরানোর কাজ পায়। প্রতিদিন ডাম্পারযোগে ইট পরিবহনের আড়ালে নিয়মিতভাবে ক্যাবল তার, তামা ও লোহাসহ মূল্যবান মালামাল পাচার করা হচ্ছিল।
ইটবাহী গাড়িতে ক্যাবল পাচারের ভিডিও ভাইরাল, রাতেই আটক গাড়ি:
গতকাল ইটের সঙ্গে ক্যাবল তার পাচারের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসতেই রাতেই কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা বাহিনী কয়েকটি ইটবাহী গাড়ি আটক করে।
ঘটনার পর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মালামাল বের করার জন্য ইস্যু করা গেইট পাস সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পস্কোর কর্মকর্তা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ:
অভিযোগ উঠেছে, পস্কো কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সুমন বাপ্পি, সাগর ও কিউসি অফিসার নাহিদ হাসান একত্রে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। তারা বিএনপি নেতা হোসাইন মাসুমের সঙ্গে যোগসাজশে টেন্ডারের মালামালের আড়ালে নিয়মিতভাবে ক্যাবল, তামা ও লোহার গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ পাচার করে আসছিলেন।
ঘুষ প্রস্তাব ও নিরাপত্তা রক্ষীদের প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ:
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোল পাওয়ার প্রকল্পের এক সিকিউরিটি ইনচার্জ জানান,“পস্কোর কন্ট্রাক্টর এম এস ইব্রাহিমের মালিক, পস্কোর কর্মকর্তা হাসান ও সুমন মিলে আমাদের সিকিউরিটিকে ফোন করে ক্যাবল বের করতে দিলে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা রাজি না হওয়ায় আমাদের মারার হুমকি দেওয়া হয়।”
তিনি আরও জানান, পরবর্তীতে ওই চোরাই চক্র নিরাপত্তা কর্মীদের বিরুদ্ধে কোল পাওয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা অভিযোগ দেয়। তবে কোল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে উল্টো এম এস ইব্রাহিমের মালিক, হাসান ও সুমনের সংশ্লিষ্টতা পায়।
কাজ বন্ধ ও ব্ল্যাকলিস্টের সুপারিশ, তবুও চলছে কার্যক্রম:
সিকিউরিটি ইনচার্জ আরও জানান,“কোল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ পস্কোর ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বৈঠক করে এম এস ইব্রাহিম এন্টারপ্রাইজের কাজ বন্ধ এবং প্রতিষ্ঠানটিকে ব্ল্যাকলিস্ট করার সুপারিশ করে। আগের চুক্তিও বাতিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ওই প্রতিষ্ঠান এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।”
এই পুরো ঘটনার একটি কল রেকর্ড ইতোমধ্যে ফাঁস হয়েছে, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের সিকিউরিটি অফিসারের বক্তব্য:
এ বিষয়ে মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সিকিউরিটি অফিসার মোহাম্মদ হাসান জানান,“যেসব মালামাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেগুলো বিএনপি নেতা মাসুম নিয়ে যাচ্ছিলেন। এর সঙ্গে অবৈধভাবে ক্যাবল তার, তামা ও লোহা পাচার হচ্ছে কি না—এই বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
মাতারবাড়ির বিএনপি নেতা মাসুমের বক্তব্য:
এ বিষয়ে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপি সদস্য সচিব হোছাইন মাসুমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- "আমি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে গাড়িতে করে ইট বের করি, কংক্রিটও বের করি। যদি এরকম কোন তথ্য থাকে এবং রিপোর্ট করতে হয়, তবে আমার অনুরোধ থাকবে যে তথ্য দিয়েছে বা সূত্র উল্লেখ করে লিখেন। তবে এ কাজের সাথে আমি কোনোভাবেই জড়িত নই।" তিনি প্রতিবেদকের কলটি রেকর্ড করছেন উল্লেখ করে অন্য সাংবাদিকও তাকে ফোন করেছিলেন এবং প্রয়োজনে এ নিয়ে মামলা কবেন বলেও সাংবাদিকের সাথে ফোনালাপে জানান। অপর এক সাংবাদিককে দেওয়া বক্তব্য তিনি তার গেটপাস বন্ধ করা হয়নি বলে জানান।
জনদাবি:
এলাকাবাসীর দাবি, এই ঘটনায় জড়িত ঠিকাদার, পস্কোর নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। চুরি হওয়া সরকারি সম্পদ উদ্ধারের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও প্রকল্পের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
